ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হলো

উৎসব ॥ ৩৫ কোটি বইয়ের

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০২০

উৎসব ॥ ৩৫ কোটি বইয়ের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছরের প্রথম দিন খালি হাতে স্কুলে যাওয়া আর উৎসবে শামিল হয়ে এক সেট ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই হাতে নিয়ে দেশের কোটি কোটি শিশুর বাড়ি ফেরা। এক বছর বা দু’বছর নয়। এটিই এখন যেন নিয়ম, যার হবে না কোন পরিবর্তন। টানা ১১ বছর ধরে নতুন বছরের প্রথম দিন দেশের প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থী হাতে পাচ্ছে নতুন পাঠ্যবই। এবারও বছরের প্রথম দিনই দেশের চার কোটি ২৭ লাখ স্কুল শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে ইংরেজী নববর্ষ শুরু করল দেশ। বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্কুলে স্কুলে চলেছে উৎসব। বর্ণিল সাজে সেজেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। যথারীতি এবারও বই উৎসবের কেন্দ্রীয় আয়োজন ছিল দুটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাজধানীর অদূরে সাভারের অধর চন্দ্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসবের আয়োজনে ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুই অনুষ্ঠানেই শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা এবং রঙিন বেলুন উড়িয়ে দেয়া হয় নীল আকাশে। শিশুবান্ধব এ অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, তারকা ক্রিকেটারসহ উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, শিরীন আক্তার, বিশ^সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৫৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য আনন্দপূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ২০৪১ সালে আমাদের এসব শিশুরা সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। আমাদের দেশের এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে নতুন নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করে আদর্শ মানুষ হতে হবে। জাকির হোসেন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশের কারিগর হবে শিশুরা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে দক্ষ মানবসম্পদের কোন বিকল্প নেই। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আর শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। উন্নত বাংলাদেশের সুফল ভোগ করবে এই শিক্ষার্থীরা। শিশুদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে এই তোমরাই জাতি ও দেশ গঠনে নেতৃত্ব দেবে। আমি তোমাদের অনুরোধ করব, ভালভাবে লেখাপড়া করে ভাল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারি। জাতির পিতার উন্নত বাংলাদেশের কারিগর হবে তোমরা। এখানে যারা শিক্ষকরা আছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে সবাই মিলে তার রক্তের ঋণ শোধ করব। মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান, সেখানে পৌঁছতে হলে শিশুদের অন্তরে বাংলাদেশকে গেঁথে দিতে হবে। এটা করতে কোন প্রকল্প দরকার হবে না। আমাদের শিক্ষকরা পারবেন। তারা আন্তরিক হলে সব বদলে যাবে। আমার আস্থা রয়েছে। আমরা বদলে গেলে দেশ বদলে যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে তোমরা যারা নতুন বই নিচ্ছো, তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে এই শিশুরাই। খেলার মাঠের এই অনুষ্ঠানে নতুন বই পেয়ে দারুণ উল্লসিত ছিল শিক্ষার্থীরা। ড্রাম ও বাঁশির বাদন আর শিশুদের কলকাকলিতে মুখর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ। শিশুদের বইয়ের আকর্ষণের বাইরেও আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন প্রিয় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। শিশুদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিয়ে উৎসাহ জোগান সাকিব। শিশুদের হাতে বই তুলে দেয়ার প্রস্তুতির সময় তিনি শিশুদের সঙ্গে গল্পও জমিয়েছেন। তাদের নানা গল্প ও আনন্দ উচ্ছ্বাসে নিজেকে শামিল করে সাকিব। বই উৎসবের এই দৃশ্যে অনেকের চোখ আটকে যায়। এদিকে জনকণ্ঠের সাভার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অধর চন্দ্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই উৎসবকে ঘিরে ছিল নানা আয়োজন। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমানো এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করতে পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনে কাজ করছে সরকার। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা, চারু ও কারু এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি প্রভৃতি বিষয়সমূহ এ বছর থেকে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আসবে। মন্ত্রী বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অহেতুক মানসিক চাপ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী কিভাবে জীবনব্যাপী শিখতে হয়। কারণ পৃথিবী যে গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে আজকে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আগামীতে সেটি হয়তবা তত গুরুত্বপূর্ণ নাও থাকতে পারে। আগামীতে হয়ত নতুন নতুন কোন বিষয় অথবা প্রযুক্তি আমাদের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিষয়ে আমাদেরকে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। একাডেমিক শিক্ষাই জীবনের জন্য চূড়ান্ত শিক্ষা নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা স্বপ্ন দেখবে। মানুষ তার স্বপ্ন থেকে বড় হতে পারে না। যে যত বড় স্বপ্ন দেখবে সে তত বড় হবে। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ থেকে দূরে থাকতে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, এ বছর ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। গত দশ বছর (২০১০ থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ) ৪৩ কোটি ১৯ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৯ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যা সারা বিশ্বে বিরল। ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বলেন, উপবৃত্তি দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমেছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বছরের শুরুতে ৩৫ কোটি বই বিতরণ সরকারের একটা বড় অর্জন। সবাইকে জিপিএ ৫-এর ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষিত হয়ে সবাই ডেস্ক জব করবে এই ধরনের প্রথাগত চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কাজে মনোযোগ দিতে হবে। অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তা তদন্তের পরে অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটি দেখা হবে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কেউ আন্দোলন করতে পারবে না। কারণ, শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোন দাবি-দাওয়ার প্রয়োজন হয় না এমনিতেই সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। জানা গেল, এবার সারাদেশে চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হচ্ছে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি বই। যার মধ্যে প্রাথমিকে ১০ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৩৭৫ কপি এবং মাধ্যমিকে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই। বই ছাপানো ও বিতরণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞটি করে থাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবি জানিয়েছে, পাঠ্যবই ছাপাতে এবার প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরসহ অন্য বই ছাপাতে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১০০ কোটি টাকা কম। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে দুই বিষয়ে ৩২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৬ জন শিক্ষার্থীকে ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর আদিবাসী শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ৯৭ হাজার ৫৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার ১০৩টি বই। মাদ্রাসা শিক্ষায় এবতেদায়ি পর্যায়ে ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ বিষয়ে দুই কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫টি বই বিতরণ করা হয়েছে। দাখিলে ২৬ লাখ ২৬ হাজার ৬২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে দেয়া হয় ৩৯ বিষয়ে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯০৫টি বই। আর কারিগরিতে দুই লাখ ৭১ হাজার ৮৯৩ শিক্ষার্থীর ৬১ বিষয়ে ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৩টি, এসএসসি ভোকেশনালে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৫০ শিক্ষার্থীর ১৯ বিষয়ে ৩৫ লাখ দুই হাজার ৭৬৫ এবং দাখিল ভোকেশনালে ১২ হাজার ২৫৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ বিষয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৫ বই বিতরণ করা হয়েছে। এবার ৭৫০ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ১১০ বিষয়ে নয় হাজার ৫০৪টি ব্রেইল বই দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই দেয়া হবে। তবে এবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও মাতৃভাষায় লেখা বই পাচ্ছে। সরকারের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে জানা গেছে, ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত কয়েকটি ক্যাটাগরির কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক নতুন ও অর্ধেক পুরনো পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হতো। এসব বইও সময় মতো শিক্ষার্থীরা পেত না। বই পেতে পেতে মার্চ/এপ্রিল পার হয়ে যেত। এতে ক্লাস শুরু হতেও অনেক দেরি হতো। প্রতিবারই অসাধু প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ত পাঠ্যবই ছাপার কাজ। সময় মতো বই না পাওয়ায় এবং উচ্চ দরে বাজার থেকে বই কিনতে না পেরে প্রতি বছর ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ত। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই মোট জন্যসংখ্যাও নেই চার কোটি। সেখানে বছরের প্রথম দিনই দেশের প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটির বেশি শিক্ষার্থীর হাতে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি বই তুলে দিচ্ছে সরকার। তথ্য বলছে, গত ১১ বছর আগে দেশে বিদ্যালয়ে আসা শিশুদের হার ছিল ৮০ শতাংশের একটু বেশি। কিন্তু ১০ বছরের মাথায় আজ প্রায় শতভাগ শিশু আসছে বিদ্যালয়ে। বিষয়টি ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশুর উপস্থিতিকে বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। শতভাগ বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের প্রথম বছর বইয়ের সংখ্যা ছিল ২০১০ সালে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ কপি, ২০১১ সালে ২৩ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ২৩৪ কপি, ২০১২ সালে ২২ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৩ কপি, ২০১৩ সালে ২৬ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ১০৬ কপি, ২০১৪ সালে ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার ৫২৬ কপি, ২০১৫ সালে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩ কপি, ২০১৬ সালে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২ কপি, ২০১৭ সালে বই ছিল ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫ কপি। ২০১৮ সালে বইয়ের সংখ্যা ছিল ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ কপি। গত বছর ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি। আর এ বছর বই হচ্ছে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি।
×