ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় সংস্কারের ‘গীতি চন্দ্রাবতী’ নাটক মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

শিল্পকলায় সংস্কারের ‘গীতি চন্দ্রাবতী’ নাটক মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘নয়নের জলে কন্যার অক্ষরও ঘুচিলো, একবার দুইবার কন্যা পত্র যে পড়িল’। শোকাতুর চন্দ্রাবতীর এমন সংলাপ। একইসঙ্গে জয়ানন্দ’র কণ্ঠে, ‘দেব পূজার ফুল তুমি, তুমি গঙ্গার পানি, আমি যদি ছুঁই কন্যা হইবা মাদকিনি’, ছড়ার ছন্দে ছন্দে নাটকের এমন সংলাপের সঙ্গে নৃত্য এবং ‘স্বপ্নের হাসি, স্বপ্নের কান্দন! নয়ান চান্দে গায়, নিজেরও অন্তরের দুঃখ পরকে বুঝান দায়’ এমন করুণ গানে দর্শক হৃদয়েও দুঃখের আবহ তৈরি করে। ফলে নাটকটি শেষ হয়ে গেলেও নাটকের রেশ রয়ে যায় দর্শকের হৃদয়জুড়ে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বুধবার সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় সংস্কার নাট্যদল প্রযোজনা নাটক ‘গীতি চন্দ্রাবতী’। নয়ান চাঁদ ঘোষের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইউসুফ হাসান অর্ক। সঙ্গে মঞ্চ ও সঙ্গীতের নির্দেশনাও দেন তিনি। নাটকে দেখা যায়, বাল্যকালে চন্দ্রাবতীর বন্ধু ও খেলার সাথী ছিল জয়ানন্দ নামের এক অনাথ বালক। কৈশোর উত্তীর্ণ হলে স্থির হয় বিয়ে করবে তারা। ঠিক হয় বিয়ের দিন। এরই মাঝে জয়ানন্দ প্রেমে পড়ে এক মুসলিম নারী আসমানীর। ধর্মান্তরিত হয়ে জয়ানন্দ বিয়ে করে আসমানীকে। যেদিন জয়ানন্দ বিয়ে করে সেইদিনই চন্দ্রাবতীর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা। বধূ সাজে সজ্জিত চন্দ্রাবতী জানতে পারে জয়ানন্দ বিয়ে করেছে অন্যত্র। ব্যথাতুর চন্দ্রাবতী প্রতিজ্ঞা করে কুমারী থেকে শিবের সাধনায় জীবন কাটাবে। পিতার কাছে অনুমতি চাইলে চন্দ্রাবতীকে তিনি পরামর্শ দেন রামায়ণ লেখার। চন্দ্রাবতী শুরু করে শিব স্তুতি ও সাহিত্য সাধনা। এর মাঝে কেটে যায় বেশ কিছুকাল। এক সময় জয়ানন্দ উপলব্ধি করে আসমানীর প্রতি তার টান মোহ মাত্র। প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রবতীকেই ভালবাসে সে। বুঝতে পারে তার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। ভুল শোধরাতে জয়ানন্দ সন্ধ্যার দিকে এসে পৌঁছায় চন্দ্রাবতীর মন্দিরে। চন্দ্রাবতী তখন রুদ্ধদ্বার ধ্যানমগ্ন। জয়ানন্দ মন্দিরের দরজায় এসে ডাকাডাকি করে। কিন্তু ধ্যান ভাঙ্গেনি চন্দ্রবতীর। ব্যর্থ জয়ানন্দ মন্দিরের দরজায় একটি কবিতা লিখে বিদায় নেয় চিরদিনের মতো। ধ্যান ভাঙার পর মন্দির পরিষ্কার করার জন্য চন্দ্রাবতী নদীর ঘাটে জল আনতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে জয়ানন্দের নিথর দেহ নদীর জলে ভাসছে। এভাবেই বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী। আইরিন পারভীন লোপার পোশাক পরিকল্পনায় নাটকটির কোরিওগ্রাফি করেছেন শ্রাবন্তী গুপ্ত। অম্লান বিশ্বাসের আলোকায়নে নাটকটির প্রপস করেছেন এ কে আজাদ সেতু, রূপসজ্জায় ছিলেন শুভাশিষ দত্ত তন্ময়। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন-মনামী ইসলাম কনক, বাপ্পী সাইফ, ফাতেমা তুজ জোহরা ইভা, আশিকুর রহমান, নাবা চৌধুরী, খন্দকার রাকিবুল হক, মাসুদ কবির, হুমায়রা তাবাসসুম নদী, রাকিবুল ইসলাম রাসেল, মেছবাহুর রহমান, জান্নাত তাসফিয়া বাঁধন, ইগিমি চাকমা, মোস্তফা জামান সৌরভ, উষ্মিতা চৌধুরী, নির্ঝর অধিকারী, মায়ান মাহমুদ, টুটুন চাকলাদার, মোস্তাফিজুর রহমান মফিজ, সানাউল্লা সান্টু, সেলিম রেজা স্বপন প্রমুখ।
×