ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে দমকলকর্মী

সিডনি ঘিরে লেলিহান শিখা

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

সিডনি ঘিরে লেলিহান শিখা

অস্ট্রেলিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ শহর সিডনির ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের বিশাল এলাকাজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। দমকলকর্মীরা আগুন কোনক্রমেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এ বছর দাবানলের আগুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমি পুড়ে খাক হয়ে গেছে। খবর বিবিসির। দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে লোকজনকে অতি দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘরের জিনিসপত্র না নিয়েই অনেক লোক নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। অক্টোবর মাস থেকে অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল শুরু হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ছয়জন মারা গেছে। সাতশ’র বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটিতে এবার মৌসুমের আগেই দাবানল শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে এসব ঘটছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অতি দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সিডনির পাশাপাশি কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া, দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল ছাড়াও তাসমানিয়াতে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কিছু আগুনের শিখা গসপারস পাহাড়ের সমান উঁচু হয়েছে। নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের দমকল বিভাগ শনিবার এক টুইটে জানায়, ৯৫টি দাবানল শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকগুলোর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আগুন নেভাতে দুই হাজার দুইশ’ দমকলকর্মী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার নয়টি দাবানল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। দাবানলের কালো ধোঁয়া সিডনির আকাশ ছেয়ে ফেলেছে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের সহকারী পুলিশ কমিশনার রব রজারস দেশটির জাতীয় টেলিভিশন এবিসিতে বলেন, আমরা আগুন নেভাতে পারছি না। আগুন ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন শুধুই আগুন। ওই এলাকা পুরো হলুদ হয়ে গেছে। দমকলকর্মীরা কোনমতে এসব এলাকা থেকে কয়েক শ’ পশুকে উদ্ধার করে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই দাবানলপ্রবণ এলাকা থেকে এখন লোকজনের অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া আপাতত কোন পথ নেই। এদিকে আগুন নেভাতে কানাডা থেকে অভিজ্ঞ দমকলকর্মী এনেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। তারা খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। সিডনির আশপাশে তারা মার্কিন দমকলকর্মীদের সঙ্গে কাজ করবে। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া বিভাগ সামনের দিনগুলোতে আরও গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া অনুভূত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে বিপদ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সিডনির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর পারদ ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দমকলকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও পানি ও জনবল প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দফতর জানায়, কিছু আগুনের শিখা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এসব আগুন শুধু বৃষ্টির সাহায্যেই নেভানো সম্ভব। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে প্রায় দুইশ’ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহের কারণে দাবানল হয়। স্থানীয়রা একে বলে থাকে বুশফায়ার। মাঝে মাঝেই মারাত্মক আকার ধারণ করে এটি। আগুনের রোষের মুখে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। কখনও সংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করা অথবা দাবানলের পথে গাছ কেটে আগুন থামানোর চেষ্টাতেই অবলম্বন খোঁজে স্থানীয়রা। তবে বুশফায়ার বা দাবানলপ্রবণ এলাকায় জনবসতি তুলনামূলক কম থাকায় মানুষের প্রাণহানির পরিমাণ কম হয়। কিন্তু প্রচুর গাছ ও জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটে। বৃহস্পতিবার সিডনির দক্ষিণ প্রান্তের দাবানলের একটি ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দ্রুত আগুন ছড়াতে শুরু করায় দমকলকর্মীদের ছুটে পালাতে দেখা গেছে। দাবানলের প্রভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় এই শহর সিডনির বাতাস দূষিত হয়ে উঠেছে। আগামী কয়েকদিনে তা বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×