ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় মাসের প্রথম দিনে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

বিজয় মাসের প্রথম দিনে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিজয় র‌্যালি, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সমাবেশ, দেশাত্মবোধক গান, আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানে রবিবার বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল মিরপুরস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশ করেছে। ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশন বিজয় র‌্যালি ও আলোচনার সভার আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বিজয় র‌্যালি শেষে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশে জাসদ নেতারা বলেছেন, যারা এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা মেনে নেয়নি, যারা এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক পার্টনারশীপে আছে, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ও বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা মানে না- তাদের দমন ছাড়া বাংলাদেশে শান্তি আসবে না। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জাসদ নেতা শওকত রায়হান, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সেলিম, উত্তম দাস, নাসিমুল গসি সেজু, কাজী শামীম উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পাকিস্তানের চেয়ে এক শ’ গুণ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শুধুমাত্র একজন বঙ্গবন্ধু না থাকায় পৃথিবীর অনেক দেশ স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখনও স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। একইসঙ্গে উন্নয়নের ধারা চলমান থাকলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরে পাকিস্তানের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশন ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু ২০২০’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস এমপি, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মিত্রবাহিনী পরিবারের সদস্য দেবব্রত গোড়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় কয়েক শ’ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী অতিথিদের বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু ২০২০ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সমন্বয়ে আয়োজিত র‌্যালি উদ্বোধন করেন। বিজয় র‌্যালিটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে এসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালীর ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল। এ ফসল একদিনে উঠে আসেনি। বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলা ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠী, বাঙালী সংস্কৃতি কেন্দ্রিক উন্নত জীবনধারী একটি দেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল। স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনও পৃথিবীর বহুদেশে যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারছে না। কারণ তাদের একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নেই। বঙ্গবন্ধু তার সুদীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যে সমগ্র দেশের মানুষকে একত্রিত করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী গত দশ বছরে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের তুলনামূলক অর্থনৈতিক সূচক তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নে সারা বিশ্বের বিস্ময়। গত দশ বছরে দেশে মাথা পিছু আয় ৫৫৬ মার্কিন ডলার থেকে এক হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ কোথায় যাবে তা কল্পনাও করতে পারি না। তিনি বলেন, গড় আয়ু, মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহারসহ অগ্রগতির প্রতিটি সূচকে গত ১১ বছরের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই দুটি বছর জাতির উৎসবের বছর, উদযাপনের বছর। এই সময়ের জন্য তিনি যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযোগী হিসেবে নিজেদের তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এতটাই এগিয়েছে যে, বিশ্ব যেখানে ৫-জি নিয়ে চিন্তা করছে সেখানে বাংলাদেশ ৫-জি চালুর প্রস্তুতিও নিয়ে নিয়েছে এবং তা সবার আগেই চালু করবে। বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আজ বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বর্তমান বাংলাদেশ এক উন্নত বাংলাদেশ। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলাম নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষ ও সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। যার ফল আজ পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এদিকে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন মুক্তিযোদ্ধা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য ‘বিজয় র‌্যালি’ বের করা হয়। বিজয় র‌্যালি শেষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পদক্ষেপ বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
×