ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাউনিং স্ট্রিট কাকে ডাকছে

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২০ নভেম্বর ২০১৯

ডাউনিং স্ট্রিট কাকে ডাকছে

ব্রেক্সিট প্রশ্নে অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনে আগাম সাধারণ নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে। ভোটের তারিখ ১২ ডিসেম্বর। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রধান দুই দলÑ রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলের মধ্যে সাজ সাজ রব। রক্ষণশীলরা ক্ষমতায়। তারা এই অবস্থান ধরে রাখতে চায়। আর শ্রমিক দল ১৯৯৭ সালে শেষবারের মতো ক্ষমতায় ছিল। তারপর আর ক্ষমতার মুখ দেখেনি। তারা এবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া। তারা এক দশকের মধ্যে সর্বাধিক বামপন্থী প্লাটফর্মে প্রচারাভিযান চালাবে। তাদের লক্ষ্য হিসেবে তারা বলছে যে শ্রমজীবী জনগণের পক্ষে সম্পদ ও ক্ষমতার অপরিবর্তনীয় পরিবর্তন আনা। দলটি যদি নির্বাচিত হতে পারে এমনকি সংখ্যালঘু সরকারও গঠন করতে পারে তাহলে ব্রিটিশ অর্থনীতিকে আমূল ঢেলে সাজাবে এবং সেটাকে এই মাত্রায় বদলাবে যা ১৯৮০-এর দশকে মার্গারেট থ্যাচারের আমল থেকে আর হয়নি। শ্রমিক দল অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতায় গেলে তারা রক্ষণশীলদের আর্থিক কৃচ্ছ্রতার অবসান ঘটাবে। পানি ও জ্বালানি ফার্মগুলোকে সরকারী মালিকানাধীনে আনা হবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে নতুন ম্যান্ডেট দেয়া হবে। বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে তাদের ইক্যুইটির ১০ শতাংশ শ্রমিকদের কাছে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হবে। তেমনি ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সস্তায় ওষুধ সরবরাহে বাধ্য করা হবে। প্রাইভেট স্কুল তুলে দেয়া হবে। শ্রম সপ্তাহ ৫ দিনের স্থলে ৪ দিনে নামিয়ে আনা হতে পারে। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে আগে থেকে বলার উপায় নেই। তবে শ্রমিক দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনায় বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ উদ্বিগ্ন। নীতিগত বিষয়ে আমূল পরিবর্তন ব্রিটেনকে অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেবে। দেশটির বর্তমান চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশ যা ধনী দেশগুলোর মানদ-ে যথেষ্ট বেশি। তার অর্থ দেশটি বিদেশী মূলধন আগমনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। অর্থনীতিবিদরা আরও মনে করেন ব্রিটিশ সরকারের ওপর বিদেশীদের আস্থা নষ্ট হলে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দাম পড়ে যাবে। সরকারী ঋণের খরচ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই ২০১৭ সালে গোল্ডম্যান শ্যাসের এক অংশীদার মন্তব্য করেছিলেন যে শ্রমিক দলের নেতা করবিনের অধীনে ব্রিটেন হবে সূর্যবিহীন কিউবার মতো। সে সময় মরগ্যান স্ট্যানলি নামে এক বিনিয়োগ ব্যাংক ও শ্রমিক দলীয় সরকারের আগমনের বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছিল। তথাপি কিছু কিছু অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক সরকার যদি ক্ষমতায় আসেও বা সেক্ষেত্রেও ভবিষ্যতকে অধিকতর অনুকূল দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করবে। প্রথমত হলো ব্রেক্সিট। রক্ষণশীলরা যতটা কঠিনতম উপায়ে পারা যায় ব্রেক্সিট চুক্তি ঠিক করেছিল। সর্বোত্তম হিসাবে বলে যে এতে ব্রিটেনের আয় দীর্ঘমেয়াদী বিচারে কমবে ৬ শতাংশ। বিনা চুক্তিতে ইইউ ছাড়লে যে প্রভাব পড়বে এর প্রভাব তার চেয়ে খুব একটা কম হবে না। অন্যদিকে শ্রমিক দল অঙ্গীকার করেছে যে ক্ষমতায় এলে তারা ব্রেক্সিট প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট করবে এবং ইইউতে একেবারে থেকে যাওয়ার বিপরীতে নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে ব্রেক্সিট চুক্তি করবে। দ্বিতীয়ত: জনমত জরিপে দেখা যায় যে সংখ্যাগুরু সরকার গঠনের সম্ভাবনা শ্রমিক দলের কমই আছে। খুব সম্ভবত দলটিকে সরকার গঠনের জন্য স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) কিংবা লিবারেল ডেমোক্রেটদের ওপর নির্ভর করতে হবে। দুটো দলেরই নির্বাচনে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ লাভের সম্ভাবনা আছে। সঙ্গী হিসাবে অধিকতর মডারেট দলগুলো থাকায় শ্রমিক দলের পক্ষে তার অতি র‌্যাডিকেল পরিকল্পনাগুলো পার্লামেন্টকে দিয়ে পাস করানোর সুযোগ কম থাকবে। পার্লামেন্টের এই গাণিতিক হিসাব এবং সেইসঙ্গে যে কোন ব্রিটিশ সরকারের ওপর ভারসাম্য বিধানের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা করবিন সরকারের ইচ্ছাশক্তিগুলোকে নিশ্চয়ই খর্ব করে দেবে। অবশ্য শ্রমিক দল যে জিতবেই এমন কোন কথা নেই। অনেক জনমত জরিপে রক্ষণশীলদের সম্ভাবনা শ্রমিক দলের চেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ জরিপে দেখা যায় যে রক্ষণশীল দলের ৩৮ শতাংশ সমর্থন ও শ্রমিক দলের ৩১ শতাংশ সমর্থন আছে। শ্রমিক নেতা জেরেমি করবিনের চেয়ে এ মুহূর্তে টোরি নেতা জনসনের জনপ্রিয়তা ৭ পয়েন্ট বেশি। তবে ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনই বলে দেবে ডাউনিং স্ট্রিট আসলে কার। সূত্র : ইন্টারনেট
×