ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রবীন্দ্রনাথের গান কবিতার সন্ধ্যা ‘হিরণ কিরণ ছবিখানি’

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রবীন্দ্রনাথের গান কবিতার সন্ধ্যা ‘হিরণ কিরণ ছবিখানি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুর আর ছন্দের সমন্বিত এক সন্ধ্যা। কবিতা আর গানে গানে কেটে যায় শ্রোতার সুন্দরতম সময়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐশ্বর্যময় সৃষ্টির অনন্য সেই পরিবেশনাগুলো উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের কণ্ঠ এবং আবৃত্তি শিল্পীরা। ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের শিল্পীদের সম্মিলিত এই অংশগ্রহণে সজ্জিত অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল হিরণ কিরণ ছবিখানি। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তক পদাবলী আবৃত্তি একাডেমি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। সভাপতিত্ব করেন মুক্তক পদাবলী আবৃত্তি একাডেমির সভাপতি প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী লায়লা আফরোজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার পাশাপাশি ধারা বর্ণনা করেন দেওয়ান সাইদুল হাসান। নির্মলেন্দু গুণ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশ বা পূর্ববঙ্গের মানুষ তাকে গ্রহণ করতে দ্বিধারোধ করতে পারে। এখানকার রক্ষণশীল হিন্দু-মুসলমানদের বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি তিনি আগেই আঁচ করেছিলেন। এরপরই আমরা দেখতে পেলাম যে, এই ভূখ-ে রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা নিষিদ্ধ করা হলো। তবে কোন বাধাই রবীন্দ্রনাথকে শেষ পর্যন্ত আটকাতে পারেনি। কেননা, তিনি আমাদেরই মানুষ। এখন যখন শুনি, কেউ রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীতের বিরোধিতা করেন তাদের আমার অসভ্য ও মূর্খ মনে হয়। কেননা, রবীন্দ্রনাথ না পড়ে ও বুঝেই এ ধরনের কথা বলে। মানবিক সমাজ বিনির্মাণে বাঙালী জাতিসত্তার কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা উঠে আসে অন্য অতিথিদের কথনে। তারা বলেন, বাঙালীর সকল কাজে, সকল আশায় এবং ভালবাসায়, সকল দুঃখ ও সুখে স্থিতধী বৃক্ষের মতো রবীন্দ্রনাথ পাশে আছেন। তিনিই আমাদের প্রেরণাদায়ী শক্তি, শেষ পারানির কড়ি। তার পূরবী ও বিভাসই আমাদের অনিবার্য অনিষ্ট। সভ্যতার বিনির্মাণে কবিতার ভূমিকা প্রসঙ্গে অতিথিরা বলেন, কবি ও কবিতার বিনাশ নেই, কবিরা হচ্ছেন- অমৃতস্য পুত্রা বা অমৃতের সন্তান। সভ্যতার ক্রমবিকাশে অশুভের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রামে কবিতা, সঙ্গীত, চিত্রকলা মানুষকে বারবার জয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে চে-গুয়েভারা, হো-চি-মিন থেকে মাও-সেতুং, সব বিপ্লবীই কবিতার শক্তির কাছে নতজানু হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতসুধা প্রসঙ্গে বলেন, কবি গুরু নিজের গান-কবিতার ভবিষ্যত নিয়ে বলেছেন, ‘আমার কবিতা মানুষ ভুলে গেলেও, আমার গান কখনও ভুলতে পারবে না। আমার সব গানের ধারা এসে থেমেছে মানুষের মধ্যে।’ তাই সঙ্কটে-সম্ভাবনায়- প্রেমে কিংবা দ্রোহে এই বঙ্গীয় উপদ্বীপের মানুষ তথা বিশ্ব বাঙালী চিরদিন গাইবে এবং শুনবে রবি ঠাকুরের গান। আলোচনা শেষে শুরু হয় গান ও কবিতার পরিবেশনা পর্ব। বাংলাদেশের ফাহিম হোসেনের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন ভারতের শিল্পী জয়ন্তী সোরেন। বাচিকশিল্পী মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্, রাশেদ হাসান ও লায়লা আফরোজের সঙ্গে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ উপস্থাপন করেন ভারতের আবৃত্তিশিল্পী মলি দেবনাথ। রবীন্দ্র সুরের নির্যাসে শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়ে ফাহিম হোসেন চৌধুরী গেয়ে শোনান ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’, ‘আজি প্রণমি তোমারে’, ‘সেই ভালো ভালো’, ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে’, ‘আনেরা কত দূরে আছে সে আনন্দধাম’ শিরোনামের সঙ্গীত। জয়ন্তী সোরেনের কণ্ঠে গীত হয় ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’, ‘ওগো নদী আপন বেঘে পাগলপারা’, ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে হৃদয় কমলবন মাঝে’, ‘ছায়া ঘটনাইছে বনে বনে গগনে গগনে’ শিরোনামের একগুচ্ছ গান। শিল্পিত উচ্চারণের দোলায়িত ছন্দে রাশেদ হাসান পাঠ করেন ‘সন্ধ্যা ও প্রভাত’, ‘ছিন্নপত্র’, ‘আমি’, ‘দুঃসময়’ ও ‘আফ্রিকা’ শিরোনামের কবিতাগুলো। আহ্কাম উল্লাহ্্ কণ্ঠে তুলে নেন ‘পরিচয়’, ‘ঝুলন’, ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ‘হঠাৎ দেখা’ ও ‘প্রশ্ন শিরোনামের কবিতাগুলো। মলি দেবনাথ পাঠ করেন ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘মানবপুত্র’, ‘কৃতঘœ’, ‘হঠাৎ দেখা’ ও ‘মৃত্যুঞ্জয়’ শীর্ষক কবিতাগুলো। লায়লা আফরোজ আবৃত্তি করেন ‘কাশের বনে শূন্য নদীর তীরে’ ‘শেষ খেয়া’, ‘যখন আকাশ কাঁদে’, ‘বর্ষামঙ্গল’ ও ‘মেঘদূত’ শিরোনামের কবিতা।
×