ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসকশূন্য শজিমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 চিকিৎসকশূন্য শজিমেক  হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ তিনটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সবচেয়ে স্পর্শকাতর ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক প্রায় শূন্য হয়ে রয়েছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমক) ও হাসপাতালে। কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে অপরাধজনিত ৪২টি লাশের পোস্টমর্টেম (পিএম) বা ময়নাতদন্ত হয়। এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারী ও শিশুর ধর্ষণ পরীক্ষা, প্রেমঘটিত বিষয়ে মেয়েদের বয়স নির্ণয় করতে হয়। নারী ও শিশুদের পরীক্ষা করতে হয় নারী চিকিৎসককে। শজিমেকের উপাধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল বললেন ‘কি যে অবস্থা তা বর্ণনায় বোঝানো যাবে না। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে কয়েক দফায় চিঠি লিখা হয়েছে। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকার একজন চিকিৎসককে বগুড়ায় ফরেনসিক বিভাগে যোগ দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিছুই এগোচ্ছে না।’ শজিমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, তিনজন প্রভাষকের পদ আছে। বর্তমানে সব শূন্য। অন্য বিভাগের চিকিৎসককে এনে কোনরকমে কাজ সেরে নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খুনের জটিল ঘটনায় মৃতদেহের পোস্টমর্টেম খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। সামান্য ভুল থাকা কাম্য নয়। সরকারী সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত। উপাধ্যক্ষ ডাঃ জুয়েল বলেন ‘মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ফরেনসিক থিউরিটিক্যাল ক্লাস না হয় অন্য বিভাগের শিক্ষক দিয়ে নেয়া যায়। পোস্টমর্টেমে অভিজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসক দরকার।’ সূত্র জানায়, গত দুবছরে শজিমেক হাসপাতালের মর্গে এক হাজারেরও বেশি লাশের পোস্টমর্টেম হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে ৪২টি করে। এর বাইরে রেপ ভিক্টিম ও কিশোরীদের বয়স নির্ধারণ পরীক্ষা হয়েছে আরও অন্তত এক হাজার। এই বিষয়ে বগুড়া পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ সময় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেতে অনেক সময় লাগে। জটিল লাশ বিশেষ করে একাধিক আঘাত ও গুলিতে নিহত এবং আত্মহনন ব্যক্তির পোস্টমর্টেম করতে কখনও সারা দিন লেগে যায়। শরীর থেকে গুলি বের করার পর ব্যালাস্ট পরীক্ষা দরকার। জটিল হত্যা মামলার তদন্ত অনেকটাই নির্ভর করে এই রিপোর্টের ওপর। অস্ত্রের আঘাতের গতি প্রকৃতির সূক্ষ্ম পরীক্ষা হত্যার মোটিভ উদঘাটনে সহায়ক। দেরিতে রিপোর্ট পেলে তদন্ত প্রতিবেদনে দেরি হয়। অনেক সময় এই রিপোর্টের পাশাপাশি ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট দরকার। বগুড়া শজিমেকে ডিএনএ টেস্ট হয় না। এজন্য যেতে হয় রাজশাহীতে। নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক ঘটনায় ভিক্টিমের পরীক্ষা করেন ফরেনসিক বিভাগের নারী চিকিৎসক।
×