ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণ উন্নয়নের স্রোতে পাল্টে যাওয়া নতুন নগরী ॥ মেয়র

প্রকাশিত: ১০:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 ঢাকা দক্ষিণ উন্নয়নের স্রোতে পাল্টে যাওয়া নতুন নগরী ॥ মেয়র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত সাড়ে চার বছরের বেশি সময়ে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মৌলিক প্রায় সকল সমস্যার সমাধান করেছি। ফলে দক্ষিণ সিটি এখন উন্নয়নের স্রোতধারায় পাল্টে যাওয়া এক নতুন নগরী। আগামীতে জনগণ চাইলে ক্ষমতায় আসলে দক্ষিণ সিটিকে আন্তর্জাতিক মানের নতুন নগরীতে পরিণত করা হবে। ঢাকাকে নতুন করে ঢেলে সাজা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। রবিবার সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে সংস্থাটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় মেয়র দক্ষিণ সিটির আগামী বছরের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আগের বছরের সংশোধিত বাজেটও পাস করেন। চলতি মেয়াদে এটিই মেয়রের শেষ বাজেট। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিন হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা দেয় ডিএসসিসি। কর্পোরেশনের ১৯তম সাধারণ সভায় অনুমোদনের পর এই বাজেট ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে এক হাজার ৯০২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এবারের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বাড়তি ধরা হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকারী ও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর প্রকল্প থেকে দুই হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, আর অন্যান্য আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এবারের বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। পরিচালনা ব্যয় ৬২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে ডেঙ্গুসহ সকল প্রকার মশকবাহিত রোগ প্রতিরোধ তথা মশক নিধনে বরাদ্দ গত অর্থবছরের দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন বাজেট সম্পর্কে মেয়র বলেন, ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আমার সমবেদনা। তিনি বলেন, যানজট নিরসন, বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন, কমিউনিটি এ্যাম্বাসেডর, বঙ্গবন্ধু জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র, বিনামূল্যে দাফনের ব্যবস্থা, জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠান, জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পসহ নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিগত চার বছরে আমরা যা করেছি, তা কয়েক দশকেও হয়নি। শতভাগ এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে। বাজেট ঘোষণার সময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খাদেমুল করিম ইকবালসহ সকল সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন। শহরের উন্নয়নে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে বলে দাবি করে মেয়র বলেন, ডিএসসিসির সব কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ঢাকাকে আমরা বাসযোগ্য শহর করে গড়ে তুলতে পেরেছি। ডিএসসিসির সার্বিক কর্মকান্ডে আমরা গতিশীলতা এনেছি। নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছি। বিগত চার বছরে যেসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে তা বিগত এক দশকেও করা সম্ভব হতো না। অতীতের কোন সময়েও এত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সবার সহযোগিতায় ঢাকাকে আন্তর্জাতিক মানের শহরে পরিণত করার অঙ্গীকার করেন মেয়র। মেয়র বলেন, ডেঙ্গু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে আমরা ডেঙ্গুকে স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করতে ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে রোগ প্রতিরোধ সেল নামে একটি সেল খোলা হবে ও এ নিয়ে গবেষণা করবে সারাবছরই। এ সেলের প্রধান কাজই হবে ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়াসহ সকল প্রকার ভাইরাসসহ ছোঁয়াচে রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করা। আমরা সেজন্য চলতি অর্থবছরের মশার অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ করেছি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবার এই খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে অর্ধশত কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে মশক ওষুধ কেনার জন্য ৪৩ কোটি টাকা ও মশার যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের বাজেটে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজে এই টাকা খরচ করা হবে। মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিলে এবার প্রায় ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। গতবছর এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই খাতে ৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। মেয়র বলেন, আমরা ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ডিএসসিসির সকল এলাকায় অবস্থিত প্রতিটি পার্ক ও খেলার মাঠকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলছি। যার মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়েছি। এজন্য জলসবুজে ঢাকা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় ট্রেড লাইসেন্স ফি অনলাইনে নেয়া হচ্ছে। ফলে গ্রাহকগণ ঘরে বসেই তাদের অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা এর মধ্যেই আধুনিক ২২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফর্মার স্টেশন স্থাপন করেছি। এছাড়া অত্যাধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা, নতুন ৬৬৯ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে আরও ৬শ’ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, নতুন যুক্ত হওয়া ৪টি ইউনিয়নের জন্য মোট ৪৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কর্মকা- করা হচ্ছে। যার ৪০ ভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন আরও ৪টি ইউনিয়নে ৫১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা হবে। সাঈদ খোকন বলেন, দক্ষিণ সিটির ১০০ ভাগ এলাকায় উজ্জ্বল আলোর এলইডি বাতি লাগিয়েছি। ফলে শতকরা ৯৭ ভাগের বেশি এলাকায় রাতে আলো জ্বলে। বর্তমানে কিছু স্থানে সমস্যা হলেও সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করে সঙ্গে সঙ্গেই বাতি লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করা, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা, নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কল সেন্টার স্থাপন করে বিনামূল্যে ডাক্তার দিয়ে ওষুধ প্রদান ও নিজস্ব হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া অসহায় ও গরিব নাগরিকদের জন্য মৃত্যুর পর বিনামূল্যে দাফন করাসহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও বাজেটে কর্পোরেশনের আয়ের বড় অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে কর থেকে। বিভিন্ন ধরনের কর বা রাজস্ব খাত থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজার সালামি বাবদ ৩১০ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৯০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ডিএসসিসি। এছাড়াও সম্পত্তি হস্তান্তর কর থেকে আয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। বাজেটে ব্যয়ের দিক থেকে সব থেকে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের ব্যয়ে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়াও বিদ্যুত, জ্বালানি, পানি ও গ্যাস খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা। কল্যাণমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র দাবি করেন আমরা বলেছিলাম মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান করব। এখন দাবি করতে পারি মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগে ৭৫-৮০ শতাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী ছিল এখন ৯০ ভাগ রাস্তা চলাচলের উপযোগী।
×