ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে কমতে পারে তালপাকা গরম

প্রকাশিত: ১০:২০, ৩১ আগস্ট ২০১৯

কাল থেকে কমতে পারে তালপাকা গরম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার রোদ। এটি মূলত শরতকালের বৈশিষ্ট্য। ভাদ্র আশ্বিন এই দু’মাস শরতকাল। ভাদ্রের অর্ধেক পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তিন বৈশিষ্ট্যের শরতকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অফিস বলছে আগামীকাল থেকে হয়তো বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। চলবে ৫ তারিখ পর্যন্ত। তারা বলছেন ভারি বৃষ্টি হলে যে তালপাকা গরম চলছে তা হয়তো কিছুটা কমে আসতে পারে। মিলতে পারে ক্ষণিক শান্তির পরশ। ২ সেপ্টেম্বর সাগরের লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হবে। এছাড়া এই সময়ে সারাদেশে মৌসুমি বায়ু আরও বেশি সক্রিয় হয়ে পড়বে। ফলে একেবারেই বৃষ্টিশূন্য থাকবে না ভাদ্র মাস। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন এবারের বছরের শুরু থেকেই আবহাওয়া ভিন্ন প্রকৃতির। যখন বৃষ্টির হওয়ার কথা তখন বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যখন বৃষ্টির জন্য অস্থির হয়ে পড়ছে প্রকৃতি তখন নিয়ম ভেঙ্গে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। গত জুন, জুলাই বর্ষা ঋতুতেও এবার এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। আবার বর্ষাকাল শেষ হয়ে আসলেও প্রকৃতির দাবদাহ যেন এবার কমতেই চাচ্ছে না। ফলে শরতে রূপ প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, সাগরের গত বুধবারে একটি লঘুচাপের জন্ম নিলেও তা বর্তমানে কেটে গেছে। শুক্রবার তা ভারতের ওড়িশা অতিক্রম করে স্থলভাগে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া না গেলেও গত কয়েকদিন ধরে প্রকৃতি অনেকটা অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রচ- গরমের কারণে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে, রাতে ঘুমানোও কষ্টকর। এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। একটানা ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি কেটে গেলে আগামী ২ সেপ্টেম্বর আরও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটির তীব্রতা বেশি থাকবে। তবে তা নি¤œচাপের রূপ না নিলেও এর প্রভাবে দেশে বৃষ্টি ঝড়বে। একই সময়ে দেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। দুই মিলে এই সপ্তাহে দেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টি দেখা মিলতে পারে। আর বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্র কমে গিয়েও জনজীবনে শান্তির পরশ নেমে আসবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন লঘুচাপ সৃষ্টি হলে এখনই সাগরে কোন ঘূর্ণিঝড়ের আভাস নেই। সাধারণত এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মেলে না। এবার সে ধরনের সঙ্কেত নেই। মৌসুমি বায়ু অক্টোবর পর্যন্ত দেশে অবস্থান করবে। এই অবস্থানকালে দেশে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বছরের শুরু থেকে প্রকৃতি সঠিক আচরণ করছে না। শীতের শেষে ফেব্রুয়ারিতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা দেশে ৫২ বছরের ইতিহাসে এত বৃষ্টিপাত হয়নি। কিন্তু গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাবদাহ বেড়ে গেছে। তা থেমে থেমে এখনও অব্যাহত রয়েছে। জুনের ৯ তারিখে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করলেও এখন পর্যন্ত তা সক্রিয় অবস্থায় আসেনি। ফলে পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি। ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙ্গে পুরো শ্রাবণটা প্রায় বৃষ্টিহীন থেকেছে। এখন চলছে শরতকাল। কিন্তু ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী শরতকাল প্রকৃতিতে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরতকাল এখন আর ষড়ঋতুতে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবহাওয়া শ্রেণীবিন্যাস করলে দেখা যাবে ৪টি ঋতুর অস্তিত্ব রয়েছে। শহুরে জনপদ বাদে গ্রামীণ জনপদে কখনই মানুষকে বলে দিতে হয় না এখন বর্ষাকাল, এখন শরতকাল বা হেমন্তকাল। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ তার সূক্ষ্ম অনুভূতি দিয়ে সেটা উপলব্ধি করে নেয়। এজন্য পঞ্জিকা দেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ঋতু বৈচিত্র্যের এই ধরন আর প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কোন ঋতুকেই এখন আর আলাদাভাবে চেনার উপায় নেই। তারা বলেন, শরতের সৌন্দর্য্য বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। ভাদ্র ও আশ্বিন এ দু’মাস শরতকাল বর্ষার পরের ঋতুই শরত। তাই শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল, স্নিগ্ধ। শরতের আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না। রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘমুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে শরতকালকে বলা হয়ে থাকে ঋতুর রানী। শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শরতের মন মাতানো এই প্রকৃতি এখন আর নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শরতকালের সেই মাধুর্য এখন আর খুঁজে পায় না মানুষ। এবার তার ব্যতিক্রম নেই।
×