ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মূল মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর দাবি

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২২ আগস্ট ২০১৯

মূল মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভয়াল-বীভৎস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরের দাবি উঠেছে সর্বত্র। শোকাবহ পরিবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় শহীদদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার শপথ এবং গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির মধ্য দিয়ে বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে রক্তস্নাত ভয়াল-বিভীষিকার একুশ আগস্টের পঞ্চদশ বার্ষিকী। দিবসটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা ২১ আগস্টের খুনীদের দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে গ্রেনেডের স্পিøন্টারবিদ্ধ জীবš§ৃতদের দাবি, ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হোক, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে যাবজ্জীবন নয়, সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। সকাল নয়টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলারস্থলে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচী। প্রথমে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শহীদদের স্মরণে স্থাপিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ সময় শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বেদিতে জড়ো হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদ, ৩ নবেম্বর জেল খানায় চার জাতীয় নেতা ও গ্রেনেড হামলার শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে ১৪ দলের পক্ষ থেকেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা প্রমুখ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তাদের স্মরণে প্রতি বছর নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ২ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে জঙ্গী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান শোকার্ত জনতা। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পাশাপাশি মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় অস্থায়ী শহীদ বেদিমূল। নেতাকর্মীরা তারেক রহমানসহ ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে রাখে। গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহত বেশ কয়েক নেতাকর্মী ক্র্যাচে ভর করে, হুইল চেয়ারে করে এসে শ্রদ্ধা জানান শহীদদের প্রতি। তাদের উপস্থিতিতে শোকের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ওইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে যাওয়া পঙ্গুত্ববরণকারী কয়েকজন নারী নেত্রী তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, হাত-পা ক্ষত-বিক্ষত, জোড়াতালি দেয়া। সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা ঘাতক স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিচার পাইনি। এরপর আশায় ছিলাম দল ক্ষমতায় আসবে, অপরাধীদের বিচার হবে। দল ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এখনও বিচার শেষ হলো না? বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর পরও শেষ হয়নি এর বিচার কাজ। গত বছর বিচারিক আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। তবে এরপর ডেথ রেফারেন্সসহ আসামিদের আপীল আবেদনের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি সেই আপীলের শুনানি। এ ঘটনার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আহতরা বলেন, জীবš§ৃত হয়ে বেঁচে থাকলেও আমাদের একটাই দাবি, প্রকাশ্য দিবালোকে যারা এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাল সেই ঘাতকচক্র ও তাদের মদদদাতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হোক। গ্রেনেড হামলার সেই ভয়াবহ ঘটনা এখনও তাড়া করে ফেরে আহতদের। অনেক পরিবার দুঃসহ বেদনা নিয়ে দিন যাপন করছেন। আবার অনেকে আহত হয়ে পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন। এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে গোটা বঙ্গবন্ধু এলাকাকে ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও কালো পতাকা দিয়ে শোকের আবহে সাজানো হয়। সেদিনের বিভিন্ন ঘটনার দিক তুলে ধরে ডিসপ্লে এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের বর্বরোচিত হামলার ভয়াল-বীভৎস আলোকচিত্র দেখে অনেককেই চোখের জল ফেলতে দেখা যায়। অপরদিকে ২১ আগস্ট স্মরণে বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×