ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চয়তার হাতছানি পারস্য উপসাগরে

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ২০ আগস্ট ২০১৯

অনিশ্চয়তার হাতছানি পারস্য উপসাগরে

অজানা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে ইরানী সুপার ট্যাঙ্কারটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটিকে আটক বা জব্দের চেষ্টার পদক্ষেপ নিয়েছিল। এরই মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। ইরানী কর্মকর্তারা এ ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা পারস্য উপসাগরে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রবিবার রাতে সমুদ্র নজরদারি সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, ইরানের সুপার ট্যাঙ্কারটি জিব্রাল্টার থেকে নোঙর তুলে যাত্রা শুরু করেছে। তবে ইরানী ওই জাহাজটি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। এপি। নজরদারি সংস্থা মেরিনট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ‘আদ্রিয়ান দরিয়া ১’ (গ্রেস-১) জাহাজটি মধ্যরাতের কিছুক্ষণ আগে যাত্রা শুরু করে। তেলবাহী বিশাল এই জাহাজটি ধীরে ধীরে আইবেরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল ও মরক্কোকে বিভাজনকারী আন্তর্জাতিক জলসীমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জাহাজটিতে ১৩ কোটি ডলারের অপরিশোধিত তেল রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের জন্য এই তেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলে ব্রিটেনের সহযোগিতায় ইরানী তেলবাহী বিশাল এই জাহাজটি আটক করেছিল জিব্রাল্টার। সেখানে প্রায় এক মাস জাহাজটিকে আটক রাখা হয়। জাহাজটিকে পুনরায় আটক করতে রবিবার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জিব্রাল্টার। জিব্রাল্টার থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য কোথায় সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। জিব্রাল্টারের বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জাহাজটির যাত্রা সম্পর্কে এপির কাছে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে জিব্রাল্টার সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয়ের বক্তব্য জানতে চেয়ে এপির পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। ব্রিটেনে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হামিদ বেইদিনিজাদ এর আগে টুইটারে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, রবিবার মধ্যরাতে জাহাজটি জিব্রাল্টার ছেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ের প্রথমদিকে জিব্রাল্টারের কাছ থেকে জাহাজটি আটক করার অল্প কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ স্টেনা ইমপেরো আটক করে ইরান। জাহাজটি এখনও ইরানের হাতে আটক রয়েছে। জিব্রাল্টার সরকার জানায়, ইরানের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতটা প্রযোজ্য বলে মনে করে, জিব্রাল্টারের জন্য ততটা নয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদ আইনসহ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে ২১ লাখ ব্যারেল তেলসহ জাহাজটি জব্দের জন্য শুক্রবার পরোয়ানা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, ইরানী জাহাজটিতে যে তেল রয়েছে সেটির মূল্য ১৩ কোটি ডলার এবং এটি একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গোষ্ঠীর কাজ। আদালতের নথিতে যুক্তি দেখানো হয় যে, একটি কোম্পানির অন্তরালে জাহাজটির প্রকৃত স্বত্বাধিকারী হেরা ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। রবিবার জিব্রাল্টারের কর্তৃপক্ষ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জিব্রাল্টারের আইন অনুযায়ী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তবে ‘আদ্রিয়ান দরিয়া ১’ জাহাজটি কোনদিকে যাচ্ছে সেটি প্রকাশ করেনি ইরান। একইসঙ্গে তারা অস্বীকার করে যে, সেটি কখনও সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেনি। জিব্রাল্টারের মুখ্যমন্ত্রী ফ্যাবিয়ান পিকার্ডো বলেন, তিনি ইরান সরকারের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস পেয়েছেন যে, ওই সুপার ট্যাঙ্কারের তেল সিরিয়ায় খালাস করা হবে না। আদ্রিয়ান দরিয়ার কাগজপত্র ও লজিস্টিক সমর্থন দেয়া জিব্রাল্টারের শিপিং এজেন্সি এ্যাস্ট্রালশিপ এপিকে জানায়, ভারতীয় ও ইউক্রেনের নতুন নাবিকরা জাহাজটিতে রয়েছেন বলে আশা করা হচ্ছে। লন্ডনে ইরানী দূতাবাসের কাছে বক্তব্য জানতে চেয়ে পাঠানো বার্তার তাৎক্ষণিক কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
×