ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএমডিএ’র পর পাউবো ॥ গাছপালা সাবাড়, জমি নষ্ট

পানিতে ভরপুর খালেই পুনর্খনন!

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ১৯ আগস্ট ২০১৯

পানিতে ভরপুর খালেই পুনর্খনন!

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ তানোর উপজেলার পানিতে ভরপুর একটি খালে এবার নতুন করে খনন শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আগে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) খনন করা খালটি এখন পানিতে ভরে থাকলেও সেখানেই পুনর্খনন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উপজেলার কাঁসারদীঘি খালখনন কাজের মেয়াদ গত ২৫ জুন শেষ হলেও সময় পেরিয়ে এবার ভরা খালে খনন শুরু হয়েছে। পানির মধ্যে তড়িঘড়ি করে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন কাজ চলছে। সেখান থেকে মাটি কৃষকের চাষাবাদী জমির ওপর ফেলায় এরইমধ্যে ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার শতাধিক কৃষক নিজেদের জমি রক্ষা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার পরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনন কাজ করছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে খালের দু’পাশে থাকা বিএমডিএর বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কাটা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় তানোর উপজেলার কাঁসারদীঘি খালে এক কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন কাজের অর্ডার পায় নাটোরের ঠিকাদার মোল্লা সরওয়ার মোর্শেদ মুক্তা। কাগজে কলমে কাজ শুরুর কথা লেখা রয়েছে ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২৫ জুন। কিন্তু এখনও সে কাজ শেষ হয়নি। মাঝে বন্ধ থাকলেও এখন ভরা খালেই চলছে খনন। বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, কাঁসারদীঘি খালটির তানোর পৌর এলাকার ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। খালটি ২০০৮ সালে খনন করা হয়েছে। এরপর খালের দুই ধারে ২০১০ সালে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। তবে বিএমডিএর খনন করা খালের ওপর আবারও পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খনন কাজ চলছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আলাদা বিভাগ আর বিএমডিএ আলাদা। তাই তাদের বিষয়ে কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, কৃষকদের জমিতে মাটি ফেলার কারণে অনেক কৃষক ফোন করছে। এখানে আমার তো কিছুই করার নেই। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তানোর পৌর এলাকার ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের রায়তান বরশো ও আকচার পূর্বদিকে এবং বুরুজ গ্রামের দক্ষিণ দিকে দুটি এস্কেভেটর দিয়ে পানি ভর্তি খাল খননের কাজ চলছে। খালের দু’পাশে থাকা কৃষকের জমিতে খনন করা মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ফলে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। খালটি প্রায় ৪ ফুটের মতো প্রস্থ’ হলেও খনন করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। এ কারণে খালের দু’পাশের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালাও কেটে ফেলা হয়েছে। সেই গাছগুলো বিক্রির জন্য মাঝখানের ছাল তুলে লালকালি দিয়ে নম্বর করা হয়েছে। খালে রয়েছে পানি। অথচ খালের দুই পারের মাটি কাটার কারণেই জমির ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও খালটি আগে বিএমডিএ খনন করে গাছ রোপণ করেছিল। পানি ধরে রাখার জন্য ক্রসড্যাম নির্মাণ করা আছে। সেখানেই কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মজিদের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ১২ বিঘা জমির উপরে খালের মাটি পড়েছে। এসব জমিতে কোনভাবেই চাষাবাদ করা যাবে না। আকচা গ্রামের কৃষক মোকলেসুরের ১৫ কাঠা, ইয়াসিনের ২৫ কাঠা, সবুজ সরকারের ৩ বিঘা, বুরুজ গ্রামের আনসারের ৫ বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, জমি নষ্ট করে খাল খনন করা হলে নিজেদের জমি রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কৃষকদের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তানোর-রাজশাহী সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে রয়েছে খাল। সেই খাল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন করছে। সেই খাল খননের মাটি কৃষকের জমির ওপর ফেলে চাষাবাদের অনুপযোগী করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। মাটি ফেলার কারণে অনেকের পুরো জমি ভরাট হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে এলাকার শতাধিক কৃষক লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু জানান, কৃষকরা এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ মৌখিকভাবে শোনা হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তারা বলেছে জমির উপরে যে মাটি পড়বে তা পরে সরিয়ে ফেলবে। যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আহম্মেদ বলেন, বিএমডিএ খালটি আগে খনন করেছিল। তবে খালটি গভীর নয়। তাই ঠিকাদারের মাধ্যমে খালটি পুনর্খনন কাজ শুরু হয়েছে। সময়সীমার মধ্যে ঠিকাদার না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন বিল দেয়া হয়নি। খালটি খনন হলে এলাকার কৃষকদের চাষাবাদে সুবিধা হবে।
×