ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানব হৃদয় বিমোহিত করে, হাসি ফোটায় হৃদরোগীর মুখে

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ১৭ আগস্ট ২০১৯

মানব হৃদয় বিমোহিত করে, হাসি ফোটায় হৃদরোগীর মুখে

সমুদ্র হক ॥ পাখি জানে ফুল কেন ফোটে। ফুল জানে পাখি কেন গান গায়। ফুল এমনও জানে ভ্রমর ও মৌমাছি কেন কাছে আসে। ফুলের গানেও ভ্রমর নেচে আসে। ফুলের একটা সুর আছে। যা শোনা যায় না। ফুলের একটা নাচ আছে। তা অবশ্য দেখা যায়। মৃদু বাতাসে ফুল যখন দুলে ওঠে মনে হবে নিসর্গের ভুবন নেচে উঠেছে। মোহনীয় এই নাচ ধ্রুপদ (ক্লাসিক্যাল) মানব মনের দুঃখ ভুলে দিয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। মানুষ কি জানে ফুল কেন ফোটে! মানুষ শুধু এটাই জানে ফুলের সৌন্দর্য ও গন্ধ মানব হৃদয়কে বিমোহিত করে। সব ফুলই কি এমন! সূর্যমুখী ফুলের তেমন গন্ধ নেই। ফুলের রাজা-রানীও নয়। তবে দেখতে সুন্দর। চারদিকে বড় হলুদ পাপড়ির মধ্যে অনেক বীজ। ফুলটি দেখতেও সূর্যের মতো। এই ফুলের সঙ্গে সূর্যের এতটাই ভাব যে সারাক্ষণ সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্য ফিরিয়ে দেয় না। সূর্যের হাসিতেই সূর্যমুখীর হসি। এমন হাসি দিয়েই এই ফুল মানুষের জীবন রক্ষা করে। সূর্যমুখীর তেল মানব দেহের কোলেস্টেরল দূর করে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও এই তেলে ভিটামিন এ ডি ও ই মানব দেহের কল্যাণ বয়ে আনে। বিশ্বের দেশে দেশে সূর্যমুখী ফুলের বহুমুখী গুণাগুণ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলে ভ্রমর ও মৌমাছি উড়ে এসে বীজ ও চারধারে উড়ছে, এ নিয়েও নানা প্রশ্ন আসছে। এই ফুলে তো মধুরস পাওয়ার কথা নয়। তাহলে ভ্রমর কি খুঁজে পেল। উত্তর মেলে দ্রুত। সূর্যমুখীর বীজে যে তেল উৎপাদিত হয় তা জীববৈচিত্র্য ধরে রাখে। গত শতকের মধ্যভাগেও সূর্যমুখীকে নিয়ে এতটা হৈচৈ ছিল না। এই ফুল শুধুই বাগানের সৌন্দর্যের প্রতীক ছিল। অন্যান্য ফুল যেমন গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলি, শিউলি, গাঁদা ভালবাসার শুভেচ্ছা এবং প্রণয়ের ফুল হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এই ফুল ছাড়া ভালবাসার অর্ঘ্য হয় না। সেই হিসেবে সূর্যমুখী ফুল উপহার দেয়া হয় না। বেশি হলে কেউ স্মার্ট ফোনের ক্যামেরায় সূর্যমুখীর ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে দেয়। এই ফুলকে নিয়ে গান রচিত হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে অনন্ত প্রেমের ছবি ‘সানফ্লাওয়ার’ মুক্তি পেলে বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়। ওই ছবির একটি দৃশ্যে জিওভানা চরিত্রে হলিউড অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন ও এ্যান্টনিও চরিত্রে রাশিয়ার অভিনেতা মার্শাল মস্ত্রিয়ানি সূর্যমুখী বাগানে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরের একটি ঘটনায় ওই ফুলের সঙ্গে তুলনা করে যে বর্ণনা দেন তা মানব হৃদয়ে নাড়া দেয়। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে সূর্যমুখী ফুল নিয়ে ম্যালন ও সারওয়ে লীর কণ্ঠে গান বিশে^র মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ফুলের সৌন্দর্যের বর্ণনায় বাংলা গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন ‘সূর্যমুখী আর সূর্য দেখাবে না আয়রে আয়রে তোরা পুবের আকাশটাকে ঢেকে দে না।’ বর্তমানে বিশে^ সূর্যমুখী ফুলকে মানব কল্যাণের ফুল বলা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ফুলের বীজ থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফুলের বীজ সংগ্রহ করে মাড়াই করার পর তেল উৎপাদিত হয়। এই তেল প্যাকেটজাত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে দাম অনেক বেশি। সাধারণের নাগালের বাইরে। হৃদরোগীদের খাবারে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের অনেক বাড়িতে আগাম সতর্কতায় এখন রান্নায় সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তেল উৎপাদনে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। তবে তা এখনও খুব কম। এই ফুলের বড় বৈশিষ্ট্য হলো : বীজ বা চারা রোপণের পর বীজ বেড়ে উঠতে সময় লাগে না। গাছ দ্রুত বেড়ে ছেয়ে যায়। এই ফুল একবর্ষী। সূর্যমুখী ফুল ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার হয়। বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্মকালের মধ্যভাগে এই ফুল ফোটা শুরু হয়ে বর্ষার শেষ সময় পর্যন্ত থাকে। তবে সমভূমির কোন অঞ্চলে শীতের শেষে বসন্তকালে,উঁচু লালমাটির এলাকায় বর্ষাকালে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য হিসেবে চাষ করা হয়। বিশ্বে সূর্যমুখীর ৭০ জাত রয়েছে। জাতগুলো বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রায় ভরবছর কোন না কোন সময় ফোটে। তবে সকল জাতের সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল উৎপাদিত হয়। গাছের অন্যান্য অংশ পশু-পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সূর্যমুখী মানব কল্যাণে বড় ভূমিকা রাখায় বিশ্বের উন্নত দেশে সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনে। বাংলাদেশে সূর্যমুখী ফুল চাষ সম্প্রসারণে এখনও বড় উদ্যোগ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে চাষ হচ্ছে।
×