ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারতাজ আলীম

ইন্টারনেটের আদ্যোপান্ত

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ১৭ আগস্ট ২০১৯

ইন্টারনেটের আদ্যোপান্ত

হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি শুনতে পান ইন্টারনেট বলে কিছু নেই আর! ইন্টারনেট হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে! গোটা পৃথিবীটাই মনে হয় থমকে যাবে। অথচ ইন্টারনেট নামের জিনিসটার বয়স ৫০ এর কিছু বেশি। মাত্র অর্ধ দশকেই ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে পৃথিবীর এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যোগাযোগ থেকে শুরু করে যুদ্ধের ভূমি পর্যন্ত হয়ে উঠছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবিষ্কারক কে? একক কোন ব্যক্তিকে কৃতিত্ব দেয়া খুবই কঠিন। ইন্টারনেট গড়ে উঠেছে বহু মানুষের সাধনায়। আজকের ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ৬০ এর দশকে। সেখান থেকে এই শতাব্দীর সূচনা পর্যন্ত ইন্টারনেটের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার গল্পটা একনজরে দেখে নেয়া যাক তাহলে- ১৯৫৭- সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ পাঠানোর পরই কপালে ভাঁজ পড়ে আমেরিকানদের। সোভিয়েতদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তারাও মহাকাশ এবং যোগাযোগে গবেষণা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬৫- ARPA (The Advanced Research Projects Agency) এর যাত্রা শুরু। দুটি কম্পিউটারের মধ্যে ডাটা প্যাকেট আদান-প্রদান করতে সক্ষম হন এমআইটির গবেষকরা। প্রেরক থেকে কয়েক ভাগ হয়ে গ্রাহক যন্ত্রে এক হয়ে তথ্য প্রদর্শিত হতো। ১৯৬৮- ARPA (The Advanced Research Projects Agenc-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে বিবিএন প্ল্যানেট। এটার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত হামলায় যোগাযোগ ভেঙ্গে পড়লে বিকল্প কোন উপায়ে কিছুটা যোগাযোগ চালু রাখা। ১৯৬৯- যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয়। অক্টোবরের ২৯ তারিখ এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন ছাত্র লগিন করার চেষ্টা করে। তবে সিস্টেম ক্রাশ করায় চেষ্টা সফল হয়নি শেষ পর্যন্ত। তার পাঠানো মেসেজটি ছিল LO যেটা ছিল লগিন কোড। ১৯৭১- BBN এর রে স্যামুয়েল নেটওয়ার্ক ইমেইলকে উপস্থাপন ধরেন। ইন্টারনেটওয়ার্কিং ওয়ার্কিং গ্রুপ (INWG) প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৪: টেলিনেট (Telenet) নামে প্রথম ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) ARPANET এর বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৪: টিসিপি/ আইপির সূচনা। এটি আন্তঃযোগাযোগের একটি প্রটোকল যা ১৯৮৩ সাল থেকে ইন্টারনেটে যুক্ত প্রত্যেক ডিভাইসের সঙ্গে থাকে। একই সময়ে এফটিপি প্রোটকলেরও জন্ম হয় যা ডাউনলোডকে সহজ করে। ১৯৭৬: রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার প্রথম মেইল পাঠান। মার্কিন নির্বাচনে ইমেইলের ব্যবহার শুরু। ১৯৭৯ : খবর আর আলোচনা জন্য USENET এর জন্ম হয় ১৯৮১: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন CSNET প্রতিষ্ঠা করে। পরে এটি ARPAMET এর সাথে যুক্ত হয়। ৫৬ কেবিপিএস স্পিড ছিল এই নেটওয়ার্কে। ১৯৮২: TCP/ IP/ FTP এর ব্যবহার পূর্ণভাবে শুরু হয়। ইন্টারনেট নামটি প্রথমবারের মতো ব্যবহার হয় এই বছর। ১৯৮৩ : ওয়েবসাইটের নামকরণের জন্য ডোমেইন নেম সিস্টেম চালু হয়। এর আগে আইপি ঠিকানা দিয়ে সাইটে প্রবেশ করতে হতো যেমন ১১.০০.১১১.২২২। এর ফলে ওয়েব ঠিকানা মনে রাখা অনেক সহজ হয়। ১৯৮৪ : উইলিয়াম প্রথমবারের মতো সাইবারস্পেস (Cyberspace) শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৮৫ : বিশ্বের প্রথম রেজিস্টার্ড ডোমেইনের অধিকারী হয় পড়স। সিম্বলিক্স কম্পিউটার কর্পোরেশনের Symbolics.com ১৯৮৫- ৮৬ : আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) এর সুপার কম্পিউটারগুলোকে একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে শুরু করে। বিশ্বের নানা প্রান্তের সুপার কম্পিউটারগুলো এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। গবেষণা, শিক্ষা থেকে শুরু করে যোগাযোগের জন্যও এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হতো। এভাবেই শুরু হয় ইন্টারনেটের ছড়িয়ে পড়া। NSFNET নাম পায় এই নেটওয়ার্ক। ১৯৮৭: ইন্টারনেটে হোস্টের সংখ্যা ২০০০০ ছাড়ায়। Cisco নিয়ে আসে তাদের প্রথম রাউটার। ১৯৮৯ : প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ডায়াল আপ ইন্টারনেট নিয়ে আসে World.std.com ১৯৯০ : আমাদের অতি পরিচিত এইচটিএমএল (HyperText Markup Language, HTML)-এর সূচনা ঘটান টিম বার্নার্স লি। আজকের ইন্টারনেটের অবদান খুব বেশি বলে অনেক সময় তাকে আধুনিক ইন্টারনেটের জনক বলা হয়। ১৯৯১ : প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজার অবমুক্ত হয়। CERN নেটওয়ার্ক ব্রাউজ করা যেত এই ব্রাউজার দিয়ে। ১৯৯২ : CERN ব্রাউজার দিয়ে WWW ব্রাউজ করার সুবিধা দেয়া হয়। ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়তে এটি এক মাইলফলক ছিল। ১৯৯৩ : ওয়েবসাইটের সংখ্যা ৬০০ তে পৌঁছায়। বিভিন্ন নেটওয়ার্কে যুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২ মিলিয়নে। ১৯৯৪ : মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ৯৫ এর জন্য নিয়ে আসে ওয়েব ব্রাউজার। Netscape Communications Ges Navigator ব্রাউজার চালু হয়। হোয়াইট হাউস তাদের ওয়েবসাইট খুলে এই বছর। ১৯৯৫ : জাভা প্রোগ্রামিং ভাষার সূচনা। কম্পিউসার্ভ, আমেরিকা অনলাইন এ্যান্ড প্রোডিজি ইন্টারনেট একসেস দিতে শুরু করে। ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনের যাত্রা শুরু হয় এই বছর। ১৯৯৬ : ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৫ মিলিয়নে। এর মধ্যে ৩০ মিলিয়নই ছিল উত্তর আমেরিকার। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪% কম্পিউটার ইন্টারনেটে সংযুক্ত ছিল এই বছর। ১৯৯৭ : ইন্টারনেটে ট্রাফিক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায়। জুলাই মাসের ৮ তারিখ নাসা মঙ্গল গ্রহের একটি ছবির মুক্তি দিলে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটে ভিড় করে। ১৯৯৮ : গুগলের জন্ম হয়। ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের জন্য উন্মোচিত হয় ইন্টারনেট প্রটোকলের ষষ্ঠ ভার্সন (IPv6)। এটি ইন্টারনেটে ৩৪০ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ইউনিক এড্রেস ব্যবহারের সুযোগ দেয়। ১৯৯৯ : ১৫০ মিলিয়নে পৌঁছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ইন্টারনেট বেচাকেনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
×