মোরসালিন মিজান ॥ সারাদেশের মতো ঢাকায়ও উৎসবের আমেজ। সব মুখই হাসিমুখ। পরিবার-পরিজন নিয়ে নোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছেন সবাই। চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, থিমপার্ক, উদ্যান, সিনেমাহল, ফুডকোর্ট সর্বত্রই ভরপুর উপস্থিতি।
এবার ঈদের দিন বৃষ্টি থাকায় ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে লোকজন ঠিকই বের হয়েছেন। অন্যান্য বছর মানুষের মূল স্রোতটি নামে শিশুপার্কে। কিন্তু ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শিশুপার্কটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সেখানে নির্মাণ কাজ চলায় জাদুঘরমুখী হন দর্শনার্থীরা। ফলে বড় সমাগম ঘটে জাতীয় জাদুঘরে। ঈদের দিন খোলা রাখা হয়েছিল জাদুঘর। পরের দিনও খোলা ছিল। এখনও সেখানে উপচেপড়া ভিড়। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদ জানান, শুধু ঢাকা নয়, আশপাশের এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আসা দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খুলে রাখা জরুরী ছিল। তাই করা হয়েছে।
শ্যামলীর শিশুমেলা শিশুরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটির মালিকানা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের হাতে। ফলে রাইড সংখ্যা বেড়েছে। উন্নত হয়েছে। বর্তমানে ৪০টির বেশি রাইড। যে কোন বয়সীরা চড়তে পারছেন ১২টিতে। বাকিগুলো শুধু শিশুদের। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাসিরাশি আনন্দের ফোয়ারা। শিশুরা নিজেদের মতো করে এক একটি রাইড চড়ছে। বাবা মায়ের হাত ধরে বসেছে কেউ। কেউ একা একাই চড়ছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল অধিকাংশই শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসেছেন। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই শিশুরাজ্য খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, মূল শহরের বাইরে হলেও ঈদে চিড়িয়াখানায় ভিড় সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক সময়ের মতোই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে চিড়িয়াখানা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ থেকে ২ লাখ মানুষ জীব জন্তু দেখতে আসছেন বলে জানা যায়। থিমপার্কগুলো আরও দূরে। একটি আশুলিয়ায়। অন্যটি সাভারে। তাই বলে দর্শনার্থী পেতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। বরং ঢাকা থেকে বহু মানুষ সেদিকে ছুটছেন। আকর্ষণীয় সব রাইডে চড়ছেন তারা। সাঁতার কাটছেন। আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময়ের মধ্যে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব স্লাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ছেন দর্শনার্থীরা। যত খুশি সাঁতার কাটছেন। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি বলে জানায় থিমপার্ক কর্তৃপক্ষ।
কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত নন্দন পার্ক। জানা যায়, ঈদের দিন সকাল থেকেই এটি খোলা রাখা হয়েছে। এখানে আছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্ক। উভয় অংশেই আকর্ষণীয় সব রাইড। সাঁতারকাটাসহ জলে নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থলভাগে আছে উপভোগ করার মতো দুর্দান্ত কিছু রাইড। জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে। সেই প্যাকেজ নিয়ে আস্ত একটি দিন কাটিয়ে দেয়া যাচ্ছে।
এসবের বাইরে গোটা শহরেই এখন উৎসবের আমেজ। নতুন পাঞ্জাবি শাড়ি পরে অনেকেই টিএসসি এলাকায় আসছেন। চলছে ঈদ আড্ডা। হাতিরঝিলেও সেজেছে নতুন করে। উন্মুক্ত এই প্রাঙ্গণে বরাবরের মতোই ভিড় করেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনের আশপাশসহ খোলামেলা সব জায়গায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পুরনো ঢাকায় আছে লালবাগ কেল্লার মতো বড় পরিসর স্থাপনা। মুঘল স্থাপনা সঙ্গী হয়েছে ঈদ বিনোদনের। খোলা আছে সদরঘাটে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল।
সব মিলিয়ে দারুণ উৎসব। আনন্দঘন উদ্যাপন আরও কয়েকদিন চলবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: