ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কৃতজ্ঞ আমলার হঠাৎ অবসর

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১০ আগস্ট ২০১৯

 কৃতজ্ঞ আমলার হঠাৎ অবসর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হাসিম আমলা। আধুনিক ক্রিকেটে ভদ্রলোকের আরেক নাম। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। বিনয়ের অবতার। সর্বোপরি অনুকরণীয় এক চরিত্র। এবি ডি ভিলিয়ার্স, ইমরান তাহির, সর্বশেষ ডেল স্টেইনদের ‘আংশিক’ অবসর ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন কারণে একাধিক প্রশ্নের জন্ম নিয়েছিল। প্রত্যেকে শর্টার ভার্সনে খেলা চালিয়ে যেতে চাইছেন। সেখানে কোনরকম ইঙ্গিত না দিয়ে সকল ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানো আমলাকে ঘিরে আরও বড় প্রশ্ন, বড় বিতর্ক তৈরি হতে পারত। কিন্তু ধর্মপ্রাণ এ মানুষটি সেটি হতে দেননি। ৩৬ বছর বয়সী তারকা উইলোবাজ বরং বিদায় বেলায় ভালবাসা ও শান্তির বারতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেড় দশকের ক্যারিয়ারে যা পেয়েছেন তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সতীর্থ, ম্যানেজমেন্ট, ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার পাশে থাকার জন্য। সর্বোপরি হঠাৎ অবসর নেয়া আমলার বক্তব্য বিশ্বজুড়ে অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আবেগপ্রবণ হয়েছেন বর্তমান ও সাবেক সতীর্থরা। ‘প্রথমেই সমস্ত অর্জনের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যিনি আমাকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এমন একটি যাত্রার জন্য মনোনীত করেছেন। এ যাত্রা আমার কাছে আনন্দ ও অগ্রাধিকার ব্যতীত আর কিছু ছিল না। অবিশ্বাস্য এ যাত্রায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। অনেক বন্ধু পেয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা ভ্রাতৃত্বের ভালবাসা ভাগাভাগি করতে পেরেছি। যেটাকে আমরা প্রোটিয়াফায়ার বলি’ বলেন আমলা। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমার জন্য প্রার্থনা করায়। তাদের ভালবাসা, সমর্থন ও ছায়া আমার ওপর থাকায় প্রোটিয়া সূর্য মাথার ওপর নিয়েও বছরের পর বছর খেলতে পেরেছি। অবিশ্বাস্য এই পথচলার জন্য আরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এজেন্ট, সতীর্থ ও সাপোর্টিং স্টাফদের। আপনাদের সকলের প্রতি অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ।’ আমলা বলেন, ‘ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই। যারা আমার কঠিন সময়ে পাশে ছিল। আর ভালবাসার নিদর্শন স্থাপন করে সাফল্যের সময়ে একসঙ্গে উদযাপন করেছেন। ধর্মভীরু আমলা আরও যোগ করেন, ‘বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডকে। প্রধান নির্বাহী মিঃ থাবাং মোরোয়ি ও প্রশাসনিক টিমকে কখনও ভুলব না। সকলের সহযোগিতায় ক্যারিয়ারে আমি যে সুযোগ পেয়েছিলাম সেটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। লাভ এ্যান্ড পিচ।’ ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে আমলা মোট ৩৪৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার। ৫৫ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ৮৮ হাফ সেঞ্চুরি। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে তার ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড তার দখলে। ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় হাশিম আমলার। ওয়ানডেতে অভিষেক হয় ২০০৮ সালে, বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। আর ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনে টি২০ অভিষেক। ২০০৪ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ১২৪ টেস্ট খেলেছেন। রান করেছেন ৯ হাজার ২৮২। ২৮ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪১ হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। সর্বোচ্চ স্কোর অপরাজিত ৩১১। ২০০৮-২০১৯ পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন ১৮১। রান করেছেন ৮ হাজার ১১৩। ২৭ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩৯টি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ১৫৯। ওয়ানডেতে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরেও ছিলেন অনেকদিন। তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে থাকল বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি। সে ম্যাচে ৮০ রানে অপরাজিত থাকলেও পুরো বিশ্বকাপে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন হাশিম আমলা। ৭ ম্যাচে ২০৯ রান করেন দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা। একসময় কোহলির প্রতিটি হাজার রানের মাইলফলক দখলে নেয়া আমলা ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ করলেন ৮১১৩ রান নিয়ে। ২৭ সেঞ্চুরি ও ৪৯.৪৬ গড় নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টি২০ খেলেছেন ৪৪টি। রান করেছেন ১ হাজার ২৭৭। ৮ হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। সর্বোচ্চ সংগ্রহ অপরাজিত ৯৭। আমলার অবসরের সিদ্ধান্ত শোনার পরে তার এক সময়ের সতীর্থ সাবেক তারকা পেসার শন পোলক টুইট করেন, ‘কী অসাধারণ এক ক্রিকেট অধ্যায়ের অংশ হয়ে থাকলে তুমি। সেই নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে কিংসমিডে তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। ওয়েল ডান।’ বর্তমান অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসিসের অভিব্যক্তি, ‘আমলার সঙ্গে খেলতে পারাটা ছিল ভীষণ গর্বের। তার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি।’ আধুনিক প্রোটিয়া ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান আমলা অবশ্য আরও কিছুদিন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাবেন।
×