ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট নিয়ে দ্বন্দ্বে যাত্রীরা

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২৮ জুলাই ২০১৯

চট্টগ্রামে ট্রেনের  অগ্রিম টিকেট  নিয়ে দ্বন্দ্বে যাত্রীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আবারও মোবাইল এ্যাপসে ঈদ যাত্রার ট্রেনের অগ্রিম ৫০ ভাগ টিকেট বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত মঙ্গলবার ঢাকায় আর গত বুধবার চট্টগ্রামে মিডিয়া কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ২৯ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে মোবাইল এ্যাপসে আর সকাল ৯টা থেকে নির্দিষ্ট স্টেশনের কাউন্টারে পাওয়া যাবে ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকেট। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ঢাকা থেকে রংপুরে আরেকটি নতুন ইন্টারসিটি ট্রেন চালু করার ঘোষণাও দিয়েছেন মন্ত্রী। তবে এই ট্রেনের কোচ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা মিটারগেজ কোচ দিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, আমদানি করা ও খালাসের অপেক্ষায় থাকা এসব কোচ চলন ক্ষমতা পরীক্ষা ছাড়াই কি চলাচল শুরু করবে। কারণ লোডিং ও স্পীড পরীক্ষা ছাড়া এসব কোচ দিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হলে যাত্রীরা ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত রেলের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ চুপচাপ বসে আছে। এদিকে ধন্দে আছে যাত্রীরা। কারণ গত ঈদে এ্যাপসে মিলছে না টিকেট এমন অভিযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। পরে এ্যাপসের বিক্রিত টিকেট কাউন্টারে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল বাণিজ্যিক বিভাগ। রেলের প্রতিটি ট্রেনের স্টেশনে টাঙ্গানো পরিসংখান ছক অনুযায়ী কাউন্টারেও স্বল্প সংখ্যক টিকেট বিক্রির নির্দেশনা ছিল। এমনও স্টেশন রয়েছে যেখানে মাত্র এক ডিজিটের টিকেট বিক্রি করতে বলা হয়েছে। ফলে ট্রেনের টিকেট ক্রেতা বা যাত্রীদের মাঝে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে। এ্যাপসে দফায় দফায় টিকেট বুকিং দিতে গিয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স কেটে নিলেও টিকেট মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, এবারও মোবাইল এ্যাপসে যেসব টিকেট থেকে যাবে সেগুলো ৫ দিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম শেষ হলে কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি ট্রেনে হাতে গোনা ৫০/৬০ জন টিকেট কেনার পর আসন শূন্য বলে ডিসপ্লেতে দেখানো হয়। কারণ মোবাইলে ৫০ ভাগ টিকেট বরাদ্দের যে রেল সেবা এ্যাপস চালু করা হয়েছে তাতে আসন প্রত্যাশীরা টিকেট পাচ্ছেনা। অপরদিকে, বাকি ৫০ ভাগ টিকেটের মধ্যে প্রতিবন্ধী কোটায় ৫ ভাগ টিকেট সংরক্ষিত থেকে যায়। বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী জানিয়েছেন, আজ রবিবার থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে দৃশ্যপট পরিবর্তন হবে। আন্তঃনগর ট্রেনের আসন অনুযায়ী কাউন্টারে ৫০ ভাগ বিক্রয়যোগ্য টিকেটের পরিসংখ্যান গত ঈদের ন্যায় হবে। জানা গেছে, সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রায় ৮২৩টি টিকেটের বিপরীতে মাত্র ২৮৮টি টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত রয়েছে কাউন্টারের সামনে সাঁটানো ব্যানারে। বাকি থাকল আর ৬৫ ভাগ টিকেট। ৫০ ভাগ টিকেট মোবাইল এ্যাপসে আর ৫ভাগ প্রতিবন্ধীসহ মোট ৫৫ ভাগ টিকেট সাধারণের নাগালের বাইরে এমন অভিযোগ যাত্রীদের। ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪১৬টি টিকেট, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪০৭টি টিকেট, তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসে ৩০৫টি, ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪৯৩টি টিকেট সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে ২৭৮টি টিকেট, ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি ট্রেনে ৩৪৩টি টিকেট, চট্টলা এক্সপ্রেসে ২৫৬টি টিকেট, চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪৬৪টি টিকেট ও সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ৩৭৪টি টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে কাউন্টার থেকে। মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে হলে ‘রেল সেবা ’ নামের এ্যাপস ডাউনলোড করতে হবে। এ্যাপস ডাউনলোড হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এরপর আর এগুচ্ছে না এমন অভিযোগ ছিল গত ঈদের যাত্রীদের। অথচ একসঙ্গে ৫শ’ যাত্রী এই এ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট কিনতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত ১ মে রেলভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মন্ত্রী। অথচ এ্যাপস খোলাই যাচ্ছিল না কিভাবে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টিকেট ক্রেতার হাতে চলে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মোবাইলে টিকেটের সমপরিমাণ ব্যালেন্স না থাকলে ওই ম্যাসেজ বাতিল বলে গণ্য হওয়ার কথা কিন্তু ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে ঠিকই কিন্ত টিকেট মিলেনি এমন অভিযোগ যাত্রীদের। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন থেকেই বিড়ম্বনা ছিল মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি কার্যক্রমে। আর যাদের এন্ড্রয়েড সেট নেই তারা টিকেট কেনার চেষ্টাও করতে পারেনি। এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি মোবাইল কল রিসিভ করেননি। প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে কল দেয়া হলে তিনি মোবাইলে কল লক করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×