ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

পিপলস লিজিং বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১১ জুলাই ২০১৯

পিপলস লিজিং বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় চরম সঙ্কটে থাকা পিপলস লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়ে এ বিষয়ে আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অন্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক রয়েছে বলেও জানানো হয়। আতঙ্কিত আমানতকারীদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পিপলসের অর্থ ফেরতের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও আরেক নির্বাহী পরিচালক মোঃ শাহ আলম। ব্যাংক সূত্র জানায়, আমানতকারীর অর্থ ফেরতসহ দায়-দেনা কীভাবে মেটানো হবে, তা আদালতের আদেশে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের উদ্যোগ এই প্রথম। সূত্র আরও জানায়, পিপলস লিজিংয়ে নানা অনিয়ম, বড় অঙ্কের খেলাপী ঋণ এবং চরম অর্থ সঙ্কটের কারণে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। ওই চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২(৩) এবং ২৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। সম্মতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২৬ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়। চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আটকে থাকা আমানতের পরিমাণ, অনিয়মের ধরন, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ও মাসিক বেতন-ভাতার পরিমাণ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ে মোট আমানত রয়েছে দুই হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোন নগদ টাকা তাদের নেই। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে। আর গুলশান ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা রয়েছে। পিপলস লিজিংয়ে এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপী দেখানো হয়েছে ৭৪৮ কোটি টাকা, যা ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের পর থেকে কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এর মোট শেয়ারের ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে স্পন্সর ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে। এদিকে বুধবার সকাল থেকেই পিপলস লিজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে টাকা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন শত শত বিনিয়োগকারী। এমনকি রিজাইন লেটার জমা দিতে এসে ও ফিরে যেতে দেখা গেছে এক কর্মকর্তাকে। শামীম রেজা নামের এক কর্মকর্তা জানান, গণমাধ্যমের কাছে বলার মতো আমাদের কিছু নেই। কারণ আমাদেরই এখন চাকরি নেই। আমরা আছি আতঙ্কের ভেতর। কোম্পানির অবসায়নের বিষয়টা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর থেকে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কেউ উপস্থিত হচ্ছেন না অফিসে। অন্যদিকে টাকা ফেরত নিতে এসে মোহাম্মদ হানিফ নামের একজন আমানতকারী জানান, আমি মোট ৮৪ লাখ টাকা এখানে জমা রেখে ছিলাম। ঈদের আগে ১০ লাখ টাকা উঠাতে পেরেছি। কিন্তু তারপর থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও বাকি টাকা আর ফিরে পাচ্ছি না। এটাকে এখন ফেরত পাব কিনা এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি আমি সহ আমার পরিবার। ২০১৭ সাল থেকে স্বল্প মেয়াদে টাকা জমা রাখছিলেন তিনি। ১১ শতাংশ মুনাফা পাওয়ায় পিপলস লিজিং কে বেছে নেন হানিফ। এই পর্যায়ে এসে সাধারণ আমানতকারীদের টাকা সবার আগে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তার মতো সকল আমানতধারীদের। নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি মোহাম্মদ মনজুর মোর্শেদ এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমন্বিতভাবে ৯ কোটি টাকা রাখা হয়েছে পিপলস লিজিংয়ে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা উঠাতে পারলেও বাকিগুলো আটকে রয়েছে। অন্যান্যদের মতো আমার মনেও টাকা ফেরত না পাবার সংশয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।
×