ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

যুগান্তকারী রায় সরকারের জন্য গাইডলাইন ষ দেয়া হয়েছে ১৭ দফা নির্দেশনা

আদালতের রায়ে বেঁচে থাকার অধিকার পেল নদী ॥ দখল দূষণ ভরাটে মরণ দশা

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৬ জুলাই ২০১৯

 আদালতের রায়ে বেঁচে থাকার অধিকার পেল নদী ॥ দখল দূষণ  ভরাটে মরণ  দশা

শাহীন রহমান ॥ আদালতের রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা উল্লেখ করায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ‘বেঁচে থাকার অধিকার পেল নদী’। বলা হয়ে থাকে প্রকৃতির রাজপথ হলো নদী। যখন দেশে কোন রাস্তাঘাট বা চলাচলের উপযোগী কোন ব্যবস্থা ছিল না তখন মানুষের চলাচলের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল দেশের নৌপথ। কিন্তু নদী দখল দূষণ এবং উজান থেকে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে আজ দেশের নদ-নদীগুলোর মরণ অবস্থা হয়েছে। মরণ থেকে নদী বাঁচাতে উচ্চ আদালত একের পর এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই রায় এখন নদী রক্ষায় সরকারের জন্য নীতিমালা বা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। তারা আদালতের এই রায়কে যুগান্তকারী এবং ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি নদীকে জীবন্ত সত্তা উল্লেখ করে হাইকোর্টের এক পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে মানুষ হত্যা যে অপরাধ নদী হত্যা সেই অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা হাইকোর্টের এই রায়কে যুগান্তকারী উল্লেখ করে বলছেন, নদী রক্ষায় ভারত গঙ্গানদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইউরোপেও নদী রক্ষায় এক ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারাও নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। অবশেষে বাংলাদেশেও নদী রক্ষায় আদালত জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। আদালতের এই রায়ের কারণে নদী রক্ষায় সরকারকে এখন আইন পরিবর্তন করতে হবে। আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় নদীর বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা হলো আদালতের রায়ের মাধ্যমে। দখল, ভরাট ও দূষণ এখন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। আদালত তার রায়ে নদী কমিশনকে নদী রক্ষায় আইনগত অবিভাবক হিসেকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে এখন সব মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর নদী কমিশনকে সহায়তা করতে আইনগতভাবে বাধ্য। যা আগে ছিল না। এটা রায়ের উল্লেখযোগ্য দিক। বিশেষজ্ঞরা নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের এই রায়কে উল্লেখ্যযোগ্য এবং ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার সব বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করেছে। কিন্তু নদী রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়নি। সেখানে আদালত স্ব-উদ্যোগী হয়ে যে নীতিমালা দিয়েছে তা নদী রক্ষায় গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। সরকার যদি আদালতের এই নীতিমালা বাস্তবায়ন না করে তাহলে আবারও সুযোগ থাকবে আদালতের দ্বারস্ত হওয়ার। তারা বলেন, নদী রক্ষায় আদালতের যে ভূমিকা তা ইতিবাচক। এতে করে নদী রক্ষায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। দখল দূষণের অত্যাচারে নদী যখন জর্জরিত ঠিক তখনই নদী রক্ষায় আদালত যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা একটা ভাল দিক। আদালতের রায়ের যথাযথ বাস্তবায়ন না হলেও জনগণের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়বে। আদালতের রায়ের কারণে নদী রক্ষায় মানুষ আজ অনেকটা সচেতন হয়েছে। যদিও নদীকে আর আগের অবস্থ্য়া ফিরে নেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু আদালতের এই রায় নদী রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন। পরিবেশ সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন বলেন, নদী রক্ষায় আদালতের এই রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন নদীর রক্ষায় কোন নীতিমালা ছিল না। আদালত তার রায়ে সরকারকে একটি নীতিমালা বা গাইডলাইন দিয়েছে। এরপরও যদি সরকার নদী রক্ষায় উদ্যোগী না হয় তবে আদালতের রায় বাস্তবায়নে আদালতের দ্বারস্ত হওয়ার সুযোগ হলো এই রায়ের মাধ্যমে। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় এর আগে ২০০৯ সালেও একবার গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছে আদালত। সেই রায় বাস্তবায়ন হলে আজ এই রায়ের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু সরকার আগের রায় বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে তারা আবার রায় প্রদান করেছে, সঙ্গে একটি গাইডলাইন বা নীতিমালা দিয়েছে। এতে প্রমাণ হলো দেশের সরকার এবং রাজনীতিবিদরা নদী রক্ষায় নীতি ও আইন করার বিষয়ে কতটা উদাসীন ছিল। ২০০৯ সালে যে রায় হয়েছিল সেখানে নদী রক্ষায় আদালত কোন নীতিমালা প্রদান করেনি। কিন্তু এবার সেই ঘাটতিও পূরণ হলো। আশাকরি এবার সরকার আদালতের এই রায় বাস্তবায়ন করতে নদী রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, নদী রক্ষায় দেশে যথেষ্ট আইন রয়েছে। বিশেষ করে বন্দর এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ নদীর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। হাতে যথেষ্ট শক্তিশালী আইন রয়েছে। আবার পরিবেশ আইনে নদী রক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সমস্যা হলো এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ হলে নদীরগুলোর এই মরণদশা হতো না। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় জবাবদিহিতার অভাব যেমন রয়েছে। আবার যাদের ওপর এই দায়িত্বভার রয়েছে তারাও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। আইন প্রণেতারা সংসদে আইন প্রণয়ন করেই শেষ দায়িত্ব করেন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হলে নদী এত দখল বা দূষণ করা সম্ভব হতো না। গোটা বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর জালের মতো বিছিয়ে আছে নদী। তাই বাংলাদেশকে আরেক নামে ডাকা হয় নদীমাতৃক বাংলাদেশ। কিন্তু কাজীর গরু গোয়ালে নেই কথার মতো আজ নদীর অবস্থা দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন একদিকে মানুষের অত্যাচারে নদী দখল দূষণের ফলে নদীগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। অপর দিকে উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহার এবং পলি পড়ার কারণে নদীগুলো দ্রুত মরণের পথে রয়েছে। এই অবস্থায় নদী রক্ষায় আগে কেউ যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেনি। একমাত্র আদালতই নদী রক্ষায় একের পর এক কঠোর রায় প্রদান করে যাচ্ছেন। এর ফলে জনগণ ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠছে। তারা বলছেন, শিল্প বর্জ্যরে দূষণ, নদীর অবৈধ দখল, অতিরিক্ত পলি জমে ভরাট হয়ে আজ দেশের অধিকাংশ নদ-নদী হুমকির মুখে পড়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদনদীর ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর শঙ্কা। উজানে সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরি করে এক তরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে নাব্য সঙ্কট। প্রতিবছর নদীগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১.২ বিলিয়ন টন পলি বহন করে নিয়ে যায়। এই অতিরিক্ত পলি জমে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার চার নদীসহ শহরের বুক দিয়ে বয়ে চলা অধিকাংশ নদ নদী শিল্প বর্জ্যরে দূষণে নদীর প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর বুকেই চলছে অবৈধ দখলও। বাংলাদেশে নদনদীর প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যে গরমিল রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবমতে বাংলাদেশে শাখা প্রশাখা মিলিয়ে নদীর সংখ্যা ৩১০টি হবে। তবে নদী রক্ষায় গঠিত কমিশনের হিসাব মতে দেশে প্রধান নদনদীর সংখ্যা রয়েছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৫৪টি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাকি ৩টি নদী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে নদনদীর প্রকৃতি সংখ্যা যাই হোক না কেন গত ২শ’ বছরে দেশের নদনদীর গতি প্রকৃতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে আজ অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। অনেক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। অনেক নদী দখল ও দূষণের কবলে পড়ে তার বৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলেছে। দেশ স্বাধীনের পর বিআইডব্লিটিআইয়ের পক্ষ থেকে যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে বাংলাদেশে নৌপথের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। অথচ সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে দেশের নৌপথের পরিমাণ দেখানো হচ্ছে মাত্র চার হাজার কিলোমিটার। তাও আবার শুষ্ক মৌসুমে এর পরিমাণ আরও নিচে নেমে আসছে। নদী পথ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো ১.২ বিলিয়ন টন পলি বহন করছে। এই অতিরিক্ত পলি ভরাট হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য সঙ্কট তৈরি করছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে পাড় উপচে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। আবার একই কারণে শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে নাব্যতা থাকে না বললেই চলে। পলি পড়ে ভরাট হওয়ার কারণে শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুম ছাড়া এসব নদীতে পানি থাকে না। যদিও সরকার বলছে তারা নদী উদ্ধারের জন্য ড্রেজিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো ড্রেজিং করা এত মাটি কোথায় ফেলা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নামকাওয়াস্তে টিকে রয়েছে বড় বড় অনেকগুলো নদীপথ। আর ছোট ছোট বহু শাখা নদী এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার অনেক বিলুপ্তির পথে। তারা বলছেন, নদ-নদীর এই অপমৃত্যুর কারণে বাড়ছে নদী ভাঙ্গন, জলোচ্ছ্বাস, কমছে আবাদি জমি, বাড়ছে জলাবদ্ধতা। নদী ভিত্তিক অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এতে করে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়। বাস্তুহারা ও অভিবাসী হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে উপকূলীয় ১২টি জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ অভিবাসী হয়ে যেতে পারে। তারা বলছেন, নদীর এসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে নদী দূষণও দখলের মতো বড় একটি সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার চার নদী দূষণ ও দখলের কবলে পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে অস্তিত্ব। দেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা। চার শ’ বছর আগে এই নদী তীরেই গড়ে উঠেছিল ঢাকা শহর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিন যে নদীকে ঘিরে ঢাকা মহানগরী গড়ে উঠেছিল সেই নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীর দুই কূল ঘেঁষে অবৈধভাবে দখলের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক স্রোতে মিশে বুড়িগঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটা ধলেশ্বরীর শাখা বিশেষ। মূলত ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি। কলাতিয়া এর উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে উৎসমুখটি ভরাট হওয়ায় পুরানো কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজধানী ঢাকা থেকে অল্প দূরত্বের শহর নারায়ণগঞ্জ। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর থাকায় শহরটির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদী বহুদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীটি সারা বছরই নৌ চলাচলের উপযোগী থাকে। কিন্তু এই নদীর পানি এখন এতটাই দূষিত যে, সেখানে জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞরা শীতলক্ষ্যার এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন এর শিল্প বর্জ্যকে। শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কারখানার বর্জ্য এই দূষণের কারণ। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বাড়িঘরের তরল বর্জ্যও আসছে নদীতে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকলে বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়বে নদীর তীর ঘেঁষে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। আর সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত হচ্ছে বিভিন্ন তরল বর্জ্য। এ অবস্থায় উচ্চ আদালত দেশের নদী রক্ষায় ২০০৯ সালে একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। ওই রায়ে আদালত নদী রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী চার নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। নদী সীমানার মধ্যে জমে থাকা বালু, মাটি, ভাঙ্গা ইট বা সুরকি অপসারণ করতে হবে, চারটি নদীর তীরে হাঁটার পথ নির্মাণ করতে হবে। একইসঙ্গে করতে হবে বনায়নও। ভূমি মন্ত্রণালয় নদীগুলোর তীরবর্তী ৫০ গজ জায়গা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে হস্তান্তর করবে। ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতে প্রয়োজনীয় খনন কাজ করবে। যমুনা নদী থেকে এই চার নদীতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য পাঁচ বছর কর্ণপাড়া, পুংলি ও টঙ্গী এলাকার খালগুলো নিয়মিত খনন করতে হবে। বংশী ও ধলেশ্বরী নদী নিয়মিত খনন করে রক্ষা করতে হবে। সরকারের পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, ভূমি জরিপ অধিদফতর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আদালতের এই রায় আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দ্বিতীয় দফায় আবারও নদী রক্ষায় আদালত রায় প্রদান করল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের রায় কার্যকর হলে দ্বিতীয় দফায় রায় প্রদানের দরকার হতো না। তবে ভাল দিক এই যে দ্বিতীয় দফায় যে রায় প্রদান করেছে আদালত সেখানে নদী রক্ষায় এবার সরকারকে নীতিমালা প্রদান করে সরকারের এই বিষয়ে যে অনীহা ছিল, তার অসারতা প্রমাণ করেছে। আদালত দ্বিতীয় দফায় নদী রক্ষায় এবার সরকারকে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের ফলে নদী এবার তার বেঁচে থাকার অধিকার পেল।
×