ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

খামেনির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জের

বন্ধ হলো কূটনৈতিক পথ

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৬ জুন ২০১৯

বন্ধ হলো কূটনৈতিক পথ

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ সে দেশের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরান সাফ জানিয়েছে, এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল। সোমবার ট্রাম্প প্রশাসন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ ইরানের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। খবর গার্ডিয়ান, বিবিসি ও আল-জাজিরা অনলাইনের। মঙ্গলবার এক টুইটার বার্তায় ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের সব কূটনৈতিক পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া প্রশাসন বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত সকল আন্তর্জাতিক কর্মকৌশল নষ্ট করছে। খামেনির ওপর নিষোধাজ্ঞা বিষয়ে আব্বাস মৌসাভি বলেন, তিনি (খামেনি) ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ, রাষ্ট্রীয় যেকোন বিষয়ে তার কথাই শেষ কথা। তাই খামেনির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখার প্রশ্ন আসে না। ইরানে সামরিক হামলার অনুমোদন দিয়ে আকস্মিকভাবে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার ইরানের বিপ্লবী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে। এর প্রতিউত্তরে বৃহস্পতিবার রাতেই ওয়াশিংটন ইরানের ওপর হামলার পদক্ষেপ নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত থেকে আকস্মাৎ সরে আসে। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান চরম ভুল করেছে। দেশটিকে এর চড়ামূল্য দিতে হবে। ড্রোন ভূপাতিত করা বিষয়ে ইরানের দাবি, আমাদের কাছে নিরপেক্ষ প্রমাণ আছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় এটিকে ভূপাতিত করা হয়। ইরানের ওপর এই নয়া নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সোমবার ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞাটি আরোপ করা হয়েছে, তবে যে কোন কারণেই হোক এটি আরোপ করা হতোই। খামেনির পাশাপাশি ইরানের নৌবাহিনী, এয়ারোস্পেস ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) আট জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নয়া এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ইরানের নেতৃবৃন্দকে তাদের আর্থিক উৎসগুলোতে প্রবেশ করতে না দেয়া, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করা আটকানো অথবা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কোন সম্পদ থেকে থাকলে সেখানে কার্যক্রম চালাতে না দেয়া। গতবছর ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর তেহরানের ওপর পুরোনো সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করাসহ নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। তারপর থেকেই ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। সোমবার অপর এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না। তবে আমরা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হতে দিতে পারি না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেন, এই নয়া পদক্ষেপে কোটি কোটি ডলারের ইরানী সম্পদ জব্দ করা যাবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের কমান্ডার, দেশটির আমলাতন্ত্র ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে দেখভাল করে তাদেরকেই এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে খামেনির অনেক সম্পদ আছে যা বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সহায়ক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ধারণা এ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
×