ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ স্বামী-দেবরের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে গৃহবধূ

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৪ জুন ২০১৯

 পুলিশ স্বামী-দেবরের  বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে গৃহবধূ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ১৩ জুন ॥ শ্রীবরদীতে যৌতুক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ স্বামী-দেবরসহ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন লায়লা আরজুমান শান্তি নামে এক গৃহবধূ (৩২)। বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার ধার্য তারিখেও প্রতিবেদন দাখিল না করে সময় প্রার্থনা করেছে অধিকতর তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই। একই দিন তদন্তে অসহযোগিতা ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বাদীপক্ষ পিবিআই থেকে তদন্ত পরিবর্তনের আবেদন জানালে আগামী ৩০ জুন তা শুনানির তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। সেই সঙ্গে একইদিন মামলার পরবর্তী তারিখসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য রাখা হয়। ওই চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান আসামি নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী রফিকুল ইসলাম (৩৫) নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল। আর সহযোগী আসামি ২ দেবর জামালপুরের ইসলামপুর থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল হামিদুল ইসলাম (৩০) ও শেরপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাইট গার্ড আমিনুল ইসলাম (৩৩)। এদিকে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় থানা, কোর্ট-কাচারি ও পিবিআইসহ নানা জায়গায় একমাত্র সন্তান রওনক আহমেদ শ্রাবণ (১১) কে নিয়ে দীর্ঘ ৫ মাসের অধিক সময় ধরে ঘুরে হতাশ হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই গৃহবধূ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের আদালত অঙ্গনে অনেকটা বিপর্যস্ত অবস্থায় কথা হয় ওই গৃহবধূর সঙ্গে। ওইসময় তিনি আবেগতাড়িত হয়ে জানান, মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীবরদী থানার এসআই আবদুল মোতালেবের দেয়া পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনাল গত ১৫ এপ্রিল নারাজিমূলে প্রত্যাখ্যান করে জামালপুরের পিবিআইকে অধিকতর তদন্তপূর্বক পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেয়। ওই আদেশ সমেত মামলাটি সেখানে যাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সঙ্গে কয়েকজন সাক্ষী নিয়ে সাক্ষাত করেন। বিষয়টি পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকারকেও অবহিত করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তার মনোভাব পজেটিভ মনে হলেও এখন তিনিও আগের কর্মকর্তার মতোই আচরণ করছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী সঙ্গে থাকা পুত্র শ্রাবণ, প্রতিবেশী মিস্টার আলী ও জরুরী সেবা ৯৯৯ এ অবহিত করার প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে এগিয়ে যাওয়া শ্রীবরদী থানার তৎকালীন এসআই আরিফুল ইসলামসহ আমার মানীত সাক্ষীদের জ্ঞিজাসাবাদ এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি কেবল আসামিদের এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কথা শুনছেন। এ বিষয়ে আইজিপিসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আসামিরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, পুলিশ ও সরকারী চাকরিজীবী বলেই পার পেয়ে যাবেন? আমি সন্তানসহ স্বামী-সংসার করতে চাই, নয়তো ন্যায়বিচার। এরপরও কি আমাকে বারবার হারতে হবে? এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার দে কৃষ্ণ জানান, বাদীপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকার পরও থানা পুলিশের তদন্তে মামলাটির অপমৃত্যু ঘটানোর সমূহ চেষ্টা করা হয়েছে। তার মতে, বর্তমান সময়ে পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশী তদন্ত যতটা সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে হওয়া উচিত, এক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটলে কোন বাদীপক্ষই ন্যায়বিচার পাবে না। কাজেই এ চাঞ্চল্যকর মামলার অধিকতর তদন্তে পিবিআই কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও সতর্ক হবেন বলেই আশা করছি।
×