ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত মেরামত দাবি

খুলনায় বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৩০ মে ২০১৯

  খুলনায় বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের সময় পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভরা জোয়ার বা সামান্য জলোচ্ছ্বাসেই দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছাসহ উপকূলীয় এলাকার নড়বড়ে-জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দাকোপ ও কয়রার একাধিক স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল। স্থানীয়ভাবে কোনমতে তা মেরামত করা হয়। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার মানুষ ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। বর্ষকালের আগেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পাউবো খুলনা ডিভিশন-১-এর অধীন ৪৪১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া, ডুমুরিয়া উপজেলার চাঁদগড়, তেরোখাদা উপজেলার পারহাজীগ্রাম ও মোমিনপুরে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক। পাউবো খুলনা ডিভিশন-২-এর ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্নস্থানে ১১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০টির অধিক পয়েন্টে জরুরী মুহূর্তে মেরামত করা প্রয়োজন। এজন্য উর্ধতন কর্তপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়রা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলীর আওতাধীন ১৪/১ ও ১৩-১৪/২ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। এ দুইটি পোল্ডারের বাঁধের বহু স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা জানান, উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় ষাটের দশকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু একশ্রেণীর চিংড়ি চাষী দীর্ঘদিনের পুরনো বাঁধ যথেচ্ছভাবে কেটে এবং বাঁধের ভেতর ছিদ্র করে মোটা পাইপ ঢুকিয়ে ঘেরে লবণাক্ত পানি উত্তোলন করায় বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় বর্ষা মৌসুমে এসব বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে থাকে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনার দাকোপ ও কয়রাসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মূল বাঁধের ব্যাপক অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু মেরামতের ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থা না নেয়ায় জোয়ারের সময় পানির অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হলেই বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। বর্তমানে নদ-নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে উৎকণ্ঠায় রয়েছে এলাকাবাসী। পাউবো কর্মকর্তারা জানান, বাঁধের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ পেলে বর্ষার আগেই বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত করা হবে। আগামীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। কোথাও কোথাও লম্বালম্বিভাবে বাঁধের অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। আবার কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হওয়ায় রিংবাঁধ দেয়া হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল জেলার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের ঘাটাখালী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তিন-চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে মাটি দিয়ে বাঁধ ঠিক করেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে গত ৪ মে দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা বাজার এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পশুর নদীর পানিতে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়। তার কয়দিন আগেও ওই এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে যায়। গ্রামবাসী বাঁধ মেরামত করে। স্থানীয়রা জানায়, কয়রা উপজেলার দুটি পোল্ডারের আওতায় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং, খাসিটানা, ছোট আংটিহারা, গোলখালি, মাটিয়াভাঙ্গা, চরামুখা, দক্ষিণ বেদকাশী ও মেদের চর, উত্তর বেদকাশির গাতিরঘেরি, শাকবাড়িয়া, গাব্বুনিয়া, পুটিঘেরী, গাজীপাড়া, কাশিরহাট, কাটমারচর, কাটকাটা ও পাথরখালি ও কয়রা ইউনিয়নের গোবরা, হরিণখোলা, গুড়িয়াবাড়ি স্লুইচ গেট, ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তহশীল অফিস। মহারাজপুর ইউনিয়নের লোকা, পূর্ব মঠবাড়ি, দশাহালিয়া, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বানিয়াখালি, হড্ডা খেয়াঘাট এলাকা, তেঁতুলতলারচর ট্রলার ঘাট এলাকার বাঁধের অবস্থা মারাত্মক খারাপ। জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা না হলে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় মারত্মক সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে খুলনা-৬ (কয়রা ও পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রা উপজেলার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য ভরা জোয়ারের সময় এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
×