ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় মাস শিকলবন্দী সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আঞ্জু

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১০ মে ২০১৯

  ছয় মাস শিকলবন্দী  সপ্তম শ্রেণীর  ছাত্র আঞ্জু

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ, ৯ মে ॥ সর্বনাশা মাদকে আসক্ত হয়ে গত ছয়মাস ধরে শিকলবন্দী অবস্থায় রয়েছে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আঞ্জু মিয়া (১৩)। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় সহপাঠীর মাধ্যমে সে মাদক গ্রহণ শুরু করে। মাদক থেকে ফেরাতে দীর্ঘদিন চেষ্টার পর নিরুপায় হয়ে বাবা-মা তাকে বাড়িতে শিকলবন্দী করে রাখে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতিনিধিসহ চারজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে আঞ্জু মিয়ার শরীরের শিকল খুলে দেয়। আঞ্জু মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাটি সাভার গ্রামের দিনমজুর ফখর উদ্দিনের পুত্র। সে পাঁচআনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সাংবাদিকরা ওই গ্রামে আঞ্জুর বাড়িতে যান। এ সময় দেখা যায় আঞ্জু মিয়া বাড়ির সামনে একটি গাছের নিচে বসে আছে। তার শরীরে ৫ কেজি ওজনের একটি লোহার শিকল ঝুলছে। শিকলটি দুই পায়ে তালা দিয়ে আটকানো। কাছে যেতেই প্রথমে সে নিজের মুখ হাত দিয়ে ডেকে ফেলে। এক পর্যায়ে শিকলটি পরনের লুঙ্গী দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করে। আঞ্জু মিয়াকে অভয় দিয়ে শিকলবন্দীর বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় আঞ্জু মিয়া বলে, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তার এক সহপাঠী ধূমপান করায়। কিছু দিন পর তাকে গাঁজা, বাংলা মদ ও ইয়াবা সেবন করায়। শিকলে আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত সে এই সব মাদকে আসক্ত ছিল। এখন পাড়ার মাদক বিক্রেতারা তাকে নেশার যোগান দেয়। সাংবাদিকদের দ্বারা শিকল থেকে মুক্ত হয়ে আঞ্জু মিয়া বলে, এখন আর সে মাদক গ্রহণ করবে না। আবার স্কুলে যাবে। ঠিকমত পড়ালেখা করবে। বিষয়টি পাঁচানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, ছেলেটি বিদ্যালয়ে আসলে তাকে বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ করে দেবেন। এছাড়াও তিনি নিজ দায়িত্বে তাকে দেখভাল করবেন। আঞ্জুর মা জাহেদা খাতুন (৪২) জানান, তার দুই পুত্রের মধ্যে আঞ্জু ছোট। শুরুতে সবকিছু ঠিকমতো চলছিল। এলাকার মাদকাসক্ত বিপথগামী ছেলেদের সঙ্গদোষে মাদকে জড়িয়ে পড়ে ছেলে। শত চেষ্টা করেও কোন কাজ হচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে শিকল দিয়ে আটকে রাখতে বাধ্য হয়েছি। ছয় মাসের মধ্যে কয়েক বার ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু ছাড়া পেয়েই গাঁজা সেবন করে। আঞ্জুর বাবা ফখর উদ্দিন (৪৮) বলেন, নেশা থেকে বাঁচাতে ছেলেকে ময়মনসিংহে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই ছেলেকে শিকলে আটকে রাখেন।
×