ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতারি ও খাদ্যপণ্য মূল্য স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে ১০ টিম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৯ মে ২০১৯

 ইফতারি ও খাদ্যপণ্য মূল্য  স্বাভাবিক রাখতে কাজ  করছে ১০ টিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজানে রাজধানীর বাজারে ইফতারিসহ খাদ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে মাঠে কাজ করছে ১০টি টিম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন টিম পরিচালনা করছে। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে নানা অনিয়মের কারণে গরুর মাংশ ও বিভিন্ন পণ্য ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। এছাড়া স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করছে নানা পণ্য। স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে এসব দোকানে। খাবারে ভেজাল বা বাসি পচা খাবার পরিবেশন বন্ধ করা, ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা, পণ্যের মূল্য তালিকা না মেনে দ্রব্যের গায়ের মূল্যের অতিরিক্ত ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা, দোকানে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্যের মূল্য তালিকা টানানো নিশ্চিত করাসহ অবৈধ গুদামজাত, কালোবাজারি বন্ধ করা, গুজব ছড়িয়ে পণ্যের সংকট না থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়িয়ে দেয়াসহ সকল প্রকার অপরাধের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন, ভোক্তা অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) তার সীমানায় ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচালনা করছে পাঁচটি মনিটরিং টিম। এই টিমে ডিএসসিসি ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এসব টিমের সদস্যরা যাতে কেউ ভেজাল, পচা, বাসি খাবার বিক্রি করতে না পারে নিশ্চিত করবেন। সরজমিনে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি ও দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় কেরানীগঞ্জে ১১ মাংস ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এসব ব্যবসায়ীকে মোট ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। বুধবার ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও কালীগঞ্জে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল এবং ঢাকা বিভাগের কার্যালয় সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী রায়। জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জিনজিরার বাবুলের মাংসের দোকান, চাঁন মিয়ার মাংসের দোকান, করিমের মাংসের দোকান, রিপনের মাংসের দোকান, কামাল মিয়ার মাংসের দোকান, মোক্তার হোসেনের মাংসের দোকান, সাত্তারের মাংসের দোকান, মোহর আলীর মাংসের দোকান। প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া একই উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত মায়ের দোয়া মাংসের দোকান, গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী গরুর মাংসের দোকান ও বিসমিল্লাহ মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে বাজারে বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে বৃধবার কেরানীগঞ্জে অভিযান চালানো হয়। এখানকার বেশিরভাগ দোকানে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অনেকে আইন অনুযায়ী দোকোনের সামনে মূল্য তালিকা বাধ্যতামূলকভাবে টানানোর কথা থাকলেও তা মানেননি। এসব অভিযোগে ১১টি মাংস বিক্রির প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির বৈঠকে রোজায় মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, রমজান মাসে দেশী গরুর মাংস ৫২৫, বোল্ডার (বিদেশী) গরুর মাংস ৫০০, মহিষ ৪৮০, ছাগল ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়। ১ থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত মাংসের এ দাম নির্ধারণ করা হয়। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ডিএসসিসি বাজার মনিটরিং টিমের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুরে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের হাজী আফজাল গোস্ত বিতানের মালিক আফজালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিএসসিসির নির্ধারিত দেশী গরুর মাংসের দাম ৫শ ২৫ টাকা হলেও ওই দোকানে মাংস বিক্রি করা হচ্ছিল ৫শ ৫০ টাকায়। এ অপরাধে তাকে জরিমানা করা হয়। এ বিষয়ে ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোজায় বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং ভেজাল ঠেকাতে আমাদের পাঁচটি বাজার মনিটরিং টিম অভিযানে নেমেছে। অভিযানে সুপারশপ আগোরা ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার পরিদর্শন করেছি। দিনব্যাপী এ অভিযান চলবে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে বেশকিছু অনিয়ম দেখা গেছে। এর মধ্যে একজন মাংস ব্যবসায়ীকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে দেশী গরুর মাংস বিক্রি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে ডিএসসিসির ভেজালবিরোধী ও দ্রব্যমূল্য যাচাই অভিযানের ১ম দিন ৫ অঞ্চলে এক লাখ আটানব্বই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার ডিএসসিসি গঠিত ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করে। ডিএসসিসি অঞ্চল-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সেগুনবাগিচা, কাকরাইল এবং বড় মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অঞ্চল-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানার নেতৃত্বে শান্তিনগর এলাকায় ১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৪টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে হাজারীবাগ এলাকায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ানের নেতৃত্বে কাজী আলাউদ্দিন রোড, টিপু সুলতান রোডের ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা এবং অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সামছুল হকের নেতৃত্বে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে মেডিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস নামের একটি ফার্মেসিতে প্রচুর পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পায়। ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত ফার্মেসির মালিক মুজিবুর রহমানকে ৬ মাসের কারাদন্ড দেন। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফার্মেসিটি সিলগালা করে দেয় আদালত। জনস্বার্থে ডিএনসিসির এই ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। মাথাপিছু চার কেজি পণ্য বিক্রির শর্ত মেনেই ক্রেতারা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনছেন। রাজধানীর এমন বহু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন প্রতিদিন ভিড় করেন টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে। তবে একসময় শুধু নিম্ন আয়ের লোকজন এসব পণ্য কিনতে দেখা গেলেও এবছর অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকেও টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে হওয়ায় টিসিবি পণ্যই এখন এদের ভরসা। তাই প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকেই দীর্ঘ লাইন দাঁড়িয়ে যায় রাজধানীর ৩৫টি স্পটে টিসিবির নিয়োগকৃত ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে। পুরো রমজান মাসজুড়ে নায্য মূল্যে ডাল, চিনি, ছোলা, সয়াবিন তেল ও খেজুর বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবির তথ্য মতে, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে গত ২৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ১৮৭টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ডিলারদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৩৫টি স্পটে ৫টি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৫০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি মশুর ডাল, ৪০০ কেজি ছোলা ও ৫০ কেজি খেজুর বিক্রি করা হয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁও, নিউমার্কেট, জাতীয় প্রেসক্লাব মোড়, কাপ্তান বাজার, সদরঘাট, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল সরকারী কলোনি, বক চত্বর, দিলকুশা, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, ফকিরাপুল বাজার, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর বাজার, রামপুরা বাজার, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের পাশে, খিলগাঁও তালতলা বাজার, শাহজাহানপুর বাজার, বাসাবো বাজার, যাত্রাবাড়ী, মাদারটেক, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশে, গাবতলী, কচুক্ষেতের রজনীগন্ধ্যা সুপার মার্কেট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, শ্যামলী মোড় ন্যাম গার্ডেন, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, জিগাতলা মোড়, সায়েন্সল্যাব মোড়, পলাশী ছাপড়া মসজিদ, আশকোনা হাজী ক্যাম্প, উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, আব্দুল্লাহপুর ও ইস্কাটন গার্ডেনের অফিসার্স ক্লাব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। জানা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। আর টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা দরে। বাজারে চিনির দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা করে। সয়াবিন তেল বাজারে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা দরে বিক্রি করা হলেও টিসিবির ট্রাকে মিলছে ৮৭ টাকা দরে। আর ছোলা প্রতি কেজি খুচরা বাজারে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু টিসিবিতে মিলছে ৬০ টাকা দরে। টিসিবির খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১শ ৩৫ টাকা দরে। বুধবার দুপুরে মহাখালী এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিসিবি নিয়োগকৃত পণ্য বিক্রির ট্রাকে ক্রেতাদের বেশ ভিড়। কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পেরে অনেকেই বেশ খুশি। সংসার চালাতে টানপোড়েন কমাতে তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য কিনতেই এখানে এসেছেন।
×