ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্রশালায় রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রতিচ্ছবি কবির জন্মদিন

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৪ মে ২০১৯

 চিত্রশালায় রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রতিচ্ছবি  কবির জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসছে পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। চলছে নানা আয়োজন এবং আয়োজন নির্ভর প্রস্তুতি। এমন আবহের মাঝে কবিগুরুর জন্মদিনের চমৎকার প্রতিচ্ছবি চোখে পড়ে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ছয় নং গ্যালারিতে। প্রদর্শনালয়জুড়ে ছড়িয়ে বিশ্বকবির প্রতিকৃতি। আর ছবিগুলোয় ধারাবাহিকভাবে ধরা দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা। কবি কোন ফুলটি ভালবাসতেন কিংবা জন্মদিন কেমন পোশাক পছন্দ করতেন-এমন নানা প্রশ্নে জবাব মেলে ছবিতে ছবিতে। কোন ছবির ফ্রেমের সঙ্গে ঝুলে আছে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফুলের মালাখানি। কবিগুরুর ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইভেন্টস ও আর্কাইভ ১৯৭১-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘কবির জন্মদিন’। ভারতের ত্রিপুরার গবেষক শুভ্রজিত ভট্টাচার্যের গবেষণা ও সংগ্রহশালা থেকে সংগৃহীত শতাধিক আলোকচিত্রে নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। শুক্রবার থেকে সূচনা হওয়া প্রদর্শনীটি হয়ে উঠেছে কবিগুরুর জন্মদিন উদ্যাপনের নানা জানা-অজানা তথ্য এবং জন্মদিন উদ্্যাপনের স্মৃতিকথার গবেষণাধর্মী আখ্যান । প্রদর্শনীটি প্রসঙ্গে শুভ্রজিত ভট্টাচার্য বললেন, কবিগুরুর প্রতিটি জন্মদিন উদ্যাপনের সঙ্গে ছিলেন ফুলের নিবিড় সম্পর্ক। সেই সম্পর্কটি মেলে ধরা হয়েছে এ প্রদর্শনীর সজ্জায়। জন্মদিনে যেসব ফুল তিনি উপহার হিসেবে পেতেন সেই কৃঞ্চচূড়া, কাঠগোলাপ কিংবা বেলি ফুলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চারপাশ। একজন দর্শক প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখলে জানতে পারতেন বিশ্বকবির জন্মদিন সম্পর্কিত বিপুল তথ্য। এর আগে প্রদর্শনীটি প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের ত্রিপুরায়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় আয়োজনটি। ‘আজ আমার জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখ- পঁচিশ বছর পূর্ব্বে এই পঁচিশ বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ হয়েছিলুম-জীবনে এমন আরও অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে এই আশীর্বাদ করুন। জীবন অতি সুখের।’ ২৫ পেরিয়ে ছাব্বিশে পা রাখার দিন কবি শ্রীশচন্দ্র মজমুদারকে এ চিঠিটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নানা ছবির সঙ্গে কবির লেখা সেই চিঠিখানি ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এর আগে কখনই নিজের জন্মদিন নিয়ে কবি কাউকে কিছু বলেননি, লেখেননিও। প্রদর্শনীর একটি ছবিতে শিলাইদহে খুঁজে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথকে। যার বর্ণনায় লেখা- ‘৩৩তম জন্মদিনটি শনিবারে। শিলাইদহে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পদ্মাবোটে নদীর আদরেই সেবারের জন্মদিন কাটে তার। সে বছর কবির জন্মদিন উপলক্ষে পারিবারিকভাবে ৩০ টাকার কাপড় কেনা হয়েছিল।’ ১৯১৩ সালে জন্মদিনের সময় কবি ছিলেন লন্ডনে। সেখানকার আলোকচিত্রের সঙ্গে বর্ণনাটিও চমৎকার। ‘বৃহস্পতিবার। কবি লন্ডনে। বিদেশিরা তখনও তার জীবনবৃত্তান্ত সঠিকভাবে সবটা জানেন না। তবে স্বদেশবাসীরা উপলক্ষটিকে ঘরোয়াভাবে উদ্্যাপন করেছিলেন, এমন খবর পাওয়া যায় না। জন্মদিনের আগের দিন কবি চব্বিশে বৈশাখ অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখেছিলেন- আগামীকাল আমার জন্মদিন।... পথ দেখি আবার বাঁকে, সামনে দেখি আর এক দৃশ্য- যেটাকে মনে করেছিলুম সুপরিচিত হয়ে গিয়েছি সেটাকে আর এক দিক দিয়ে দেখি সে এক নূতন চেহারা। পরিচয় আর ফুরোবে না। নিজেরই পরিচয়।’ ওই বছরই রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। প্রদর্শনীর বিশেষ আর্কষণ হিসেবে রয়েছে কবিগুরুর জীবদ্দশায় উদ্যাপিত শেষ জন্মদিনের আলোকচিত্র। সে সময় শান্তি নিকেতনে পহেলা বৈশাখে কবিগুরুর জন্মদিন পালিত হয়। সেবারেও তাই হয়েছিল। সে জন্মদিনকে সামনে রেখে তিনি লিখেছিলেন প্রবন্ধ ‘সভ্যতার সঙ্কট’। তার উপস্থিতিতে যা পাঠ করেছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন। প্রদর্শনীতে কবিগুরুর জন্মদিন পালন ছাড়াও তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবি রয়েছে। একটি ছবিতে শান্তিনিকেতনে বৃক্ষছায়ায় একসঙ্গে দেখো ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উদ্যাপনের ছবির পাশাপাশি এমন অনেক ছবি রয়েছে প্রদর্শনীতে। সেসব আলোকচিত্রে দেখা মেলে শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন থেকে বার্ধক্যে পর্দাপণ করা রবীন্দ্রনাথকে। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা। বাংলাদেশ ইভেন্টসের উপদেষ্টা সুভাষ সিংহ রায়ের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্কাইভ ১৯৭১-এর পরিচালক প্রণব সাহা অপু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শুভ্রজিত ভট্টাচার্য। কে এম খালিদ বলেন, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের গ্যালারি রয়েছে। দেরিতে হলেও সেখানে বাংলাদেশ গ্যালারির নির্মাণ কাজ শুরু করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশে রবীন্দ্র চর্চা প্রসার ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকায় একটি রবীন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে যার নক্সা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, সব সময় আমারা হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ আর চেতনায় নজরুলকে অনুভব করি। প্রতিটি বাঙালীর ঘরে দুটি বই অবশ্যাই থাকা উচিত। গ্রন্থ দুটি হলো রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলী। আয়োজকরা জানান, শতাধিকে আলোকচিত্রে সজ্জিত চার দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি চলবে ৬ মে পর্যন্ত। তবে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী প্রদর্শনীটি বাইশে শ্রাবণ পর্যন্ত বর্ধিত করার করার প্রস্তাব দেন। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর সঙ্গে প্রতিদিনই থাকছে নানা আয়োজন। যার অংশ হিসেবে আজ শনিবার ‘কথা বাজনা কবিতা’ শীর্ষক আয়োজনে কথা বলবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। কবিতাপাঠ করবেন হাসান আরিফ আর বেহালায় সুর ছড়াবেন ড. শিউলি ভট্টাচার্য।
×