ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী

নিখিল মানখিন ॥ কাঠফাটা রোদ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতহীন এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস ইত্যাদি কারণে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৯.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ৪০ ডিগ্রীতে পৌঁছলেই শুরু হবে তীব্র তাপপ্রবাহ। সকাল থেকেই তাপ ছড়াতে শুরু করে সূর্য। মাটি থেকে তাপ ঠিকরে বেরোতে থাকে। শরীর চাইছে ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ঠা-া রাখতে। মানুষ ঘামছেও কুলকুলিয়ে। কিন্তু সেই ঘাম শুকোতে পারছে না, উল্টো গায়ে জমে থাকছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ সোমবারও দেশের অনেক এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার খবরে অস্বস্তিতে পড়েছে দেশবাসী। প্রশান্তি পেতে অপেক্ষা করছে এক পশলা বৃষ্টির। হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। পাশাপাশি দু’টি নিম্নচাপ এবং একটি ঘূর্ণিঝড়ের। মাসের শেষদিকে এসে তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিসের দেয়া তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাসটি এখনও বাকি রয়ে গেছে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হতে মাত্র শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাকি। রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৯.৯ এবং সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়া ও ডিমলায় ২১.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যথাক্রমে ৩৬ ও ২৮.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র নয়, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে এখন। সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টিশূন্যতা। দুইয়ে মিলে বেশ উত্তপ্ত সারাদেশ। গরমের মাত্রাটা খানিকটা বেশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলজুড়ে। গ্রীষ্মের দাবদাহে শুধু মানুষ নয়, গোটা প্রাণিকুল অস্থির হয়ে পড়েছে। দিনভর কাঠফাটা রোদ। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরও ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেও গরমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই এতটুকু। ক্লান্তি দূর করতে কেউ পান করছেন ডাবের পানি, কেউবা খাচ্ছেন শসা, ক্ষীরা। তারপরও স্বস্তি মিলছে না। এদিকে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক, সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন আবহাওয়াবিদরা। এমন অবস্থায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত বছর এমন সময়ে হিটস্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর সংক্রমণের ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। অতি প্রয়োজন না হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে কাজ করার সময় মাথা ও শরীরে ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় কিছু খেতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক বিশেষ করে সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়াচ্ছন্ন স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। ঠা-া পানি (রেফ্রিজারেটরের পানি নয়) নিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এতে উন্নতি নাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ও ইউনিট প্রধান ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই এদেশের মানুষের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বেশিমাত্রায় পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আবহাওয়া অফিসের পরামর্শও প্রায় একই। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের তাপমাত্রা এদেশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর ওপরে চলে গেলে তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যা সহ্য করতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় বিশেষ করে ‘ওরস্যালাইন’ খেতে হবে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। এতে আক্রান্তের অবস্থার উন্নতি নাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের আগে শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার বেশি থাকবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দিবে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তের চাপও কমে যাবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ছায়াচ্ছন্ন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বাংলাদেশের উপকূল থেকে ১৬শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়োহাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। রবিবার বিকালে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আবহাওয়া অধিদফতরের রবিবার বেলা ১২টার সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
×