ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে চলছে

২০২১ সালে পাইপলাইনে গ্যাস যাবে উত্তরবঙ্গে

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

২০২১ সালে পাইপলাইনে গ্যাস যাবে উত্তরবঙ্গে

তাহমিন হক ববী, স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে উত্তরবঙ্গের নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডসহ রংপুর বিভাগে উচ্চচাপ সম্বলিত পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের নবেম্বর মাসের মধ্যে জমি গ্রহন ও জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে পাইপ লাইনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনের নির্মাণ কাজ। আশা করা হচ্ছে ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এ অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বগুড়া-রংপুর ও সৈয়দপুর তথা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। যা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে (একনেক) অনুমোদনও হয়েছে। প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। গ্যাস সরবরাহের জন্য বসানো হবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর ও নীলফামারীর উত্তর ইপিজেড পর্যন্ত ৮৯টি মৌজার ৩০৯ দশমিক ৫ হাজার ৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছে। জমি অধিগ্রহণের কাজে সহায়তা করছে বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। গ্যাস পাইপ নির্মাণে দুটি নদী ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া রংপুর, সৈয়দপুর ও নীলফামারীতে প্রয়োজনীয় অফিস অবকাঠামো নির্মিত হবে। জানা যায়, রংপুর বিভাগে উচ্চচাপ সম্বলিত পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য জমি অধিগ্রহণে রংপুরের পাঁচটি উপজেলা পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর এবং নীলফামারী সদরে জমি অধিগ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। শনিবার দুপুরে এ বিষয়ে কথা বলা হলে নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহিনুর আলম জানান, নীলফামারী ও সৈয়দপুর অংশের জমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে চলছে। এ জেলার প্রায় ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অপর দিকে রংপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ মুহম্মদ ফয়েজুল আলম বলেন, রংপুর জেলার ৫ উপজেলা প্রায় ১৬৮ দশমিক ৫ হাজার ৫০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সূত্র মতে, গ্যাসের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজের সুবিধার্থে সম্বলিতভাবে বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় মোট ৮৯টি মৌজায় ৩০৯ দশমিক ৫ হাজার ৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখল করা হবে। অধিগ্রহণকৃত জমি স্থায়ীভাবে নেয়া হবে এবং হুকুম দখলকৃত জমি কাজের সুবিধার জন্য কিছুদিন ব্যবহার করা হবে। কাজ শেষে তা ফেরত দেয়া হবে জমির মালিককে। সূত্র মতে, আগামী মে মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ভূমি মালিকগণকে আগামী নবেম্বর মাসের মধ্যেই জমির মূল্যের তিনগুণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হবে। উল্লেখ, উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা দূর হলেও শিল্পায়নে এখনও অনেক পিছিয়ে। কারণ গ্যাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও কোন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা যাচ্ছে না। যাতে রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক বিদ্যুত সরবরাহে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, শিল্পায়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প এটি। তাই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সময় মতো কাজ শেষ করার তাগাদা রয়েছে। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রংপুর ও সৈয়দপুরে দুটি ২০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ আকারে বহু শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়লা, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ইত্যাদি জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে রংপুরে ১০০ ও সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রংপুর, পীরগঞ্জ, সৈয়দপুর, উত্তরা ইপিজেড এবং প্রস্তাবিত নীলফামারী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাইপ লাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে দ্রুত এসব অঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটবে। যার কারণে ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকাশ থাকে যে, উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় প্রথমে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইমাম উদ্দিন শেখ। তিনি জানান, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপরই একনেকে এটি পাস হয়।
×