ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানের প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

রমজানের প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন রমজানের প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৮ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বছরের বেশিরভাগ সময় এই চিনি ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চিনির পাশাপাশি বেড়ে গেছে আদা ও পেঁয়াজের দাম। দাম বেড়ে প্রতিকেজি আদা ১০০-১৪০ ও পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে মাছ ও মাংস গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। তবে চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফরিকাপুল বাজার, মুগদা বড় বাজার এবং টিসিবি প্রেরিত নিত্যপণ্যের দরদাম থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, রোজা সামনে রেখে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী উদ্যোগে বেশ কিছু কর্মসূচী নেয়া হলেও বাজারে এর তেমন কোন প্রভাপ পড়েনি। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ডিসিদের নির্দেশ নিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমান কোর্ট বসিয়ে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য ও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে বাজার মনিটরিং করার উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু এতসব উদ্যোগের পরও রোজা সামনে রেখে বেড়ে যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে চিনির মতো পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সারাবছর পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও রোজা সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু পাইকারিতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরা বাজারে বেড়ে যাচ্ছে দাম। কাপ্তান বাজারের মুদিপণ্যের ব্যবসায়ী গনি মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, রোজা সামনে রেখে চিনিসহ বেশকিছু মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় দোকানদার পর্যায়েও চিনি, পেঁয়াজ ও আদার মতো পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, শুধু ভোগ্যপণ্যের বাজারেই নয়, কাঁচাবাজারেও পড়তে শুরু করেছে রোজার প্রভাব। বেশকিছু শাক-সবজির দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। এছাড়া রোজার অন্যতম ভোগ্য পণ্য ছোলা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে ইফতারিতে বেশি ব্যবহার হয়-খেজুর প্রকারভেদে ২২০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২.৫ থেকে ৩ লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০-৯০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টনের। এছাড়া ৫০-৬০ হাজার টন মসুর ডালের চাহিদা তৈরি হয়। গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে এসব পণ্যের দাম বাড়ার তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম কমে গেছে। তবে রোজায় যাতে বাজারে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকে সেজন্য আমদানি বাড়ানোর কথা বলছে সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মো.মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। এখন পর্যন্ত রোজায় ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যের কোন সঙ্কট দেশে নেই। এছাড়া চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোসহ যা করুণীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব করা হচ্ছে। এছাড়া এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবি’র কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিকে, সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক থাকলে সরবরাহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগপণ্যের দাম নি¤œমুখী ধারায় রয়েছে। একমাত্র মসুর ডাল ছাড়া অন্য পাঁচটি পণ্যের দাম এখন স্বাভাবিক। গত কয়েক মাসে মসুর ডালের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করা হয়।
×