ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যার পর কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীর লাশ জ্বালিয়ে দিয়েছে স্বামী

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

হত্যার পর কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীর লাশ জ্বালিয়ে দিয়েছে স্বামী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পর এবার ঢাকায় স্ত্রীকে হত্যার পর কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার আলামত মুছে দিতেই স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় পাষ- স্বামী। আর স্ত্রী আগুন পুড়ে মারা গেছে বলে নরঘাতক স্বামী চিৎকার করে এলাকায় প্রচার করে। নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের বাইরে রাখতে হত্যার পর না পালিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করে স্ত্রীর জন্য কান্নাকাটি করছিল। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়ে স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এমনকি হত্যাকা-ের লোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে এই নরপিশাচ। বুধবার ভোর চারটার দিকে রাজধানী ঢাকার মুগদা থানাধীন ব্যাংক কলোনির ১/৪১ নম্বর বাড়ির তিন তলায় লোমহর্ষক এই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। সকাল আটটার দিকে স্থানীয় এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসি বেগমের (২৭) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। মুগদা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস্) মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, লাশটি পুড়ে যাওয়া। মনে হচ্ছিল লাশটিকে মারাত্মকভাবে কে বা কারা যেন পুড়িয়ে দিয়েছে। কারণ স্বাভাবিকভাবে আগুন লেগে কেউ পুড়লে ওইভাবে সাধারণত কারও পোড়ার কথা না। আবার ঘটনার পর থেকেই স্বামী স্বাভাবিকভাবে কান্নাকাটি করছিলেন। সন্দেহ করা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী একত্রে থাকার সময় আগুনে পুড়ে স্ত্রী নিহত হলেও স্বামী আহত না হওয়ার ঘটনা রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি করে। তারই সূত্রধরে আটক করা হয় নিহত হাসির স্বামী কমলকে। শেষ পর্যন্ত কমল স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে। এমনকি কিভাবে স্ত্রীকে হত্যা করেছে, তার বর্ণনাও দেয়। কমল হোসেনের বরাত দিয়ে পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান আরও জানান, নরঘাতক কমলের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন চরখাসকান্দি গ্রামে। তার প্রথম স্ত্রী ঢাকার লালবাগে বসবাস করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তান আছে। পারিবারিক কলহের সূত্রধরে স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছিল না। আর নিহত স্ত্রী হাসি বেগমের (২৭) পিতার নাম শেখ আলতাফ (৫৭)। মায়ের নাম আলাপী বেগম (৪৭)। তাদের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে। নিহত হাসি পিতার প্রথম ঘরের সন্তান। হাসির পিতা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে পার্বতীপুরে বসবাস করেন। পিতার দ্বিতীয় সংসার থাকার কারণে তাদের সংসারেও অশান্তি আছে। সেই রাগে হাসি তার মা, বড় বোন আলপনা, ছোট বোন মুক্তা ও ফুপাত বোন রোজিনাকে নিয়ে বহু দিন ধরে মুগদার ওই বাসায় ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। চেনা পরিচয়ের সূত্রধরে হাসির সঙ্গে মুগদা এলাকার সুজন নামে এক টেম্পু চালকের বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে সাত বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। প্রায় নয় মাস আগে প্রথম স্বামী সুজনের সঙ্গে হাসি বেগমের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপরেও ছোট্ট ছেলেটি মা হাসির সঙ্গেই থাকে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও সুজনের মা বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে হাসির যোগাযোগ ছিল। সুজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী কমলের সঙ্গে পরিচয় হয় হাসির। পরিচয় থেকে প্রেম। প্রেমের সূত্রধরেই কমলের সঙ্গে আট মাস আগে হাসির বিয়ে হয়। এটি কমল ও হাসির উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে। কমলের ভাষ্য মোতাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলছেন, বিয়ের পর থেকেই হাসি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ইতোপূর্বেও হাসি প্রথম স্বামীর সংসারে থাকাকালে দুই দফায় বেশ কয়েক বছর মালয়েশিয়া ও দুবাইতে ছিলেন। সেখানে ড্যান্স ক্লাবে ও হোটেলে চাকরি করতেন। এসব বিষয় কমল জানত। তাই আবার বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলে কমল তাতে আপত্তি করে। এ নিয়েই স্বামী কমলের সঙ্গে হাসির পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কোন কিছুতেই হাসি স্বামীর কথা মানছিলেন না। এ নিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত সেই ঝগড়া চলতে থাকে। ঝগড়া শেষে তারা একত্রেই শুয়ে পড়েন। ভোর চারটার দিকে কমল রাগ সামলাতে না পেরে স্ত্রীকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর স্ত্রী হত্যার দায়ে তার সাজা হওয়ার ভয় কাজ করে। এজন্য সে তার স্ত্রী আগুনে পুড়ে মারা গেছে বলে, নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। যাতে তাকে কেউ ধরতে না পারে যে, সেই তার স্ত্রীর হত্যাকারী। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘরে বোতলে থাকা কেরোসিন স্ত্রীর গায়ে ও বেডরুমের বিছানায় ছিটিয়ে দেয়। এরপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে স্ত্রী অনেকটাই পুড়ে বিকৃত হয়ে পড়লে এবং হত্যার আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এরপর কমল ঘরে আগুন লেগে তার স্ত্রী মারা গেছে বলে চিৎকার করতে থাকে। পুরো হত্যাকা-টি ভোর চারটা থেকে সকাল আটটার মধ্যে করা হয় বলে কমল নিজেই স্বীকার করেছে। পরে বাড়ির লোকজনের চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশীরা সেখানে গিয়ে ঘটনা জানতে পারে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
×