ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাছের পাতা থেকে সাবান তৈরি

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১২ এপ্রিল ২০১৯

গাছের পাতা থেকে সাবান তৈরি

আফ্রিকার দেশ কামেরুনের এক নারী পারিবারিক জ্ঞান সম্বল করে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সাবান তৈরি করছেন। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও সেই সাবান বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে রাফায়েল নগুইওয়ান বিটারলিফ বা নিম গাছের পাতা সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পড়েন। কামেরুনে সেটি নদোলে নামে পরিচিত। তিনি যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করেন, তাতে এই পাতাই হলো মূল উপাদান। এই ব্যবসার পরিকল্পনার পেছনে রাফায়েল-এর নানির বিশাল অবদান রয়েছে। কামেরুনে রান্নার কাজে নদোলে পাতা ব্যবহার করা হয়। এর আগের প্রজন্ম সাবান তৈরির কাজেও এই পাতা ব্যবহার করেন। রাফায়েল বলেন, ‘সবকিছু নানি শুরু করেছিলেন। তিনি তাঁর সব ফর্মুলা, গাছপালা সংক্রান্ত সব জ্ঞান মায়ের হাতে তুলে দেন। তারপর মা আমাদের সে সব দিয়েছিলেন।’ পাতা থেকে সাবান তৈরি করেন রাফায়েল মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকে ব্যবসা চালানোর পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট ও এ্যাকাউন্টিং নিয়ে উচ্চশিক্ষাও গ্রহণ করছেন। এক স্টার্ট-আপ একাডেমির কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে তিনি এই প্রকল্প শুরু করেন। রাফায়েল বলেন, ‘একবার নদোলে পাতার মতো লতাপাতা সংগ্রহ করার পর সেগুলো ভিজিয়ে নরম করা হয়। দুই সপ্তাহ পর সেগুলো এমন দেখতে হয়। তখন পাতা পিষে ফেলে তা সহজেই মিশ্রণে যোগ করার উপযুক্ত করে তোলা হয়।’ রাফায়েল-এর বড় বোন মিশেলও গাছপালা নিয়ে মেতে থাকেন এবং ব্যবসার কাজে সাহায্য করেন। রাফায়েল বলেন, ‘পুডিং-এর মতো দেখতে মিশ্রণের উপর একটা স্তর সৃষ্টি হয়। সাদা এই স্তর দেখা গেলেই বোঝা যায়, সেটি ছাঁচে ঢালার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।’ ছাঁচে ঢালার পর ৩ সপ্তাহ ধরে রেখে সাবান প্রস্তুত করতে হয়। অনেক অর্ডার এসে পড়লে গোটা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা হয়। অরগ্যানিক সাবানের প্রতিটি বার বা টুকরার মূল্য প্রায় দেড় ইউরোর সমান। আপাতত রাফায়েল সব সাবান নিয়ে বাসায় ফিরছেন। সেখান থেকেই তিনি এক অনলাইন বিপণির মাধ্যমে সাবান বিক্রি করেন। দুই বোন ভিভিয়ান নামের এক বিউটি পার্লারের মালিকের মতো কিছু ক্রেতার কাছে নিজেরাই সাবান পৌঁছে দেন। ভিভিয়ান বলেন, ‘ত্বক পরিষ্কার করে মসৃণ করে তোলে। তাই এই পণ্য আমার পছন্দ, শতভাগ প্রাকৃতিক উপাদান।’ কামেরুনে টেকসই ব্যবসায় উৎসাহ দিতে এক পরিকল্পনার আওতায় আফ্রিকার উদ্ভাবক শিল্পপতিদের সংগঠন ‘আসেনিয়া’-র সঙ্গে জোট বেঁধেছেন রাফায়েল। অদূর ভবিষ্যতেই একটি নিজস্ব দোকান খুলবেন বলে রাফায়েল ও তাঁর পরিবারের মনে আশা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে তাঁরা আন্তর্জাতিক বাজারেও এই পণ্য বিক্রি করার স্বপ্ন দেখেন।
×