ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

এফআর টাওয়ারের ত্রুটি চিহ্নিত করতেই দেড় মাস লাগবে

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 এফআর টাওয়ারের ত্রুটি চিহ্নিত করতেই দেড় মাস লাগবে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অগ্নিপ্রতিরোধক ও সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করার পরই বনানীর এফ আর টাওয়ার ব্যবহার করা যাবে। এর মধ্যে শুধু ভবনটির ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতেই অন্তত দেড় মাস সময় লেগে যাবে। ত্রুটি চিহ্নিত করার পাশাপাশি অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। এরপর করতে হবে ভবন সংস্কার এবং মজবুত করার কাজ। কাজ শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ভবনটি ব্যবহার উপযোগী বলে জানানো হবে। সবমিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ মাস পর ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। তার আগে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বেআইনীভাবে এফ আর টাওয়ার নির্মাণে তিন শ্রেণীর মানুষ জড়িত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট ইমারত বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী জনকণ্ঠকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলছেন, এফ আর টাওয়ার অনেক বড় ভবন। এজন্য ভবনটির বিস্তারিত সব কিছুই পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কমপক্ষে দেড় মাস সময় লাগবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রথমেই অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসবে। এরপর অগ্নিকা- প্রতিরোধমূলক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবস্থার বিষয়টি আসবে। এসব কাজ শেষ হওয়ার পর ভবন সংস্কার বা মেরামত এবং মজবুত করার কাজটি করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ভবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতেই হবে। মোট কথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিকান্ড প্রতিরোধমূলক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরই ভবনটি ব্যবহার উপযোগী হবে। এসব কাজ শেষ করতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগবে। তার আগে কোনক্রমেই সম্ভব হবে না। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য এফ আর টাওয়ারের নক্সা রাজউক থেকে অনুমোদন করা হয়। পরে সেখানে রাজউকের নির্দেশ অমান্য করে ২৩ তলা করা হয়। যেখানে রাজউক অনুমোদিত নক্সার সঙ্গে ভবনের নক্সায় অনেক অমিল আছে। এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নক্সা পেশ করে। ওই নক্সার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নক্সার কোন মিল নেই। এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে ভবনটির উপরের পাঁচটি তলা নির্মাণের কোন অনুমতির কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। এমনকি কোন নক্সাও মেলেনি। উপরের পাঁচটি তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ভবনের জরুরী বহির্গমন সিঁড়ি সরু ছিল। এছাড়া সিঁড়িটি সবার ব্যবহারের উপযোগীও ছিল না। ওই ভবনে ফায়ার ডোর না থাকায় জরুরী বহির্গমন সিঁড়িটা নিরাপদ ছিল না। এদিকে শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্র্র্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বনানীর এফ আর টাওয়ারে সৃষ্ট অপরাধে জমির মালিক, জমির ডেভেলপার ও ভবনের দেখভালকারীরা জড়িত। ওই অঞ্চলে রাজউকের যেসব কর্মকর্তা, অথরাইজড অফিসার ছিলেন তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। তারা কেন অবৈধভাবে ভবনের বর্ধিত অংশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি, সেজন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে কোন মন্ত্রী বা উপদেষ্টার প্রভাব ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০০৪ সালে যারা ক্ষমতায় ছিলেন সে সময় তাদের প্রভাব ছিল কিনা, ওই সময়ের রাজউক চেয়ারম্যানের প্রভাব ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। এরপর গত ২৮ মার্চ বনানীর ১৭ নম্বর সড়কে এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে ২৬ জন নিহত হন। এমন ঘটনার পর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে অভিযানে নেমেছে রাজউক। রাজউকের আটটি জোনের অধীনে অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, প্রধান ইমারত পরিদর্শক ও ইমারত পরিদর্শকের সমন্বয়ে গঠিত ২৪টি দল দশ তলার বেশি বহুতল ভবনগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে।
×