ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মায়েরা দায়ী নন

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

মায়েরা দায়ী নন

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সর্ব সাধারণের সার্বিক অংশগ্রহণ সমৃদ্ধির সুফলকে জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে। নারী পুরুষের মিলিত শক্তি সমাজ বিনির্মাণের নিয়ামক বিবেচনায় সমতাভিত্তিক দেশের অগ্রগামিতায় নারীরাও কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। তবুও গতানুগতিক সামাজিক অপসংস্কার এখনও নারীদের কাঁধে অপবাদ চাপিয়ে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদানে মাকেই হেনস্থা করা হয়। এটা একেবারে ঠিক নয়। মায়ের জঠর থেকে শিশু জন্ম নেয় ঠিকই, কিন্তু শিশুর সার্বিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় গর্ভে মায়ের অবদান কতখানি তা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাই সব থেকে ভাল বোঝেন। আসলে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী শিশুর পৃথিবীর আলো দেখা মায়ের কৃতিত্ব হলেও সব কিছুর জন্য মাকে দায়ী করা যায় না। ২ এপ্রিল ১২তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে মনে করিয়ে দেন, অটিস্টিক শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের প্রতি যে অভিযোগ তোলা হয় সেটা অর্থহীন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই মহৎ অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান আরও বলেন, সন্তান প্রতিবন্ধী হলে অযথা মায়ের ওপর দোষ দেয়া উচিত নয়। সব বাবা-মাই একটি সুস্থ শিশু কামনা করেন। তাদের জানা থাকে না অনাগত শিশুটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে পৃথিবীতে আসছে কি না। সাধারণ, স্বাভাবিক মানুষ থেকে অপেক্ষাকৃত অপুষ্ট এসব বাচ্চা তাদের কিছু জন্মগত অক্ষমতা নিয়ে বড় হতে থাকে। কোন বাচ্চা জন্ম থেকে চোখেও দেখে না। আবার কেউ কেউ বুদ্ধিবৃত্তিতে সমবয়সী বাচ্চাদের তুলনায় অনেক পিছনে পড়ে থাকে মানসিক জড়তা আর স্থবিরতার কারণে। শরীরের অতি আবশ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক বিকাশ বিঘিœত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এসব কিছুর জন্য যেমন মাকে দায়ী করা চলে না, একইভাবে আক্রান্ত শিশুটিকেও প্রত্যেকের সযতœ পরিচর্যায় বড় করে তোলা নৈতিক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী এসব অস্বাভাবিক শিশুকে অবহেলা কিংবা উপেক্ষার পাত্র হিসেবে না দেখতে উদাত্ত আহ্বান জানান। সারা দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এসব অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেন তিনি। শুধু তাই নয়, দেশে প্রায় ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুকে মাসিক ভাতা দেয়ার কথাও দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়। এমন অসহায় ও অসুস্থ শিশুদের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলে সহানুভূতিশীল হতেও আবেদন জানানো হয়। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় যে শিশু পৃথিবীতে আসে সে সমস্ত মৌলিক অধিকার অর্জন করে যেন মানুষের মতো বাঁচতে পারে, সে দিকে সবার বিশেষ নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরী। এসব অস্বাভাবিক শিশু অনেক ধরনের প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায়। তাদের সেই মেধা ও মননের যথার্থ পরিচর্যার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা মা-বাবার যেমন কর্তব্য, একইভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতাকেও অস্বীকার করা যায় না। এসব বাচ্চা কোন অনুষ্ঠান, উৎসব কিংবা আনন্দমেলায় যোগ দিলে তাদের অবহেলার পাত্রতে পরিণত না করার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের বিত্তবানদের অনেক দায়দায়িত্ব আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসব শিশুর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে তার পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশই উপযুক্ত অবস্থায় তৈরি করে তাদের দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। যেসব প্রতিবন্ধী শিশু নিজেদের গড়ে তুলে এগিয়ে নিতে চায় তাদের পাশে দাঁড়ানো আবশ্য কর্তব্য বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
×