ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতিঝিল-উত্তরাতেও চক্রাকার বাস সার্ভিস

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০১৯

মতিঝিল-উত্তরাতেও চক্রাকার বাস সার্ভিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মতিঝিল ও উত্তরাতেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্কুলার বাস সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের মেয়র আতিক। এর মধ্যে মতিঝিলে এপ্রিলের শেষের দিকে আর উত্তরায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহের যে কোন দিন চালু হবে। অপরদিকে নগরবাসীকে অধিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ও যাত্রীদের কথা চিন্তা করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলমান সার্কুলার বাস সার্ভিসের সব সুবিধা ও অসুবিধা এবং যাত্রীদের অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষেই উত্তরায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। বুধবার বিকেলে ডিএসসিসি সভাকক্ষে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে গঠিত বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর আগে কমিটির আরও চারটি বৈঠক হয়। এদিকে শুধু বিআরটিসি সার্ভিস দিয়ে কোনক্রমেই নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না ও বর্তমান নিয়মের এ চক্রাকার বাস সার্ভিস কিছুদিনের মধ্যেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে ঢাকার দুই মেয়রের সামনেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। সাঈদ খোকন বলেন, ধানম-ি-নিউমার্কেট-আজিমপুরের মতো উত্তরা মতিঝিলেও পৃথক চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মতিঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হবে। এছাড়া মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তরায় এ সার্ভিস চালু হবে। এ সেবার মাধ্যমে কম খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন। পাশাপাশি যানজট নিরসনেও চক্রাকার বাস ভূমিকা রাখবে। প্রতিটি বাসেই র‌্যাপিড পাস কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা তার ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। মেয়র বলেন, নির্দিষ্ট কোম্পানির তত্ত্বাবধানে রাজধানীতে সাড়ে চার হাজার বাস নামানো হবে। পুরো রুট রেশনালাইজেশন কাজ শেষ হতে দুই বছর সময় লাগবে। কারণ এখানে টার্মিনাল, ডিপো, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব চক্রাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রক্রিয়ার ছোট ছোট অংশ। ধানম-ি-নিউমার্কেট-আজিমপুর রুটের চক্রাকার বাস সেবা ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। এখন হয়তো কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই যাত্রীরা এর সার্বিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এর আগে মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজির সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ রেজাউল আলম, সড়ক পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, ডিটিসিএ নির্বাহী পরিচালক রকিবুর রহমান, গণযোগাযোগ বিশেষত সালাহ্উদ্দীন কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। রুট রেশনালাইজেশন-সংক্রান্ত কমিটির সভা সূত্র জানায়, সভায় মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এসব চক্রাকার বাস চলাচলকারী রুটে সকল প্রকার বেসরকারী বাস আস্তে আস্তে উঠিয়ে দেয়া হবে। যাত্রীদের আরামে চলাচলের সকল ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, চলমান সার্কুলার বাস সার্ভিস বিআরটিসি বাস দিয়ে ঢাকার নাগরিকদের চাহিদা কোনক্রমেই মেটানো সম্ভব না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এই সার্ভিস কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যাবে। আমার দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলে এ সার্ভিস থাকবে না। যাত্রীসেবায় অনেক সরকারই অনেক প্রকল্প নিয়েছে আমরাও সহায়তা করেছি। কিন্তু সরকারী বাস সকল রুটে চলাচল করলে আমাদের বাস মালিকগণ কোথায় যাবেন? মেয়রদের উদ্দেশে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাহলে আমাদের সকল বেসরকারী বাস ঢাকায় বন্ধ করে দেন। প্রতি উত্তরে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমরা তো সকলকে নিয়ে রাজধানীর রুট রেশনালাইজেশন করতে চাই। আমরা তো বেসরকারী সার্ভিস বন্ধ করে দিতে বলিনি। তাহলে রাজধানীতে চলাচলকারী বেসরকারী বাস মালিকগণ বিআরটিসির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসুক। এ সময় মেয়রদের উদ্দেশে খন্দকার এনায়েত বলেন, মেয়রের অনুরোধে আমরা ধানম-ি-নিউমার্কেট রুটে বাস সার্ভিস চালু করতে সকল বেসরকারী বাসের রুট পরিবর্তন করে দিয়েছি। এর আগে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদপুর থেকে কৃষি মার্কেট হয়ে আসাদগেট রুটে নতুন বাস সার্ভিস চালু করতে চাইলে মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত বলেন, সব রুটেই যদি বাস সার্ভিস চালু করে বিআরটিসি তাহলে আমাদের কি হবে? আমরা তো সকল বাস মালিককে বলে মানাতে পারব না। বাস মালিকদের অনেকেই কম শিক্ষিত তারা কি এসব কথা মানবে? এ সময় আপাতত এই রুটে নতুন চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। সভায় আতিকুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যাকা-ের পর ২৮ মার্চ আমার গুলশানের অফিসে ৫৮ জন ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে করা বিশেষ বৈঠকে সকল বাসের ড্রাইভারদের পোশাক পরিধান করার ওয়াদা করেন পরিবহন নেতা কালাম। একইসঙ্গে সকল বাসেই বাধ্যতামূলকভাবে ড্রাইভারের নাম ঠিকানা লাইসেন্স নাম্বারসহ মোবাইল নাম্বার দেয়ার জন্য ছাত্ররা দাবি জানালে উপস্থিত পরিবহন নেতা তা মেনে নেন। এ সময় খন্দকার এনায়েত বলেন, আমরা এমনিতেই ড্রাইভার পাই না তাহলে দিনে ২ জন ড্রাইভার কোথায় পাব ? সবার নাম্বার কিভাবে দেব? কারণ সকাল বিকাল ড্রাইভারগণ চাকরি ছাড়েন এই উদ্যোগ কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব? তিনি বলেন,আর পোশাক পরলে কোন চালক দুর্ঘটনা ঘটালে সকল পোশাক পরা চালকদের ধরে ধরে জনগণ মেরে ফেলবে। তাই এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আগে চালক প্রশিক্ষণ দিতে হবে তারপরই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। সভায় রাজধানীতে চলাচলকারী সকল বেসরকারী বাসকে ক্রমান্বয়ে রং করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এ সময় পরিবহন নেতারা তা মেনে নেন। সভা শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দক্ষিণ সিটিতে চলাচলকারী চক্রাকার বাস সার্ভিসের সকল সুবিধা পর্যবেক্ষণ করছি। এসব বাসের চলমান সকল সমস্যা দেখেই পরবর্তীতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে প্রাথমিকভাবে উত্তরা এলাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করব। তাই একটু সময় নিচ্ছি। আমরা চাই নাগরিকদের জন্য স্থায়ী সেবা। প্রসঙ্গত, রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছর সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
×