ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারোলে মুক্ত করতে খালেদার নির্দেশের অপেক্ষায় বিএনপি

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ এপ্রিল ২০১৯

প্যারোলে মুক্ত করতে খালেদার নির্দেশের অপেক্ষায় বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে চায় দলের একটি বড় অংশ। আর অপর অংশটি চায় আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত করতে। এ নিয়ে দলের নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। এ পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে খোদ খালেদা জিয়ার নির্দেশের অপেক্ষায় বিএনপি। তাই যত দ্রুত সম্ভব দলের ক’জন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা চাইবেন। নির্দেশ পেলে দ্রুত খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে আবেদন করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে এ দলটিকে বেশ ক’টি শর্ত মানতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয় দল থেকে এমন কোন কাজ না করা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে নির্বাচিত ৬ জনকে শপথ নিয়ে সংসদে যোগদান, রাজপথে কোন নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী পালন না করা, এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন নেতিবাচক প্রচার না করা ইত্যাদি। দলের উদারপন্থী নেতারা বিশেষ করে যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছে তাদের এসব শর্তের বিষয়ে তেমন আপত্তি না থাকলেও কট্টরপন্থী নেতারা এসব শর্ত মেনে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে নারাজ। আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে এতদিন বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি বিএনপি। সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাকর্মী ও খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজনরা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছেন আইনী লড়াইয়ে তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। আপাতত তাঁর জামিনও হচ্ছে না। এ ছাড়া তার শারীরিক অবস্থাও ভাল নয়। এ পরিস্থিতিতে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করে হয় দেশের ইউনাইটেড হাসপাতাল না হয় লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। তা করা গেলে চিকিৎসার পাশাপাশি দল পরিচালনার জন্য খালেদা জিয়ার নির্দেশনাও নেয়া যাবে। জানা যায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে বেশ ক’দিন আগে থেকেই বিএনপির ভেতরে আলোচনা চলতে থাকে। তবে সোমবার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার পর এ আলোচনা আরও জোরালো হয়। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলের একটি বড় অংশ খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করার পক্ষে। তবে দলের অপর অংশটি চাচ্ছে প্যারোলে মুক্ত না করে আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা যায় কি কিনা সে বিষয়ে আরও চেষ্টা করতে। তবে গুরুতর অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার কথা বলে তাকে প্যারোলে মুক্ত করার জন্য নানামুখী কৌশল নিচ্ছে দলটির বড় অংশ। অভিজ্ঞ মহলের মতে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর তা করতে হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুমতি লাগবে। এ ছাড়া এ অনুমতি পেলেও প্যারোলে মুক্তির পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কি দেশে হবে না বিদেশে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খালেদা জিয়াকে আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত ও জামিন চান যেসব বিএনপি নেতারা তারা এখন হতাশ। কারণ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতি প্রমান করে যেভাবে ১০ বছরের সাজার রায় দেয়া হয়েছে তাতে তাঁর মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর এক মামলায় জামিন পাওয়া গেলেও তাঁকে আরেক মামলায় আটকে রাখা হবে। কারণ খালেদা জিয়ার নামে বেশ ক’টি মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলন করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো পরিস্থিতিও বিএনপি তৈরি করতে পারছে না। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কেউ রাজপথে আন্দোলনে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। যদিও মাঝেমধ্যে দলের নেতারা আন্দোলনের হুমকি দেন। অবশ্য খোদ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেও তার মুক্তির পক্ষে জোরালো আন্দোলন চান না। ২০১৫ সালের নেতিবাচক আন্দোলনের পর বিএনপি সম্পর্কে দেশ-বিদেশে যে নেতিবাচক প্রচার হয়েছে সে কারণেই তিনি এ অবস্থান নিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর এক বছর ২ মাস সময় অতিক্রম করলেও তাঁর মুক্তির জন্য দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কঠোর কোন কর্মসূচী পালন না করায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দলের লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বারবার কঠোর আন্দোলনের পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তারপরও দলটি আন্দোলন করতে পারছে না। অবশ্য খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত কয়েক দফা গতানুগতিক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, মানববন্ধন, গণঅনশন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচী। তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এসবকে দায়সারা কর্মসূচী বলে অভিহিত করেছে। কারণ এ পর্যন্ত যেসব কর্মসূচী পালন করেছে তা সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ কর্মসূচীতেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীই তার সুচিকিৎসা দাবি করে আসেন। এ পরিস্থিতিতে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে কেবিনে ভর্তি করা হয়। তবে বিএনপি নেতারা চাচ্ছেন তাকে আবার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার আগেই প্যারোলে মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে। আর এ জন্যই তারা নতুন উদ্যমে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
×