ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবু মুহাম্মাদ বাঙ্গালি বাংলাদেশে নতুন খলিফা

আইএসের অস্তিত্ব খুঁজতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২ এপ্রিল ২০১৯

আইএসের অস্তিত্ব খুঁজতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বাংলাদেশ শাখার নতুন খলিফা শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল বাঙ্গালির প্রকৃত পরিচয় কি, এখন কোথায়, বাংলাদেশে আইএস জঙ্গীর অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা, মরিয়া হয়ে তাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিরিয়ার শেষ ঘাঁটি বাঘৌজ পতনের মধ্যেই গত ১২ মার্চ আইএসের মুখপত্র ‘আত তামক্বিন’-এর একটি সংখ্যায় বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের বাংলাদেশ শাখার নতুন খলিফা শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-বাঙ্গালি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ও বাংলাদেশী যারা আইএস জঙ্গী হয়ে দেশ থেকে নিখোঁজ হয়েছিল তারা আইএসের শেষ ঘাঁটি পতনের পর দেশে ফিরে আসতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই এ অঞ্চলের বাংলাদেশ শাখার নতুন খলিফার নাম ঘোষণার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এই ধরনের আশঙ্কা থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের হয়ে লড়াই করতে সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশী জঙ্গীরা দেশে ফিরতে পারে সেজন্য বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আবু আল বাঙ্গালি নামে নিজেদের অন লাইন গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কাফেরদের ওপর হামলা চালানোর পোস্ট দেয়ার পর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগে রাজধানী ঢাকার চার্চ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কূটনৈতিক পল্লীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর স্থানে নিরাপত্তা জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারি ও সতর্ক দৃষ্টি রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিরিয়ার বাঘৌজে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতনের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ)। জঙ্গী সংগঠনটি নতুন করে কোন জায়গায় সম্প্রসারণ করবে নাকি বিলুপ্ত হবে, সেই আলোচনার মধ্যেই বাংলাদেশে এর ‘খলিফা’র নাম ও নির্দেশনা প্রকাশ পাওয়ার ঘটনাটি জঙ্গী গোষ্ঠীর তৎপরতার জন্য একটি অশনিসংকেত। ১২ মার্চ আইএসের মুখপত্র ‘আত তামক্বিন’-এর একটি সংখ্যায় বলা হয়েছে, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল বাঙ্গালি এ অঞ্চলের নতুন খলিফা। এর আগে এ অঞ্চলের খলিফা হিসেবে নাম এসেছিল আবু ইব্রাহীম আল হানিফের। আবু ইব্রাহীম আল হানিফ কে তা নিয়ে অনুসন্ধান করা হলেও তার অস্তিত্ব এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। আইএস মুখপত্র আত তামক্বিন-এ আবু মুহাম্মাদ আল-বাঙ্গালি নিজেকে খলিফার পক্ষ থেকে নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করেছে। সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে জঙ্গী সংগঠনটির কর্মী-সমর্থক নিহত হওয়ার বদলা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কীভাবে বদলা নিতে পারে, সে বিষয়েও সাক্ষাতকারে নির্দেশনা আছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কে এই আবু মুহাম্মাদ আল বাঙ্গালি, সে সম্পর্কে তারা এখনও নিশ্চিত নয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কে এই বাঙ্গালি ॥ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আইএস-এর মুখপত্র দাবিক-এর সর্বশেষ সংস্করণে এমন একজন বাংলাদেশীর নাম উঠে এসেছে যে সিরিয়ায় আইএসের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দাবিক-এর সংস্করণে ওই বাংলাদেশীর প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও প্রকাশ করা হয়েছে। তার ছদ্ম নাম; আবু জান্দাল আল-বাঙ্গালি। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা। দাবিক এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হচ্ছে, আবু জান্দাল ঢাকার এক ধনী পরিবারের সন্তান। তার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অফিসার, যিনি ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হন। দাবিক বলছে, কিশোর বয়স থেকেই আবু জান্দাল ইসলামী জিহাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই বিষয়ে সে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করত এবং জিহাদের সমর্থনে অর্থও প্রদান করত। এক পর্যায়ে সে আইএস-এ যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দাবিক জানাচ্ছে, জান্দাল সব সময়ই আল্লার পথে লড়াই করতে গিয়ে জীবন দেয়ার কথা ভাবত। সে বলত ‘আমার বাবা জীবন দিয়েছেন সহকর্মীদের প্রতি তার অঙ্গীকারের কারণে। আমি জীবন দেব কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য।’ দাবিকের ভাষ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরুর সময়ে বাংলাদেশে আইএসের একেবারে শুরুর দিককার সৈনিক ছিল জান্দাল। জিহাদী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে সে ছিল নিবেদিত প্রাণ। তবে ইসলাম নিয়ে আলাপ-আলোচনাতেই সন্তুষ্ট থাকত না জান্দাল। সে বিশ্বাস করত কাজে। আইএসের দাবি, আল্লাহর পথে নিজের জীবন সমর্পণ করতেই সে সিরিয়ায় হিজরত করে। সিরিয়ায় যাওয়ার পথটি খুব সহজ ছিল না আবু জান্দালের জন্য। দাবিকের দাবি অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে একটি সম্মেলনে যোগদানের ছুতা ধরে সে সিরিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু যেহেতু বেশ কিছু দিন ধরে সে কলেজের ক্লাসে যাচ্ছিল না, তাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশপত্র পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। শেষ পর্যন্ত কলেজের প্রিন্সিপালের লিখিত সুপারিশপত্র জাল করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়। দাবিক মনে করছে, আল্লাহর পথে লড়াই করতে গেছে বলেই তার জাল সুপারিশপত্র ধরা পড়েনি। আবু জান্দালকে নিয়ে দাবিক প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ব্যাপারটা জানাজানি হলে বাংলাদেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত আবু জান্দালের এক মামা তার যাত্রা রোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর আবু জিন্দাল অন্যান্য বাঙালী জিহাদীর সঙ্গে যোগ দেয়। দাবিকের নিবন্ধে বলা হয়েছে, সিরিয়ার আইন ইসা এলাকায় এক লড়াইয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে জরুরী ভিত্তিতে মেডিক্যাল সেবা দেয়ার চেষ্টা হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। তবে তার সিরিয়া যাত্রা কিংবা মৃত্যুর দিন-তারিখ সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের অক্টোবরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম নরসিংদীতে ‘গর্ডিয়ান নট বা জটিল গেরো’ নামের যে অভিযান পরিচালনা করে সেই অভিযানেই প্রথম তাদের কানে আসে আবু মুহাম্মাদ আল বাঙ্গালির নামটি। ওই অভিযানে দুজন নিহত হয়। পুলিশের ধারণা ছিল, অভিযানে নিহত এক জঙ্গীর নাম আবু আল বাঙ্গালি ও অন্যজনের নাম আকলিমা আকতার মনি। কিন্তু নরসিংদীর ঘটনার সূত্র ধরে তারা নতুন এই খলিফাকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। আইএস জঙ্গী সংগঠন ॥ জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার দুর্ধর্ষ নামটি কেড়ে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। পতনের আগ পর্যন্ত বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধষ জঙ্গী সংগঠন আইএস। শুরুতে এর নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)। এর প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে। পরে এর নাম পরিবর্তন করে আইএস রাখা হয়। আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। বাগদাদের উত্তরে সামারা এলাকায় ১৯৭১ সালে তার জন্ম। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলা শুরু হলে এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দেন বাগদাদি। ২০১০ সালে আল-কায়েদার ‘ইরাক শাখার’ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এই সংগঠন পরে আইএসআইএলে পরিণত হয়। ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযান ও পরবর্তী দখলদারিত্বের পর যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তারই প্রেক্ষাপটে জন্ম এ সংগঠনের। যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়া এবং রণকৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে দক্ষতা রয়েছে বাগদাদির। বিশ্লেষকেরা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অভিনব কৌশল আইএসকে তরুণদের মধ্যে আল-কায়েদার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। আল-কায়েদার নেতৃত্বে আছেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা জঙ্গীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই আইএসের সিরিয়া শাখায় যোগ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় অন্য দেশ থেকে আইএসে অনেক তরুণ যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব অঞ্চলের যোদ্ধারাও রয়েছে। আইএসের বেশ কিছু সামরিক বিজয় রয়েছে। শুরুতে সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল) হলেও পরে এর নাম পরিবর্তন করে আইএস রাখা হয়। ইরাক ও সিরিয়াÑ দুই দেশে সুন্নিদের বঞ্চনাকে পুঁজি করে আইএসের বিস্তার ঘটতে থাকে। ২০১৩ সালে মার্চে সিরিয়ার রাকা দখল করে নেয় আইএস যোদ্ধারা। রাকাকেই তাদের মূল ঘাঁটি বা রাজধানী মনে করা হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আইএস দখল করে সুন্নি-অধ্যুষিত ইরাকি শহর ফালুজা। এক সময় ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে যায়। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকবলিত ইরাকের বিশৃঙ্খল অবস্থা ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আইএসের সাফল্যের বড় কারণ। যে এলাকাই এরা দখলে এনেছে, সেখানেই তারা কঠোর শাসন ও নিষ্ঠুরতার প্রমাণ রেখেছে। পশ্চিমা হামলার মুখে দীর্ঘদিন ধরেই দৃঢ়তা দেখায় আইএস। ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল দখলের আগে আইএসের অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। এরপর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ডলার। উত্তর ইরাকের তেলক্ষেত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের পর সেখান থেকে প্রচুর অর্থ আয় করে তারা। এ ছাড়া দেশী-বিদেশী বন্দীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় তাদের আয়ের আরেকটি উৎস। বলা হয়, ২০১৪ সালে জিম্মি করে সংগঠনটি দুই কোটি ডলার আয় করে। মসুলে যেসব খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী এলাকা ছাড়তে পারেনি, তাদের ওপর কর বসায় আইএস। ইরাক ও সিরিয়া দুই দেশেই সুন্নিদের বঞ্চনাকে পুঁজি করেই আইএসের বিস্তার ঘটতে থাকে। ইরাকে মার্কিন হামলায় সুন্নি সাদ্দাম হোসেনের পরাজয়ের পর সুন্নিরা জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। সিরিয়ায়ও সরকারবিরোধী সুন্নিদের হাত করে নেয় আইএস। ২০১১ সালে সিরিয়ায় শুরু হওয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী আন্দোলন আইএসকে সেখানে তাদের কর্মকা- সম্প্রসারিত করার বড় সুযোগ এনে দেয়। আইএসের জঙ্গীরা আল-কায়েদা থেকেই উঠে আসা। কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। এ দ্বন্দ্ব আদর্শিক। আল-কায়েদার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও এর অন্য পশ্চিমা মিত্ররা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে পরিচিত সৌদি আরব ও মিসরেরও বিরোধী। তবে আইএসের মূল লক্ষ্য নতুন নতুন এলাকা দখল এবং অতীতের খিলাফতের অনুকরণে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তবে ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে লিবিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের ওপর আইএসের প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। শামীমাকে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল ॥ সিরিয়ার সর্বশেষ ঘাঁটি ‘বাঘৌজ’-এর পতনের মধ্য দিয়ে জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৫ বছরের ‘খিলাফত’-এর অবসান হয়েছে। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক এই জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা নানা দেশে আশ্রয় খুঁজছে। আইএসের কোন সদস্য যাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা জারি করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আলোচনায় আসে আইএস জঙ্গী গোষ্ঠীটির জঙ্গীরা। পুলিশ বলছে, গত শনিবার সিরিয়ায় আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটির পতন হয়। সেখানে মার্কিন সমর্থিত বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) হাতে আটক ৮শ’ বিদেশী জঙ্গীর বন্দী হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আটক এসব বন্দীকে নিজ নিজ দেশে নিয়ে তাদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আইএস নারী জঙ্গী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শামীমাকে দেশে পাঠাতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্য। আমরা তাতে রাজি হইনি। মূলত আইএস জঙ্গীদের সর্বশেষ ঘাঁটি পতনের পর তারা বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশে জঙ্গীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিমানবন্দরগুলোকে বেশি করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া জঙ্গীদের কেউ কেউ দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। বিমানবন্দরগুলোতে আগেই তাদের ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া হয়েছে। তারা যেন কোনভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে না পারে, সে বিষয়টি বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আবারও বিমানবন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করতে পারে। তাই দূতাবাসকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আবু আল বাঙ্গালির খোঁজে গোয়েন্দারা ॥ আবু আল বাঙ্গালির খোঁজে মরিয়া গোয়েন্দারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তার সম্পর্কে বিশদ কোন তথ্য পাচ্ছেন না তারা। তবে গোয়েন্দাসূত্রের মতে আবু আল বাঙ্গালি বাংলাদেশে জঙ্গীবাদকে চাঙ্গা করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। সে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস’র হয়ে কাজ করছে আবার কারও মতে সে ঝিমিয়ে পড়া নব্য জেএমবির হাল ধরেছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এর আগে বাংলাদেশী এক এক তরুণ তুরেস্ক গিয়ে আইএস এ যোগ দেয়। আইএস তার নাম দিয়েছিল আবু জান্দাল আল বাঙ্গালি। ওই সময় ওই তরুণ তুরস্কে যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলিশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার দায়ভার স্বীকার করে আইএস তাদের মুখপত্র দাবিবে এক নিবন্ধ প্রকাশ করে। পাশপাশি তারা বাংলাদেশে বারবার জঙ্গী হামলা করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়। একাধিকবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টাও করে তারা। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর দাবি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাদের প্রতিটি পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গত আড়াই বছরে জঙ্গী মাস্টারমাইন্ড মেজর জাহিদ, তামিম চৌধুরী, তানভির কাদেরী, মারজান অর্ধশত চিহ্নিত জঙ্গী নিহত হলে ভেস্তে যায় বাংলাদেশে আইএস’র সব পরিকল্পনা। তারা সদস্য স্বল্পতায় অনেকটা অক্ষম হয়ে পড়ে। আইএস নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার বিষয়টিকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে মরিয়া। তারা বিশ^ব্যাপী এর উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে মাঠে নেমেছে। ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে ডেইলি নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইএসের জ্যেষ্ঠ নেতা আল মুজাহির অডিও বার্তায় বলেন, ‘দুই মসজিদে গণহত্যার এই দৃশ্য দেখে বোকা মানুষদের এবার জেগে ওঠা উচিত। আর তাদের ধর্মের ওপর এমন হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য খিলাফতের (আইএস) সদস্যদের উৎসাহিত করা উচিত।’ আল মুজাহির এই গণহত্যাকে সিরিয়ায় তাদের শেষ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে চালানো গণহত্যার তুলনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই যে সিরিয়ার বাঘৌজ, সেখানেও মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে, বোমাসহ পরিচিত অপরিচিত সব গণহত্যার অস্ত্র দিয়ে। মুসলিমদের ওপর এমন গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, দীর্ঘ ছয়মাসের নীরবতা ভেঙ্গে আল মুজাহির প্রতিশোধের কথা আহ্বান জানালেন। আইএসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন নৃশংস হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সব মুসলিমদের আইএস যোদ্ধাদের সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশকেও টার্গেট করেছে কিনা সেই উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কোন সদস্য সক্রিয় হলে আইএস সাধারণত তার নামের পাশে বা কোন ছদ্ম নাম দিয়ে শেষে আল বাঙ্গালি ‘টাইটেল দিয়ে থাকে। সম্প্রতি হুমকি দেয়া আবু আল বাঙ্গালির নামও আইএস’র দেয়া একটি ছদ্মনাম কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আত্মগোপনে থেকেও জঙ্গীরা ক্রাইস্টচর্চের মসজিদে হামলার পর নিজেদের অনলাইনে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। নব্য জেএমবির সদস্যরা এ অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা প্রথমত হামলা পরিকল্পনা করছে দ্বিতীয়ত অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সংগঠনকে চাঙ্গা রাখার জন্য। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে জঙ্গী হামলা এবং আইএসের প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশে অব্যাহত পুলিশী অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গীরা নড়চড়া শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের পুলিশ র‌্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
×