ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট শুরু শুক্রবার

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৭ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট শুরু শুক্রবার

মিথুন আশরাফ ॥ সাকিব আল হাসান থাকছেন না। মুশফিকুর রহীমকে নিয়েও আছে সংশয়। প্রথম টেস্টেও ছিলেন না এই দুইজন। শুক্রবার ভোর চারটায় শুরু হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট। ওয়েলিংটনে শুরু হতে যাওয়া এই টেস্টেও সাকিব, মুশফিককে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ও ৫২ রানে হার হয়েছে। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবালের ১২৬ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে সৌম্য সরকারের ১৪৯ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৪৬ রানের অসাধারণ ইনিংসে ৪২৯ রানও করা গেছে। কিন্তু এরপরও ইনিংস হার এড়ানো যায়নি। যদি সাকিব ও মুশফিক থাকতেন তাহলে হয়তো ফল অন্যরকমও হতে পারত। কিন্তু প্রথম টেস্টে তারা ছিলেন না। দ্বিতীয় টেস্টেও থাকছেন না। তাতে করে দল সেই দুর্বল হয়েই থাকছে। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এরই মধ্যে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে হারলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে যাবে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই এবারের নিউজিল্যান্ড সফরেও টেস্ট সিরিজ হার হয়ে যাবে। হাতে থাকবে আর এক টেস্ট। সেই টেস্টটি হারলে নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজের পর টেস্ট সিরিজের হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশের সামনে সিরিজ হার এড়ানোর মিশনও অপেক্ষা করছে। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ হার আপাতত এড়ানো কী সহজ? নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ড যে কি দুর্বার দল তাতো তিন ওয়ানডে ও এক টেস্টেই বোঝা হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে পেলেতো বরাবরই নিউজিল্যান্ড তুখোড় দল হয়ে ওঠে। এবারও তাই হচ্ছে। তবে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে তামিমের পর সৌম্য ও রিয়াদ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তা থেকে প্রেরণা মিলছে। ওপেনার সাদমান ইসলাম যেমন বলেছিলেন, ‘হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। চেষ্টা করব ওয়েলিংটন টেস্টে সেই ধারাটা অব্যাহত রাখতে। আশাকরি ব্যাটসম্যানরা সবাই বুঝতে পেরেছে প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে কোন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে।’ সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের দুই পেসার নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্টকেও সামলানোর প্রতিশ্রুতি ছিল সাদমানের কণ্ঠে, ‘ওয়াগনারকে প্রথমবারের মতো খেলেছি। প্রথম টেস্টে খেলার অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় টেস্টে কাজে লাগবে। তামিম-সৌম্য ভাইয়ের ব্যাটিং দেখে আমরা শিখেছি কিভাবে ব্যাটিং করতে হবে। আশাকরি কাজে লাগবে এই অভিজ্ঞতা।’ ওয়েলিংটনে প্রচুর বাতাস থাকে। আবার বুঝে ব্যাটিং করা গেলে বড় ইনিংস খেলা যায়। বড় জুটিও গড়া যায়। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে এক ইনিংসে ৫৯৫ রান ও সাকিব-মুশফিক মিলে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। সাকিব আবার ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন। মুশফিক ১৫৯ করেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে যদি বুঝে ব্যাটিং করা যায়, একটু থিতু হওয়া যায় তাহলে ভাল কিছু আসতে পারে। সেই আশা করছেনও বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু শুধু ব্যাটসম্যানদের ওপর হাল ছাড়লেই হবে না। এবার বোলারদেরও কিছু করে দেখাতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মতো পেসনির্ভর উইকেটে যেখানে কিউই পেসাররাই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে পারছেন সেখানে বাংলাদেশ পেসাররা কিছুই করতে পারছেন না। নিউজিল্যান্ডের উইকেটেই যদি কিছু না করা যায় তাহলে কোথায় করবে? সেই প্রশ্নও উঠছে। হ্যামিল্টনে মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন না। তবে এবার বাতাসের সুবিধা নিতে মুস্তাফিজকে একাদশে দেখা যেতে পারে। তাতে করে হয়তো আবু জায়েদ রাহী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেনের মধ্যে খালেদ ও এবাদতের যে কোন একজনকে একাদশের বাইরে থাকতে হতে পারে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজকে নিয়ে এবার আশা দেখা হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে তামিম, সাদমান, মুমিনুল, মিঠুন, সৌম্য, মাহমুদুল্লাহ, লিটন, মিরাজের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। মুমিনুল টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। কিন্তু প্রথম টেস্টে নজর কাড়তে পারেননি। দ্বিতীয় টেস্টে তারদিকে দৃষ্টি থাকছে। তামিম ও সাদমানতো প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই শুরুটা ভাল করেছেন। প্রথম ইনিংসে ৫৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৮ রানের জুটি গড়েছেন। এ দুইজনের কাছ থেকে বিশেষ করে সাদমানের কাছ থেকে জুটি এবং ইনিংস আরও বড় হবে সেই আশা করা হচ্ছে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে না পারা মিঠুন প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছেন। যদি মুশফিক শেষ পর্যন্ত না খেলেন তাহলে মিঠুনও থাকছেন। মিঠুনের দিকেও তাই নজর থাকছে। সৌম্য, মাহমুদুল্লাহতো বুঝেই গেছেন কিভাবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলতে হয়। তবে লিটন ও মিরাজের কাছ থেকে বড় ইনিংস মিলবে সেই ভরসাও করা হচ্ছে। যদি ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন তাহলে ওয়েলিংটন টেস্টে ভাল কিছু মিলতে পারে। আর না মিললে প্রথম টেস্টের মতো হালই হতে পারে। নিউজিল্যান্ড অবশ্য খেলতে নামার আগেই একধাপ এগিয়ে থাকছে। বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব যে থাকছেন না। মিডলঅর্ডারের সেরা কা-ারি মুশফিকের থাকাও শঙ্কায় পড়ে গেছে। তিনি অনুশীলন করলেও ব্যাটিং স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারেননি। তাছাড়া প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও বলে দিয়েছেন, ‘মুশি (মুশফিক) ফিট হয়ে ওঠার জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছে। আজ (বুধবার) ছিল তার প্রথম আসল অনুশীলন। টেনিস বল, রাবার বল ও ক্রিকেট বলের মুখোমুখি হয়েছে। ক্রিকেট বল খেলার সময় সে লিগামেন্টে ব্যথা টের পেয়েছে। যার অর্থ দ্বিতীয় টেস্টে তার খেলা ভীষণ সংশয়পূর্ণ। এ জন্য রাতারাতি সুস্থ হতে হবে। আমরা সবসময়ই মুশফিকের অপেক্ষায় আছি।’ ওয়েলিংটনে সর্বশেষ বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিক দ্বিতীয় টেস্টে না থাকা মানে বাংলাদেশ দুর্বল হয়ে পড়া, নিউজিল্যান্ডের শক্তি আরও বেড়ে যাওয়া। দুর্বল বাংলাদেশও অনেক সময় জবাবটা ভালই দেয়। শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টেও জবাব দিক বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশাই আছে।
×