ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসন নীরব

কপোতাক্ষে ভূমিদস্যুদের থাবা

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

কপোতাক্ষে ভূমিদস্যুদের থাবা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চৌগাছা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের অস্তিত্ব ও বিলীন হতে চলেছে। ভূমি দস্যুরা নদের জমি দখল করে বাড়িঘর, এমনকি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে চলেছে। প্রশাসন রহস্যজনক কারণে ওইসব ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। রয়েছে রাজনৈতিক জটিলতাও। ফলে নদটি দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। কেশবপুরের সাগরদাড়ি গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার শৈশব কাটিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ফ্রান্সে থাকা অবস্থায় শৈশবের কথা স্মরণ করে কপোতাক্ষ নদ’ নামে চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করেন। সেই কপোতাক্ষ নদ এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। কপোতাক্ষ নদ ভৈরব নদীর একটি শাখা। দ্র্রাবিড়পূর্ব জনগোষ্ঠীর ‘কবদাক’ সংস্কৃত ভাষা থেকে কপোতাক্ষ শব্দে রূপান্তরিত হয়। ইছামতী নদী চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি শাখা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত, যা ভৈরব নদ নামে পরিচিত। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের দক্ষিণে ভৈরব থেকে একটি শাখা বের হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছার কাছে শিবসা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভৈরবের এ শাখাই কালপরিক্রমায় কপোতাক্ষ। এ নদের পানি কপোত বা কবুতরের অক্ষির (চোখ) মতো স্বচ্ছ ছিল বলে নাম হয় কপোতাক্ষ। তবে প্রকৃতপক্ষে, কপোতাক্ষের উৎপত্তি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এক সময় এ নদটি ৭শ’ ৫০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত ছিল। নদের দৈর্ঘ্য ছিল ২৬০ কিলোমিটার। স্থানীয় মানুষ জানান, এক সময়কার প্রমত্তা কপোতাক্ষ নদ ছিল এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র আশা ভরসা। জীবন জীবিকার প্রধান উৎস ছিল কপোতাক্ষ নদ। এ নদ দিয়ে নৌকা যোগে বিভিন্ন পণ্য আমদানি রফতানি করা হতো। নদ সংলগ্ন গ্রাম এলাকার হাজার হাজার মানুষ কপোতাক্ষ নদ থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবন চালাতেন। কিন্তু এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মূল ভিত্তি কপোতাক্ষ নদ এখন কালের বিবর্তনে মৃত প্রায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূমি দস্যু ও লোলুপ দৃষ্টি ভঙ্গির মানুষ যুগযুগ ধরে কপোতাক্ষ নদকে নানাভাবে ধ্বংস করে যাচ্ছে। প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেই অসাধু ব্যক্তিদের সাহস সীমাহীনভাবে বেড়ে গেছে। তারা নির্দ্বিধায় কপোতাক্ষ নদে দখলযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ ২০টি উপজেলা, ১০টি পৌরসভা ও ৯৫টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর মধ্যে চৌগাছার তাহেরপুর থেকে ছুটিপুর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলায় নদের অবস্থান রয়েছে প্রায় ২৩ কিলোমিটার। দেখা গেছে, ভূমিদস্যুরা নদের জমি দখল করে কপোতাক্ষ নদ গ্রাস করে ফেলেছে। কোন স্থানে তৈরি করা হয়েছে উঁচু প্রাচীর, অবৈধ স্থাপনা। অনেক স্থানে নদের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কোন কোন স্থানে নদের বুকে পাটাতন ও কিছু জায়গায় নদকে অবৈধভাবে দখল করে বসবাসের স্থান তৈরি করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়তই নদের জমি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। চৌগাছার নারায়নপুর, পেটভরা, টেঙ্গুরপুর, চৌগাছা, কংশারিপুর, দিঘলসিংহা, মাশিলা, কদমতলা, কাবিলপুর, খলশিসহ অনেক স্থানে নদের জমি দখল করা হয়েছে। এমনও দেখা গেছে নদের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে পুকুর। চৌগাছা বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নদের জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে আবাসন ও বহুতল ভবন। চৌগাছা উপজেলা অংশে নদের সীমানার মধ্যে শতাধিক স্থানে বাঁশের পাটাতান দেয়া হয়েছে। ফলে নদের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদের গতিস্র্রোত নষ্ট হওয়ার ফলে কিছু কিছু স্থানে পট কচুরিপানার সৃষ্টি হয়ে নদ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদ পাড়ের জেলে অমল জানান, নদ আর নদ নেই। এই নদে সরকারীভাবে প্রতিবছর মাছ অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করে। ফলে গরিব জেলেরা এ মাছ আহরণ করতে পারে না। অবৈধভাবে নদ দখল বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলম বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দ্রুত কপোতাক্ষ নদকে দখলমুক্ত করব। ইতোমধ্যে অবৈধ দখলকারীদের নাম ঠিকানা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রথমে আমরা তাদের নোটিস করব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দেশনা না মানলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×