ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক বিশ্ব সাড়া দেয়নি ॥ কাদের

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা সফল হয়নি বিএনপির

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা সফল হয়নি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার অবস্থান থেকে দলটিকে সরে এসে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এটা তাদের শেষ কথা কিনা জানি না। তবে আমি তাদের আহ্বান জানাবো নির্বাচনে আসার জন্য। কারণ গত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপেও তাদের বেশিরভাগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এবারের নির্বাচনও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সোমবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। নানা নাটকিয়তা শেষে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। যদিও আশানুরূপ ফল পায়নি নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত এই জোট। তবে আট আসনে জয় পেলেও তারা এখন পর্যন্ত শপথ নেননি। বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিতে নারাজ ছিল। শেষ পর্যন্ত অংশ নেন দলটি। তাদের প্রার্থী সিলেট সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ী হয়। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলটি অংশ নেবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। গণফোরামের দুই প্রার্থীর শপথ গ্রহণের গুঞ্জনের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণফোরামের দুই প্রার্থী শপথ গ্রহণ করবেন বলে শুনেছি। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। কারণ জয়ী হয়ে শপথ না নেয়া ভোটারদের প্রতি অসম্মান করা। বিজয়ীরা সংসদে আসবেন, কথা বলবেন, এতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। কারণ গণতন্ত্র এক চাকার সাইকেল নয়। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল কারও দয়ায় নির্বাচিত হননি। তিনি সংসদে না গেলে নিজেকে বঞ্চিত করবেন। ভোটারদের বঞ্চিত করবেন। এ সময় ১৪ দলের নেতাদের দুঃসময়ের বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৪ দল আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। সুসময়ে তাদের ভুলে যাব তা ঠিক নয়। সংসদে তাদের ভূমিকা কি হবে এটি তাদের বিষয়।’ কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই সংসদে গিয়ে অধিবেশনে যোগ দেয়া তার অধিকার। তিনি সংসদে না গেলে নিজেকে বঞ্চিত করবেন। ভোটারদের বঞ্চিত করবেন। এটা গণতান্ত্রিক চর্চার বিরুদ্ধাচরণ। আর বিএনপি মহাসচিব যদি বলেন পক্ষপাতমূলক নির্বাচন হয়েছে। তাহলে তিনি কি পক্ষপাতমূলকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন? তিনি কিভাবে নির্বাচিত হলেন? তিনি কারও দয়ায় নির্বাচিত হয়নি। এটা তার অধিকার। তাকে ফোন করে আনতে হবে কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ‘শুভেচ্ছা বিনিময় ও চা-চক্রে’ বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা যাবে না জানিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ঐক্যফ্রন্টসহ ৭৫টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা কেন আসবেন না এটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা আসতে পারেন। এটা একটা গার্ডেন পার্টি। জাস্ট ভিউজ এক্সচেঞ্জ (শুধু মতামত বিনিময়) করতে পারেন তারা। শুভেচ্ছা বিনিময় মূলত প্রোগ্রাম, আর একটু চা-টা খাবেন একসঙ্গে। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলা যাবে। তবে আনুষ্ঠানিক কোন সংলাপ নয়। শুভেচ্ছা বিনিময়ে করতে গিয়েও তো অনেক কথা বলা যায়। তিনি বলেন, দেখুন এই নির্বাচন ভাল গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহও দেখিয়েছেন। ফলে বিএনপি কেন বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে এটা বোধগম্য নয়। অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ভারত, চীনের পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশগুলো অনেক আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন বিএনপি যে চেষ্টাটা করছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, সেটাতে কিন্তু তারা ফেল করেছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হয়নি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তারা চিঠি লিখেছে। তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। উল্টো সবাই নির্বাচিত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট যে ক’টা আসনই পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তাদের সংখ্যা কত সেটা আমরা দেখব না। তারা যদি যুক্তিসঙ্গত কোন বিষয় সংসদে উপস্থাপন করে, তাহলে আমরা সেটা বিবেচনা করব।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে দুই দফা সংলাপ করেছি। ফলে তাদের আমরা আগেও গুরুত্ব দিয়েছি। এখানে তারা এলে আলাপ আলোচনা হতে পারত। কিন্তু তারা যেভাবে বিষয়টিতে রিএ্যাক্ট করেছেন, সেটা তাদের স্বভাবসুলভ নেতিবাচক রাজনীতি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, বিএনপি তাদের নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। তারা যদি অংশ না নেয় তাহলে আমরা কি তাদের জোর করে আনব? বিএনপি তো গেলো পাঁচ বছরও সংসদে ছিল না। সংসদ চলেনি? পৃথিবীর কোন দেশে ‘পারফেক্ট’ নির্বাচন হয়েছে? এমন প্রশ্ন ফের তুলে কাদের বলেন, বাঘা বাঘা দেশেও নির্বাচন নিয়ে কথা উঠেছে। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেটা ব্যাপার নয়। সেটাতে বৈধতার কোন সঙ্কট নেই। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আপনার বইয়ে লিখেছেন একসঙ্গে দুইবার এই দেশে কোন দলই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আপনার বইয়ে এমন একটি কথা কয়েকবার এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলো, তাহলে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি ভুল? এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, দৃশ্যপট সবসময় এক থাকে না। আমি যখন লিখেছি তখন প্রেক্ষাপট তেমনই ছিল। এটা তো জনমতের ওপর নির্ভর করে। জনমত যখন পাল্টে গেছে তখন পরিস্থিতি তো পাল্টাতে পারে তাই না?
×