ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘আলোর ফেরিওয়ালা’ মনিরামপুরে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক!

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

‘আলোর ফেরিওয়ালা’ মনিরামপুরে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক!

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়ে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার কার্যকর করতে মনিরামপুরে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে পল্লী বিদ্যুত টিম কাজ করছে। দালালদের খপ্পরের হাত থেকে জনগণের ভোগান্তি কমাতে গত ৬ জানুয়ারি হতে মনিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ দুটি টিম। তবে ভোগান্তি কম হওয়াত দূরের কথা ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিমের বিরুদ্ধে উঠেছে গ্রাহককে প্রতারিত করে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুত সংযোগ দিলেও সংযোগ পাওয়া গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া অর্থের রসিদ দেয়ার কথা থাকলেও তা মানছেন না টিমের সদস্যরা। আর এই ক্ষেত্রে গ্রাহকরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে দিচ্ছে টিম। সোমবার সরেজমিন এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শামছুদ্দিনের বাড়িতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম পৌঁছেছে গত রবিবার দুপুরে। দ্রুত তার বাড়িতে মিটার লাগিয়ে সংযোগ দেয় টিম। এ সময় তারা শামছুদ্দিনের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে তাকে রসিদ দিয়েছে মাত্র ৯৬৫ টাকার। একইভাবে ওই গ্রামের অমল ম-লের বাড়িতে সংযোগ দিয়ে এক হাজার ১৫০ টাকা নিয়েছে টিম। তাকে দিয়েছে ৫৬৫ টাকার রসিদ। একই সময়ে পাশর্^বর্তী মাহমুদকাটি গ্রামের জামাল হোসেনের বাড়িতে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে টিমের সদস্যরা তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তাকে দেয়া হয়েছে ৫১৫ টাকার রশিদ। যশোর-২ মনিরামপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির অফিস সূত্র বলছে, যাদের বাড়িতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ যাবেন। যদি ওই বাড়িতে ঘর ওয়ারিং করা থাকে, সেক্ষেত্রে সংযোগ দিয়ে এক কিলোওয়ার্ট শক্তির বিপরীতে টিম মাত্র ৫৬৫ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি দুই কিলোওয়ার্ট শক্তি হয় বা পাকা বাড়ি হয় সেক্ষেত্রে আরও চার শ’ টাকা গ্রাহককে বেশি দিতে হবে। আর যদি ওয়ারিং করে সংযোগ দেয়া হয় তাহলে সঙ্গে ওয়ারিং-এর সরঞ্জামের মূল্য যোগ হবে। তবে এসব টাকা অবশ্যই ভাওচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। অমল ম-লের ভাই কোমল ম-ল বলেন, ‘সংযোগ দেয়ার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। আমাদের ঘর আগ থেকে ওয়ারিং করা ছিল। ওরা শুধু মিটার বসিয়ে সংযোগ দিয়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা নিয়েছে। আর রসিদ দিয়েছে ৫৬৫ টাকার। বাকি টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে বলেছে অফিস খচর লাগবে।’ কোমলের অভিযোগ, ‘আলোর ফেরিওয়ার কথা শুনে প্রথমে আনন্দিত হইছি। ভাবিছি, এবার হয়ত আর দালালদের টাকা দিতে হবে না। সঠিকভাবে কম খরছে বিদ্যুত সংযোগ পাব। কিন্তু এখন দেখছি, এই টিমের কাজও সেই দালালদের মতোই।’ জামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালিয়ে খাই। আমার বাড়ি বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছি। রবিবার ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ দেখে আনন্দিত হয়ে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যাই। আমার মাটির ছোট্ট একটা ঘর। তারা ঘর ওয়ারিং করে সংযোগ দিয়ে প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। রশিদ দিয়েছে মাত্র ৫১৫ টাকার।’ এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘটনার তদন্তে যান যশোর-২ মনিরামপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির রাজগঞ্জ শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ফাকরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন। যশোর-২ মনিরামপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মৃধা বলেন, ‘গ্রাহকদের হয়রানি কমাতে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম কাজে নেমেছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
×