ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কের কমার্শিয়াল কোর্টে হবে মামলা

ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির মামলা

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির মামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে মামলাকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মামলাটি করা হবে নিউইয়র্কের কমার্শিয়াল কোর্টে। আর মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে আমেরিকার স্বনামধন্য দুই ল’ ফার্ম। তবে ফেডের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল নিউইয়র্কে যায়। সেখানেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোঃ রাজি হাসান বলেন, নিউইয়র্ক সফর আমাদের সাকসেসফুল হয়েছে। মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মামলা করব। কার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফেডের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আরও কিছু তথ্য জোগাড় করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মামলা পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেয়া হচ্ছেÑ প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ডেপুটি গবর্নর বলেন, মামলার রসদ জোগাড় করার জন্য আমরা নিউইয়র্কের স্বনামধন্য দুইটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ওই দুইটি ল’ ফার্মকেই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। আইন মোতাবেক এমন ঘটনায় মামলা করতে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় পাওয়া যায়। সে হিসেবে আর মাত্র ১৯ দিন সময় রয়েছে। এর মধ্যেই মামলার সব কাজ চূড়ান্ত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল নিউইয়র্কে যায়। নিউইয়র্কে প্রতিনিধি দলটি আমেরিকার স্বনামধন্য দুই ল’ ফার্মের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করে। বৈঠকে মামলা পরিচালনা ফি বাবদ ল’ ফার্মের তরফ থেকে ১০ শতাংশ অংশীদারিত্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে দুই পক্ষই নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তবে ফি বাবদ ঠিক কী পরিমাণ অংশ দেয়ার চুক্তি হয়েছে তা জানা যায়নি। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বৈঠকে ল’ ফার্ম দুইটি কোন আইনে মামলা করলে সুবিধা, অসুবিধা, বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে; তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পাশাপাশি তারা একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। ফার্মগুলোর প্রতিবেদন আজমালুল হক কিউসি যাচাই করে দেখেছেন। সব কিছু যাচাই করে রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে মামলা করাকেই শ্রেষ্ঠপথ হিসেবে বিবেচনা করেছে প্রতিনিধি দলটি। প্রাথমিকভাবে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় নিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শেষ সময়ে এসে ফেডের গতিবিধি ও বাংলাদেশের লাভ-লোকসান হিসাব করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের কর্মাশিয়াল কোর্টে মামলা দাখিল করা হবে। ওই দেশের ‘খোয়া যাওয়া বা চুরি যাওয়া’ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হতে পারে। যেহেতু দুইটি ল’ ফার্ম মামলার রসদ জুগিয়েছে এবং ফি নিয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে, তাই মামলা পরিচালনার দায়িত্বও থাকছে তাদের ওপর। ফেডের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সংশয় থাকলেও চূড়ান্ত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আরসিবিসি এবং ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে, যাতে শেষ সময়ে কোন ঝামেলা না হয়। তবে সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখের মধ্যেই মামলায় যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
×