স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশ-বিদেশের আলোকচিত্রীদের শিল্পসমৃদ্ধ আলোকচিত্রসম্ভার অবলোকনের অনন্য এক সুযোগ ছবি মেলা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়ার সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ এই আলোকচিত্র উৎসব। এদিন সকাল ১১টায় ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন হবে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রদর্শনালয়সহ ধানম-ির নানা স্থানে চলবে দশ দিনের এই উৎসব। ২০০০ সালে ধানম-িতে যাত্রা শুরু করেছিল এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব ছবি মেলা। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই উৎসবের দশম আসর। দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড এবং পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে শুধুমাত্র ধানম-ি এলাকাতে অনুষ্ঠিতব্য উৎসবটি চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। এবারের উৎসবের অন্যতম আর্কষণ হিসেবে থাকছে প্রয়াত ফটোসাংবাদিক রশীদ তালুকদারের রেট্রেস্পেক্টিভ প্রদর্শনী। চমক হিসেবে মেলার আর্টিস্ট টকে অংশ নেবেন ম্যান বুকারজয়ী প্রখ্যাত ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায়। এ ছাড়া আর্টিস্ট টকে অংশ নেবেন জার্মান প্রকাশক ও বুকমেকার গেরহার্ড স্টাইডল। উৎসবের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে হাজির হবেন বিশ্বখ্যাত সেভেন ফটোগ্রাফি এজেন্সির বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী ক্রিস্টোফার মরিস। এবং এবারের আসরের মূল প্রতিপাদ্য ‘স্থান’। শুধু ভৌগোলিক বিবেচনায় নয়, ঐতিহাসিক ও দার্শনিকভাবে মেলার প্রতিপাদ্য হয়েছে স্থান বা জায়গা। এবারের উৎসবে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ২০টি দেশের ৩৫ জন্য প্রখ্যাত আলোকচিত্রীর ২৭টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও পাঁচটি রিক্সা ভ্যানে ছবি নিয়ে শহরজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে দৃক গ্যালারি-৩-এ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উৎসব পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ছবি মেলা নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উৎসবের কিউরেটর এএসএম রেজাউর রহমান ও তানজিম ওয়াহাব এবং পাঠশালার অধ্যক্ষ আবীর আব্দুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারই প্রথম উৎসবকে সামনে রেখে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আট সদস্যের এ উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেনÑ ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, নেপালের কাঠমু-ু পোস্টের প্রকাশক ও সম্পাদক কুন্দা দীক্ষিত, ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই এবং মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির।
উৎসব সম্পর্কে শহিদুল আলম বলেন, পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলোচিত্রীদের অনেকে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত আছেন। এই উৎসব অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ার প্রধান আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে ছবি মেলা। এবার আয়োজনে আলোকচিত্রীদের বাইরেও শিল্পকলার সঙ্গে জড়িত অনেক গুণী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যারা পৃথিবীকে অন্যভাবে দেখেন তাদের পরামর্শ নেয়ার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ তৈরি করা হয়েছে।
খন্দকার ইব্রাহিম খালিদ বলেন, কোন কিছুর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে একটি ছবি যে ভূমিকা রাখতে পারে, লেখার মাধ্যমে সেটা সম্ভব হয় না। ব্যক্তি, সমাজ থেকে শুরু করে যে কোন দেশের রাজনৈতিক জীবনকে জানার সুযোগ করে দেয় আলোকচিত্র। আর আলোকচিত্র শিল্প হয়ে ওঠে তখনই যখন সেটা কথা বলে। বর্তমানে আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে উজ্জ্বলতম সংস্করণ হচ্ছে এই ছবি মেলা।
খুশি কবির বলেন, শিল্প ছাড়া মানবমুক্তি সম্ভব নয়। এই ছবি মেলা সেই শিল্পেরই একটি আঙিনা। আলোকচিত্রের ভুবনে আজ বিশ্বব্যাপী জায়গা করে নিয়েছে এই ছবি মেলা। পৃথিবীর চিন্তা কিংবা সৃষ্টিশীলতা কোন পথে যাচ্ছে সেটাই তুলে ধরে এই ছবি মেলা।
এবারের উৎসবের প্রদর্শনীগুলো অনুষ্ঠিত হবে পান্থপথের নির্মাণাধীন দৃক-পাঠশালা ভবন, দৃক গ্যালারি ১ ও ২ (ধানম-ি), দৃক গ্যালারি ৩ (পান্থপথ) এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার গ্যালারিতে। উৎসব কিউরেট করছেন এ এস এম রেজাউর রহমান, মুনেম ওয়াসিফ, সরকার প্রতীক এবং তানজিম ওয়াহাব। আমন্ত্রিক কিউরেটর হিসেবে থাকছেন নাঈম মোহায়মেন, সাবিহ আহমেদসহ কয়েকজন শিল্পী। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ছায়ানট মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন হবে।
বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের পাশাপাশি ছবি মেলায় অংশ নেবেন ভারত, ব্রাজিল, সিরিয়া, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ডের আলোকচিত্রীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন আনন্দ পটবর্ধন, ক্রিস ডি বডে, দয়নিতা সিং, গৌরি গিল, ইসা তমা, ইয়ান ব্যানিং, মাদিহা আইজাজ, মৌসুমি ভৌমিক, সুকান্ত মজুমদার, মোস্তফা জামান, নাঈম মোহায়মেন, ওমর ইমাম, পেদ্রো ডেভিড দে অলিভেরা ক্যাস্তেলো ব্রাঙ্কো, রাফাল মিলাচ, রশীদ তালুকদার, শাহিন দিল-রিয়াজ, শিল্পা গুপ্তা, সুজান মাইজেলাস, ভেনেসা উইনশিপ প্রমুখ।
উৎসব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে কর্মশালা, প্যানেল আলোচনা, আর্টিস্ট টক, সেমিনার, গ্যালারি ওয়াক, স্লাইড শো ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। আরও রয়েছে পোর্টফোলিও রিভিউ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশেষ গ্যালারি ওয়াক।