ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া পাথর খনিতে উৎপাদন বেশি হলেও সওজের শর্তে বিক্রি কম

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

মধ্যপাড়া পাথর খনিতে উৎপাদন বেশি হলেও সওজের শর্তে বিক্রি কম

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে ৩ শিফটে মাসিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে গতবছরে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৯শ’ ৬৬ মে.টন পাথর উত্তোলন করেছে খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। পাথর উত্তোলন বৃদ্ধি পেলেও আশানুরূপ পাথর বিক্রি বাড়েনি। খনি সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ খনি কর্তৃপক্ষকে পাথর পরিবহনে লোড নির্ধারণ করে দেয়ায়, অতিরিক্ত পরিবহন করার অনুমিত পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে পরিবহন খরচ তাদের বাড়ছে। অপরদিকে আমদানিকৃত পাথর ওভারলোড (অতিরিক্ত) নিয়ে পরিবহন করতে পারছেন পাথর ব্যবসায়ীরা। এতে তাদের পরিবহন খরচ কমে যাচ্ছে। এ কারণে তারা খনির পাথর কেনার চেয়ে আমদানি করা পাথরের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এরপরও গতবছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২ মে.টন। ১৪ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত খনির ১১টি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের পাথর মজুদের পরিমাণ রয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মে. টন। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাথর বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। পাথর খনির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জিটিসি প্রতিদিন পাথর উৎপাদন করছে প্রায় ৫ হাজার মে.টন। খনি সূত্রে জানা গেছে, খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) খনির দায়িত্বভার গ্রহণ করে খনির নতুন স্টোপ নির্মাণ (শিলা উৎপাদন ইউনিট), খনির উন্নয়ন এবং উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন ৩ শিফট পরিচালনা করে খনির উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। মাসিক ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গতবছরের ২৩ মার্চ খনির ৯নং স্টোপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জ¦ালানি ও বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসির) নির্বাহী পরিচালক জাবেদ সিদ্দিকী জানান, খনিতে অর্ধশতাধিক বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ, ৭ শতাধিক খনি শ্রমিক, অর্ধশত দেশী প্রকৌশলীসহ দেড় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করছেন। মাসিক পাথর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর ফলে জিটিসি’র কর্মরত খনি শ্রমিকদের প্রতিমাসে বেতন ও ওভারটাইমের সঙ্গে উৎপাদন বোনাসও প্রদান করা হচ্ছে। খনি সূত্রে বলা হয়েছে, গত ২০০৭ সালের ২০ মে মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে দৈনিক তিন শিফটে ৫ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। কিন্তু তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৭ বছর ধরে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি। ফলে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে পাথর খনিটি বন্ধের উপক্রম হয়। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর সরকারের সঙ্গে জিটিসির ৬ বছর মেয়াদের পাথর খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি হয়। এ বিষয়ে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যাবেদ চৌধুরী বলেন, খনিতে বর্তমানে উৎপাদন ভাল হচ্ছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগের শর্তের কারণে বিক্রি আশানুরূপ নয়। তবে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে এই পাথরের চাহিদা ও বিক্রি বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×