ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের ১৩ স্পটে ॥ পাহাড়ের মাটি লুট

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

টাঙ্গাইলের ১৩ স্পটে ॥ পাহাড়ের মাটি লুট

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ ঘাটাইল, কালিহাতী ও সখীপুর উপজেলার ১৩টি স্পটে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বর্ষাকালে ওইসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া, টেগুড়ি চালা, ঢেলুটিয়া ও ঘোড়ামারা, কালিহাতী উপজেলার মরিচা, সখীপুর উপজেলার সাপিয়ার চালা, বাগেরবাড়ি, ইন্দারজানী, গড়বাড়ি, বহেড়াতৈল, আড়াংচালা, আমতৈল, আমগাছ চালা ও গিলাচালা নামকস্থান থেকে অবাধে লালমাটির পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। কতিপয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, বন বিভাগের বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে স্ব স্ব স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রীতিমতো ডেকু বসিয়ে দিনরাত ট্রাক, মাহিন্দ্র ট্রাক ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে ওইসব মাটি স্থানীয় ইটভাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। সরেজমিনে স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করে জানায়, দিনে মাটির ট্রাক কম আসা-যাওয়া করলেও রাত ৮টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত শতাধিক ট্রাক দিয়ে মাটি নেয়া হয়। ঘাটাইলের দেওপাড়া, টেগুড়ি চালা, ঢেলুটিয়া ও ঘোড়ামারা এলাকায় দেওপাড়ার ইউপি সদস্য কামাল হোসেন, বারইপাড়ার কামরুল, কালিহাতীর সিংনা গ্রামের শিবলু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছেন। কালিহাতী উপজেলার মরিচা, সখীপুরের সাপিয়ার চালা, বাগেরবাড়ি, ইন্দারজানী, গড়বাড়ি এলাকায় বুড়িচালার শহীদ ও মরিচকুড়ি গ্রামের রস্তম আলী, বহেড়াতৈল, আড়াংচালা, আমতৈল, আমগাছ চালা ও গিলাচালা এলাকায় বহেড়াতৈল ইউপি সদস্য হায়দর, স্থানীয় সোহেল, মেহেদী, আরিফ, হাইসাব, মজনু, হাসমত ডাক্তার, পান্নু, আজিজ ও নাফিকুল অবাধে লাল মাটির পাহাড় কেটে বিক্রি করছেন। কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, বন বিভাগের বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই তারা পাহাড়ের মাটি কাটছেন। তাছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও মাঝে মাঝে টাকা দিয়ে সমর্থন নিতে হয়। দিনশেষে তাদের হাতে দিনমজুরির টাকাই থাকে। কোন কাজ নাই তাই তারা মাটির ব্যবসা করে কোন রকমে দিনাতিপাত করছেন। টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ অফিসার আলাল খান জানান, তিনি এ রেঞ্জে নতুন এসেছেন। বন বিভাগের ভূমির পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। তিনি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তাছাড়া ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গা কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই। সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুর রহমান জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোশতারী কাদেরী জানান, তিনি পাহাড় কাটা বা মাটি কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
×