ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিএনপির ভরাডুবির পেছনে জঙ্গীবাদ, জামায়াত সঙ্গ

নৌকার বিপুল জয়ের নেপথ্যে দৃশ্যমান উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১ জানুয়ারি ২০১৯

নৌকার বিপুল জয়ের নেপথ্যে দৃশ্যমান উন্নয়ন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬ টি আসনে আবারও বিপুল জয় পেয়েছে মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। রাজশাহীর সব আসনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের পর এখন জয়-পরাজয়ের বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে আওয়ামী লীগের জয়ের নেপথ্যে তিনটি বিশেষ কারণ মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, প্রথমত আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি তাদের জয়ের নেপথ্যের অন্যতম কারণ। এছাড়া বিগত ১০ বছরে রাজশাহীতে সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জনসম্পৃক্ততাও জয়ের ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া তরুণ ও নারী ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় একচেটিয়া রায় দেয়ায় রাজশাহীর সব আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে নৌকার প্রার্থীরা। একইভাবে বিএনপি প্রার্থীদের জনবিচ্ছিন্নতা, উন্নয়নে কোন অবদান না রাখা এবং তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত না করতে পারায় ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি প্রার্থীদের। এছাড়া জামায়াত সঙ্গ ও জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার কারণে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে রাজশাহীর মানুষ। ২০০৮ সালের আগে আধিপত্য বিস্তারকারী বিএনপি শুধু জামায়াত ও জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার কারণে গত তিন টার্ম ধরে পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করছে। ২০১৮ সালে এসেও তারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করতে পারেনি। জঙ্গী মদদদাতাদের এবারও মনোনয়ন দেয়া হয়। আর তরুণ প্রজন্মকে কোন আশা দিতেও পারেনি। এ কারণে তরুণ প্রজন্ম বিএনপির প্রতি কোন ভরসা রাখতে পারেনি। নারীরাও মুখ ফিরিয়েছে বিএনপি থেকে। আর দলীয় কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করায় নিজেদের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হয় চরমে। ফলে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে ভোটের আগে থেকেই। ভোটের প্রচারেও তাদের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। এ কারণে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। রাজশাহী বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে তাদের লক্ষ্যই ঠিক করতে পারেনি। শুরু থেকেই ছিল এলোমেলো। মানুষের কাছে যেতে পারেনি। প্রার্থীরা ছিল জনবিচ্ছিন্ন। ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় না ফিরে হঠাৎ ভোটের মাঠে নেমে বেকায়দায় পড়ে। তারা জনবিচ্ছিন্ন হিসেবে চিহ্নিত হয়। অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গী মদদদানের মামলা রয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের নাশকতাকারী হিসেবে মনে করেছে। তাই ভোটে জবাব দিয়েছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যায় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজম শান্তনু বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রে জনবিচ্ছিন্নতা যেমন পরাজয়ের মূল কারণ তেমনিভাবে বিপুল জয়ে আওয়ামী লীগের নেপথ্যে রয়েছে প্রথমত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি। তাদের জয়ের নেপথ্যের অন্যতম কারণ এটি। আগে থেকেই বলা হচ্ছিল ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি ভোটের আগেই সব দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে সক্রিয় ছিল। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে রাজশাহীতে সরকারের দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন কর্মকা- ও জনসম্পৃক্ততাও জয়ের ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগের। এছাড়া তরুণ ও নারী ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় একচেটিয়া রায় দিয়েছে এবার। শুরু থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত করতে পারায় এবারও রাজশাহীর সব আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে নৌকার প্রার্থীরা। রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর সব আসনে নৌকার জয়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে মনোনয়ন নিয়ে দলীয়ভাবে নানা বিভক্তি দেখা দিলেও নৌকার পক্ষে সবাই এক হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ভোটের মাঠে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-বিভেদ কাটিয়ে সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের মাঠে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নৌকার জয় এনে দিতে দিনরাত ভোটের মাঠে ছিলেন তিনি। খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বেই রাজশাহীর সব আসনেই নৌকার পক্ষে একাট্টা হয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠন। পৃথকভাবে মাঠেও নেমেছিলেন তারা। ভোটের মাঠে শুরুতেই তুলেছিলেন শক্ত আওয়াজ। এ কারণে আওয়ামী লীগ সব আসনে জয় পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৪ দল রাজশাহীর সমন্বয়ক, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, একদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নৌকা প্রতীক, অন্যদিকে বিপক্ষের প্রতীক ধানের শীষ। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী দল। ইতোমধ্যে তাদের দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এত কিছুর পরও সেই দলের নেতাদের ধানের শীষের প্রতীক দিয়েছে বিএনপি। রাজশাহীর মানুষ সেটি মেনে নেয়নি। প্রসঙ্গত, উন্নয়নের সঙ্গী হয়ে নৌকাতেই ভরসা রেখেছে রাজশাহীর সাধারণ মানুষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬টি আসনেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছে। বিপুল ভোটের মাধ্যমে উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকেই বিজয়ী করেছে। রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে চারজনই হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছে। একজন দ্বিতীয়বারের মতো, অন্যজন নবাগত প্রার্থী হয়েও জয়লাভ করেছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর ১ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৪ আসনে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও রাজশাহী-৬ আসনে শাহরিয়ার আলম তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী-৩ আসনে অয়েন উদ্দিন দ্বিতীয়বারের মতো এবং নতুন মুখ রাজশাহী-৫ আসনে ডাঃ মনসুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে এবার জয় পেয়েছেন রাজশাহী-৬ আসনের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম ও রাজশাহী-৪ আসনের প্রার্থী এনামুল হক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে এদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান দুই লাখের বেশি। আর সবচেয়ে কম ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। বাদশা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মিজানুর রহমান মিনুর চেয়ে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে।
×