ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির পোলিং এজেন্ট ছিল না অধিকাংশ কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 বিএনপির পোলিং এজেন্ট ছিল  না অধিকাংশ কেন্দ্রে

শরীফুল ইসলাম ॥ নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিল না বিএনপি। ভোটের মাঠে তৎপর না থেকে দফায় দফায় অভিযোগের দিকে বেশি মনোযোগী ছিল দলটি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দলীয় নেতা ও কর্মীরা ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকলেও বিএনপির বেলায় তেমনটি দেখা যায়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির কোন এজেন্ট দেখা যায়নি। এমনকি ভোট কেন্দ্রের অনতিদূরে ক্যাম্প করে ভোটারদের হাতে হাতে ভোটার নম্বর সম্বলিত নৌকার স্লিপ দেয়া হলেও ধানের শীষের ভোটার স্লিপ দেয়ার কোন লোক ছিল না। এর ফলে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ থাকায় অনেকে ভোট দিতেও যায়নি। এদিকে ভোটের মাঠে সক্রিয় না থাকলেও সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দফায় দফায় অভিযোগ করা হয়। সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই সংবাদ সম্মেলনে তা তুলে ধরেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলের সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দফায় দফায় অভিযোগ করেন। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনসহ এ জোটের অন্য নেতারাও দিনভর অভিযোগ করতে থাকেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করায় স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকশূন্য ছিল বিএনপি। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার শোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকার বাইরে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করায় রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দলীয় নেতাকর্মীদের কর্মতৎপরতা পর্যবেক্ষণেরও কেউ ছিল না। মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলটির যে ক’জন সিনিয়র নেতা ঢাকায় অবস্থান করেন তারাও কার্যত দিনভর ঘরেই বসে থাকেন। এর ফলে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা নীরবে ভোট দিতে যাওয়া ছাড়া আর কিছু তৎপরতা দেখাননি। এমনকি কেউ কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ারও সাহস দেখাননি। সকালের দিকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বের হয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলেও বেশিক্ষণ অবস্থান না করে ঘরে ফিরে যান। এদিকে ভোটের আগে অন্যান্য বছর বিএনপির প্রার্থীরা পুরো এলাকা পোস্টারে ছেয়ে ফেললেও এবার কোন পোস্টারই লাগাননি। কেন লাগানো হয়নি জানতে চাইলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন পোস্টার লাগাতে গেলে পুলিশ ও সরকারী দলের লোকদের হামলার শিকার হতে হয়, এ কারণে কেউ পোস্টার লাগাতে যায়নি। সরেজমিন সকাল ৯টায় ঢাকা-১৮ নির্বাচনী এলাকার জগন্নাথপুর কেম্ব্রিয়ান স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রতিটি বুথে চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা। আর তাদের কাছাকাছি বসে আছেন নৌকা মার্কাসহ বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীর এজেন্টরা। কিন্তু ধানের শীষের কোন এজেন্ট দেখা যায়নি। পুলিং অফিসাররা জানান, ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষের কোন এজেন্ট আসেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভোটার জানান, এ কেন্দ্রটিতে ধানের শীষের এজেন্ট নেই। এ ছাড়া বাইরেও ধানের শীষের পক্ষের কোন লোকজন নেই। তাই শুধু নৌকার পক্ষেই সবাই ভোট চাচ্ছে। আর বিএনপির সমর্থকরা দূরে এতিমের মতো দাঁড়িয়ে থেকে চুপি চুপি পরিচিতজনদের কাছে ভোট চাচ্ছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-১৭ আসনের কালাচাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটাররা বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে ভোট প্রদান করছেন। এ কেন্দ্রে নৌকা মার্কার প্রার্থী নায়ক ফারুকের পক্ষে এজেন্টরা দায়িত্ব পালন করলেও ধানের শীষের প্রার্থী বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের কোন পুলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম বলেন, কেউ দায়িত্ব পালন করতে না আসলে আমাদের কি করার আছে। তবে যারা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে পুলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করতে এসেছে আমরা তাদের নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিয়েছি। রাজধানীর গুলশান মডেল হাইস্কুল, সাহাদাতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাচাঁদপুর সরকারী হাইস্কুল, বাড্ডা আলাতুন্নেছা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সেগুনবাগিচা হাইস্কুল ও মগবাজার ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয়সহ অন্যান্য কেন্দ্রেও বিএনপি নেতাকর্র্মীদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের পুলিং এজেন্ট না থাকা সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তাদের পুলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ২২১টি আসনে ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির প্রকৃত এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। কিন্তু স্বাক্ষর জাল করে কিছু এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা ধানের শীষের সমর্থক নন। এদিকে ভোট কেন্দ্র গিয়ে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট না দেখে ভোট না দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে ঘরে ফিরে যান বিএনপির ডাকসাইটে নেতা মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তারা দু’জনই ঢাকা ৮ ও ৯ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী। ভোটের আগে হুঙ্কার দিলেও ভোটের দিন ভীতুর মতো ঘরে বসেই সময় কাটান তারা। আর তাদের এ অবস্থা দেখে অন্য নেতাকর্মীরাও চুপেচুপে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ না পাওয়ায় ভোট চলাকালে বর্জনের ঘোষণাও দিতে পারেননি তারা। তবে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ক’জন প্রার্থী দল ও জোটের সিদ্ধান্তের দিকে বসে না থেকে ব্যক্তিগতভাবে বর্জনের ঘোষণা দেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও এ নির্বাচনকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়নি। তাই দায়সারা থেকে কোন রকমে নির্বাচনটা পার করেছে। এভাবে নির্বাচন করে কিভাবে বিএনপি ভাল ফল আশা করে। তবে বিএনপি যে বিজয়ের জন্য এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তা বোঝা গেছে দলের নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখেই।
×