ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিতলে ঐক্যফ্রন্ট সরকারে জামায়াতের কেউ থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

জিতলে ঐক্যফ্রন্ট সরকারে জামায়াতের কেউ থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য। এ যেন হাতে থাকা তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলের মতো নিবিড় সম্পর্কের নজির। দীর্ঘদিনের এই রাজনৈতিক মিত্রদের কি ভোলা যায়। যাকে বলে ভালবাসা। ২০০১ সালে এক অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতের মন্ত্রীদের গাড়িতে বিএনপি তুলে দেয় জাতীয় পতাকা! এর আগে থেকেই জামায়াত ইস্যুতে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দলটিকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটির ২৫ নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সারাদেশে সহিংসতা, মৌলবাদী তা-ব, আগুন সন্ত্রাস, হত্যা সবকিছুর জন্য বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতকে দায়ী করা হয়। এত কিছুর পরও জামায়াতের প্রতি এতটুকু ভালবাসাও কমেনি জিয়ার দলের। কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপি ঐক্য করলেও ২০ দলীয় জোট অটুট আছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে যদি ঘোষণা আসে তারা নির্বাচনে বিজয়ী হলে জামায়াত ছাড়বে তখন কেমন শোনায়! সত্যিই বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আজব কথা বলা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। হোক তারা যুদ্ধাপরাধী, নাশকতাকারী, রগকাটা বাহিনী, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের হোতা তাকে কি যায় আসে? একই মায়ের পেটের দুই ভাই বলে কথা। তাদের কি ছাড়া যায়। দূরে ঠেলে দেয়ার কথা বলাও অন্যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতলে ঐক্যফ্রন্ট সরকারে জামায়াতের কেউ থাকবে না বলে দাবি করেছেন ওই ফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে নিজের দলের সঙ্গে জামায়াতের পার্থক্য টেনে তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের মতো ইসলামী আইনে বিশ্বাস করে না। এদিকে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন সময় সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে তারা। এমনকি এ বছরের আগস্টে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে ব্যাংককে একটি বৈঠকের দিন ঠিক করার চেষ্টাও করেছিল বিএনপি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে বিএনপির ফখরুল নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, এখানে কোন নির্বাচনী প্রচার নেই। এটা সন্ত্রাসের রাজত্ব, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন। তার ছেলে ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী তারেক জিয়া দ- মাথায় নিয়ে লন্ডনে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় আছেন মির্জা ফখরুল। ঢাকার গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে সাক্ষাতকারটি দেন তিনি। তার এই সাক্ষাতকার প্রচার হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই ভোটারদের মন ভোলানো প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেষ্টায় বিএনপি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা জানান দিতে চাচ্ছে জামায়াত ইস্যুতে দূরে সরতে চায় দলটি। যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়ে আসছে। ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেশের বাইরে ভারতের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাত চেয়েছিলাম। তিনবার দেখা করেছি। ভারতীয় কূটনীতিকরা সাক্ষাত করতে তেমন আগ্রহী নন বলে মনে হয়েছে। সম্ভবত তারা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরাগভাজন হতে চাননি। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদে বিশ্বাস করি না। এ বিষয়ে আমাদের নিয়ে ভারতের ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। এটা পুরোপুরি মিথ্যা ধারণা যে আমরা ভারতবিরোধী। এটা আওয়ামী লীগের সৃষ্ট অপপ্রচারের অংশ। ফখরুল বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছি। খালেদা জিয়া ২০১২ সালে দিল্লী সফর করেন। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম, পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার (খালেদা জিয়া) খুবই সফল বৈঠক হয়েছিল। তবে এরপর আর কিছু ঘটেনি। আর কোন ফলোআপ নেই। আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমরা এ বছরের আগস্টে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে ব্যাংককে বৈঠকের দিন ঠিক করার চেষ্টা করেছি। তবে ভারতীয় পক্ষ এড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি থেকে এবার জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জামায়াত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘জামায়াত নিয়ে যখন আমাদের প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে বলছি শুনুন, বিএনপি কিন্তু জামায়াত নয়। বিএনপি ইসলামী আইনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি মৌলবাদে বিশ্বাস করে না। জামায়াতের প্রতি আমাদের বিশেষ কোন প্রেম নেই। তবে ক্ষমতায় এলে জামায়াত প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার বিষয়টি এড়াতে পারবেন না বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটগতভাবে ক্ষমতায় এসেছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোটকে কৌশলগত আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, তাদের সঙ্গে থাকলে ৫০টি আসনে আমরা সুবিধা পাই। এসব আসনে ব্যবধান খুব কম এবং লড়াই হাড্ডাহাডি। আমাদের ছাড়া তারা মাত্র তিনটি আসন পায়। তবে নির্বাচনে জিতলে ভবিষ্যৎ সরকারে জামায়াত নেতারা থাকবেন কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, কোন সুযোগ নেই। সাক্ষাতকারে ফখরুল বলেছেন, ২০০১-০৬ শাসনামলে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ভারতের চরম সমালোচক ছিল, যা দিল্লী মনে রেখেছে। তবে ভারতের বর্তমান সরকার ডানপন্থী হলেও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই বিএনপির। বিজেপি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল, আরসএসও তা। কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। দুর্ভাগ্যবশত আমি জানি না কেন ভারত আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্ম এড়িয়ে যায়। যে অপকর্মে রয়েছে নির্যাতন, গুম ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ ভারতকে দোষ দিচ্ছে, মানুষ মনে করে ভারত আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করছে। আওয়ামী লীগ দেশে ঘৃণিত রাজনৈতিক দল। কিন্তু শুধু ভারতের কারণেই তারা টিকে আছে, ভারতই আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের ‘ভাল যোগাযোগ’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াত এখনও ফখরুলের জন্য বোঝা হিসেবে রয়ে গেছে এবং তিনি তাদের আড়ালে রাখতে চাইছেন। সবশেষে কথা হলো, জামায়াত ইস্যুতে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হলেও ঘর ভাঙ্গেনি। ভবিষ্যতে ভাঙ্গন হবে এমন নিশ্চয়তা বিএনপির শীর্ষ নেতারা বললেও শেষ পর্যন্ত কি হবে তাই এখন দেখার বিষয়। আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার আগে তাঁর (খালেদা জিয়া) অনুমতি নিয়েছি একথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, তিনি তারেকের সঙ্গেও পরামর্শ করেছেন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।
×