ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের একের পর এক নালিশ, অভিযোগ

প্রচারে আওয়ামী লীগের হাতিয়ার ছিল ১০ বছরের উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রচারে আওয়ামী লীগের হাতিয়ার ছিল ১০ বছরের উন্নয়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রচারের বড় হাতিয়ার ছিল গত ১০ বছরের উন্নয়ন। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একের পর এক অভিযোগ করার বাইরে আর কিছু করে উঠতে পারেনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থীরা এসএমএস করে ভোট চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ ভোটের প্রচারে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ গানটি দিয়ে বাজিমাত করেছে। এর পাশাপাশি গত দশ বছরে দেশের উন্নয়নে যে বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে গত ১০ বছরের শাসনামলে দেশের উন্নয়নে তারা যে কাজ করেছে বিগত ৪০ বছরেও তা করা হয়নি। ফলে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইবার অধিকার তাদের রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভোট তারা চাইতে যাক বা না যাক দেশে এক নীরব ভোট বিপ্লব হবে। সেই ভোট বিপ্লবই তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কেন নীরব ভোট বিপ্লব হবে তেমন কোন যৌক্তিক কারণ দাঁড় করাতে পারেননি বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের কোন নেতা। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ভোটের প্রচারে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়, গত দশ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সাহসিকতা দেখিয়ে বিশ^র কাছে নতুন করে পরিচিত হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র, মাতারবাড়ি-এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ইতোমধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে। কর্ণফুলীর নিচে দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে টানেল। সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭ দশমিক ৭ ভাগে। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাসে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী সেবা পৌঁছে দিতে দেশের ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। কৃষি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। বিদ্যুত খাতে বাংলাদেশের অর্জনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। মাত্র তিন হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে এখন দেশে স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। দেশের ৯৪ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। নির্বাচনী প্রচারে এবার আওয়ামী লীগের সব চেয়ে বড় চমক ছিল তারকা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিজেদের পক্ষে নামানো। অনেক অভিনেতাÑঅভিনেত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনী পাঠে আওয়ামী লীগের পাাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বেছে নিয়ে চমক দিয়েছে। আওয়ামী লীগের বিপুল অর্জনের প্রচারের পাশে বিএনপির প্রচারের প্রধান বিষয় ছিল মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা। গণতন্ত্র রক্ষা এবং দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের মামলা থেকে মুক্তির জন্যই এই নির্বাচন বলে প্রচারের চেষ্টা করেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতিমখানার টাকা তারেক রহমানকে দিয়ে দেয়ার মামলায় এখন আদালতের দেয়া সাজা ভোগ করছেন। অন্যদিকে একই মামলায় তারেক রহমানকেও দ- দিয়েছে আদালত। এর বাইরেও ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমান লন্ডনে পালিয়ে রয়েছেন। ভোটের প্রচারে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মামলা থেকে মুক্তিই বিএনপির এমন ইস্যু সাধারণ মানুষকে খুব একটা টানেনি। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রচার ছিল না বললেই চলে। দল এমন অনেক নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে যাদের কেউ কেউ মামলার আসামি। তারা জনসম্মুখে এসে প্রচারও চালাতে পারেননি। প্রার্থী না থাকলে দলের নেতাকর্মীরাও খুব একটা প্রচারে আগ্রহ দেখান না। আবার কোথাও কোথাও এমন প্রার্থীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে তাদের স্থানীয়ভাবে একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্থানীয় ভোটারদের অনেকেই তাদের আগে থেকে চেনেনও না। ফলে বিএনপি নেতারা এদের পক্ষে নামছেন না। ফলে এসব প্রার্থীরা তিন/চার জন নিকটজন নিয়ে নিজেদের মতো করে প্রচার চালিয়েছেন। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই এরকম কিছু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী রয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এবার রাজধানী ঢাকাতে একেবারেই ধানের শীষের পোস্টার লাগায়নি কেউ। কেউ কেউ বলছেন দলটি এবার পোস্টার ছাপেইনি। দলের সব প্রার্থীই ভোট চাইতে এসএমএস করেছেন ভোটারদের কাছে। এজন্য মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের সহায়তা করেছেন। সাধারণত প্রার্থী যে এলাকার সেই এলাকার ভোটারদেরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসএমএস করা হয়েছে। তবে ভোটের মাঠে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারে খুব একটা দেখা না গেলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ টাকাসহ ধরা পড়েছেন। যদিও বিএনপি বলেছে এসব টাকা তাদের নয়।
×