ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

  নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন লক্ষণ দেখছি না। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে শেষ মুহূর্তে হলেও নির্বাচন কমিশন ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কাছে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা করছি। শুক্রবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে। এ কথাটি আমরা দায়িত্ব নিয়েই বলছি। বিচার বিভাগ যে হারে আমাদের প্রার্থিতা বাতিল করছে, সেগুলোকে আমরা কী বলব? একই আদালত একজনের পক্ষে এক রায় দিচ্ছে, আবার অন্যজনের পক্ষে দিচ্ছে ভিন্ন রায়। হাইকোর্ট থেকে আমি সুবিচার পাচ্ছি, সেটি কী করে বলব? এরই মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আদৌ এ নির্বাচন ঠিকভাবে হবে কি না। ফখরুল বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু সেই নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে কোনভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশেেপ্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে আশা করছি। ফখরুল বলেন, যেখানে আমার দলের প্রার্থিতা আমি দেব, সেটি হাইকোর্ট দিচ্ছে। আজ দুর্ভাগ্য এ জাতির, যেসব সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর জাতির আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে সরকারী দল নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন রাষ্ট্রের কাঠামো, মানুষের অধিকার থাকবে কি থাকবে না, তার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এই নির্বাচনে নির্ধারণ হবে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক দেশে নাকি স্বৈরাচারী দেশে বাস করবে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, একাত্তর সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা রক্ষা করতে পারব কি না। আমাদের প্রজন্মকে সুখী-সমৃদ্ধ আবাস দিতে পারব কি না। আমরা স্বাধীনভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারব কি না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, কথাটি আমি স্পষ্ট করেই বলছি। আমাদের মিটিং বন্ধ করা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা সব করছে প্রতিপক্ষের মতো। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নিজেদের অফিস ভেঙ্গে দিচ্ছে। আর মামলা দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে। ২০১৪ সালে সরাসরি বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। এবার আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের একটা ভরসা ছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত, যেখানে আমরা ন্যায়বিচারের আশা করেছিলাম। এখন সেখানেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ইচ্ছা সভা-সমাবেশ করছেন, কথা বলছেন, কোন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যত সমস্যা সব আমাদের বেলায়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স পুরো করা হবে। এভাবে আবার একতরফা ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে সরকার। কিন্তু এসবে আর কাজ হবে না, জনগণ জেগে উঠেছে। ফখরুল বলেন, সন্ত্রাস আমরা করছি না। নির্বাচনের এই কয়দিনে তারা যে সন্ত্রাস করেছে, তা নজির হয়ে থাকবে। ফখরুল বলেন, দেশে কি নির্বাচন কমিশন আছে? তাদের কাছে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু তার কোনটার কোন সুরাহা হয়নি। ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি নাকি ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে। আবার বলছেন, বিএনপির টাকা নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। এসব কথা বলে প্রধানমন্ত্রী গুজব ছড়াচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু সেই নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে কোনভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের বাকি মাত্র আট দিন। আমরা এখনও আশা করি, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কুমিল্লায় পুলিশ এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলছেন। আর নির্বাচন কমিশন মুখে যেটা বলে, বাস্তবে সেটা করে না। বৈঠকে তারা আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে, কিন্তু বাস্তবে সমস্যা সমাধানে কোন ব্যবস্থা নেয় না। তিনি বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের সুবাতাস বইছে, অনুকূল আবহ তৈরি হয়েছে’ বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে কথা বলেছেন তা জনগণের কাছে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেন, মুন্সীগঞ্জে তার নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাড়িতে নিজেরা আগুন দেয়। কিন্তু পুলিশ বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দায়ের করেছে। খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে এ মিছিল করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, সরকার ধানের শীষের জোয়ার টের পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজেদের ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে নির্বাচনী মাঠ ভোটারশূন্য করে যাচ্ছে। তবে দশ বছরের অপকর্ম জনগণ আর মেনে নেবে না। তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
×