ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আরেকবার সুযোগ দিন ॥ ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

আরেকবার সুযোগ দিন ॥ ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। আমার এমন কোন আকাক্সক্ষা নেই যে, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে হবে। দেশের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জনগণের ম্যান্ডেটে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ। যদি না পারি কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু দেশে শান্তি বজায় থাকুক, দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে তার সরকার পছন্দ করে নিক। সেই পরিবেশটা বজায় থাকুক, আমি সেটাই চাই। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা থাকলে দেশটা এগিয়ে যাবে। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। সকলের কাছ থেকে একটা সহযোগিতা চাই। আজকে সুন্দর-শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা আছে। সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রেখেই যেন নির্বাচনটা হয়, সেই পরিবেশটা যেন বজায় থাকে। আমি অনেক কিছু সহ্য করেও সবার সঙ্গে বসে কথা বলেছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। সবাইকে বলেছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। যেন উন্নয়নটা অব্যাহত রাখতে পারি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার আরেকবার সুযোগ দিন, আমরা উন্নয়নের কাজগুলো যেন শেষ করতে পারি। যদিও এর কোন শেষ নেই। উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে, তবুও যে কাজগুলো হাতে নিয়েছি, তা যেন শেষ করতে পারি, এটাই আমি চাই। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহারটা দিয়েছি আমরা কিন্তু সেই রাজনৈতিক দল এই উপমহাদেশে, আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার একবার ঘোষণা দিয়ে ফেলে দেই না। এই ইশতেহারটা আমাদের সঙ্গে থাকে। সেই সঙ্গে যখনই কোন প্রজেক্ট নেই বা বাজেট করি; তখন এই বাজেট করার সময় প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়েই নির্বাচনী ইশতেহারের একটা কপি দিয়ে দেই। কারণ আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি সেই ওয়াদা আমরা পূরণ করতে চাই। যদি সুযোগ হয় তার চেয়েও বেশি করি। এখন সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। আমরা এতগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা কোন দিক বাদ রাখিনি। সব দিকেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি। অনেক কাজ হাতে নিয়েছি। সেটা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। বাংলাদেশ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থানটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে গেলে সুইাজারল্যান্ডকে ব্যবহার করতে হয়। একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকেই সেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ রচনা করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সে উন্নয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটা যোগাযোগ ও সদ্ভাব সৃষ্টি করা, সেটাও আমরা খুব সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস থাকলে দেশে কোন উন্নতি হয় না। কাজেই আমরা চাই দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা থাকলে দেশটা এগিয়ে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে হাওয়া ভবন তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যেভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল তারও অবসান ঘটেছে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের জন্য যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছি, এখন তো আর বলতে পারবেন না যে, কেউ হাওয়া ভবন খুলে সব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে থাবাথাবি করছে যে, কিছু করতে গেলেই ভাগ দিতে হবে। অন্তত আমরা সেটা করি না, করব নাÑ এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। সরকার হিসেবে দায়িত্ব ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যার হাতে দেশের প্রতিটি খাতের উন্নয়নের রূপরেখা রয়েছে। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলেছিলাম, ২০ হাজার মেগাওয়াট করেছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম। এগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মেটানো ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নেরও কথা উল্লেখ করেন তিনি। সরকারপ্রধান বলেন, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব, যাতে আমাদের সমাজে শান্তি ফিরে আসে। তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, গ্রাম পর্যন্ত। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। ভাগ্য গড়তে এসেছি বাংলার জনগণের। সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাটাই আমার লক্ষ্য। অনেকেই বলে, আপনি সারা দিন-রাত এত পরিশ্রম করেন কেন? জবাবে বলেছি, আমার বাবা এ দেশটা স্বাধীন করে দিয়েছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটা তিনি করতে পারেননি। তাঁর সেই অসামপ্ত কাজটা শেষ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখেছে। তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জন্য কী রাখতে হবে, না হবে ওই চিন্তা কখনও করি না। আমি চিন্তা করি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কী রেখে গেলাম, কী করে গেলাম, ভবিষ্যতের জন্য কী করব। সকলের ছেলে-মেয়েই ভবিষ্যতে সুন্দর জীবন পাক, সেটাই আমি চিন্তা করি। আর সেভাবেই আমাদের সকল কর্মকা-, সকল পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে, কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি কৃষি কাজকে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণ করে দেব। যাতে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায়, সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেজন্য আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাইব। নির্বাচনে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সেজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ২০২০ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মীর নাসির, এ কে আজাদ, আইসিসির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআই পরিচালক ও বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিসেস নিহাত কবির, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া আফজাল রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস রুবানা হক, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সী এমপি, আতিকুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম পারভেজ, এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুদ্দৌলা, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফলি, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালী চৌধুরী, পিএইচপি গ্রুপের সুফি মোঃ মিজানুর রহমান, ইনসেপটার চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বাসির কবির, ইনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কুতুব উদ্দিন আহমেদসহ দেশের উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ী নেতারা। এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মোঃ মুনতাকিম আশরাফসহ সারা দেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসায়ী এ সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনের শুরুতে বর্তমান সরকারের নানা সাফল্য এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দেশের বেসরকারী খাতের বিকাশমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা অতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এফবিসিসিআই সভাপতির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও সারা দেশ থেকে আসা ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠান থেকে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যবসাবান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত করে নৌকা মার্কার পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে চায় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকা দরকার বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কাও করছে এই সংগঠনটি। এ কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকেই ফের সরকার গঠনের সুযোগ দিতে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক, দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন।
×