ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

Taslima Afroz;###;M.Sc. (First Class 1st), B.Sc. (First Class 9th) ;###;Arambagh High School & College ;###;Arambagh, Motijheel, Dhaka -1000.;###;e-mail: [email protected]

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা -বিষয় : জীববিজ্ঞান

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা -বিষয় : জীববিজ্ঞান

তৃতীয় অধ্যায়: কোষ বিভাজন- সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। ইতোপূর্বে তোমরা কোষ, কোষ বিভাজন, কোষ বিভাজনের প্রকারভেদের মধ্যে অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এর প্রোফেজ, প্রোমেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ, টেলোফেজ পর্যায় ও মাইটোসিসের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছো। আজকের আলোচনা: কোষ বিভাজনের প্রকারভেদের মধ্যে মিয়োসিস পর্যায় ও এর গুরুত্ব মিয়োসিস (Meiosis) পর্যায় : এ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি প্রকৃত কোষ বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে চারটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস দুবার এবং ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয়, ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। এ বিভাজনে ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে এ প্রক্রিয়াকে হ্রাসমূলক বিভাজনও বলা হয়। মিয়োসিস প্রধানত জীবের জনন কোষ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে ঘটে। মিয়োসিস বিভাজনের সময় একটি কোষ পর পর দুবার বিভাজিত হয়। প্রথম বিভাজনকে প্রথম মিওয়াটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-১ এবং দ্বিতীয় বিভাজনকে দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-২ বলা হয়। সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকের মধ্যে এবং উন্নত প্রাণিদেহে শুক্রাশয়ে ও ডিম্বাশয়ের মধ্যে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে। মস ও ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদে ডিপ্লয়েড রেণু মাতৃকোষ থেকে যখন হ্যাপ্লয়েড রেণু উৎপন্ন হয় তখন জাইগোটে এ ধরনের বিভাজন ঘটে। মিয়োসিস বিভাজনের তাৎপর্য বা গুরুত্ব: প্রশ্ন হচ্ছে মিয়োসিস কেন হয়? মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। বৃদ্ধি ও অযৌন জননের জন্য মাইটোসিস কোষ বিভাজন অপরিহার্য। যৌন জননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের প্রয়োজন হয়। যদি জনন কোষগুলোর ক্রোমোসোম সংখ্যা দেহ কোষের সমান থেকে যায় তা হলে জাইগোট কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা জীবটির দেহ কোষের দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মনে কর একটা জীবের দেহ কোষে এবং জনন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা চার (৪)। পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট জাইগোটে ক্রোমোসোম সংখ্যা দাঁড়াবে আট (৮) এবং নতুন জীবটির প্রতিটি কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা হবে আট যা মাতৃজীবের কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার দ্বিগুণ। যদি প্রতিটি জীবের জীবন চক্র এভাবে চলতে থাকে তাহলে প্রতি চক্রে যৌন জননের ফলে ক্রোমোসোম সংখ্যা বারবার দিগুণ হতে থাকবে। আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে জেনেছি ক্রোমোসোম জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে। তাহলে ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুন হতে থাকলে বংশধরদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু জীবের যৌনজননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলন হওয়া সত্ত্বেও জীবের ক্রোমোসোম সংখ্যা বংশপরম্পরায় একই থাকে। কারণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনে জনন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। জনন কোষ সৃষ্টির সময় এবং নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জীবন চক্রের কোনো একসময় যখন এ রকম ঘটে তখন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার সে অবস্থাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বলে। যখন দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলন ঘটে তখন সে অবস্থাকে ডিপ্লয়েড (2n) বলে। সুতরাং মিয়োসিস কোষ বিভাজন হয় বলেই প্রতিটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় টিকে থাকতে পারে। মিয়োসিস বিভাজন জীবে ক্রোমোসোম সংখ্যার হ্রাস ঘটিয়ে প্রজাতির ক্রোমোসোমের সংখ্যা ধ্রুবক রাখে। ফলে বংশানুক্রমে সন্তানসন্ততির দেহকোষে ক্রোমোসোমের নির্দিষ্ট সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। তাছাড়া মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় জিনের আদান-প্রদান ঘটে ফলে প্রজাতির মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়।
×